ষষ্ঠ শ্রেণির এক ছাত্রের উপরে লাগাতার শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠল শিক্ষিকার বিরুদ্ধে। দুর্গাপুরের একটি বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের ওই শিক্ষিকার বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগ করেছেন ছাত্রটির বাবা।
দুর্গাপুরের বিধাননগরে একটি আবাসনে থাকেন ডিভিসি-র কর্মী সুকান্ত বাসুরি। তাঁর ছেলে স্বপ্নায়ু বিধাননগরের ওই স্কুলে ছোট থেকে পড়াশোনা করছে। সুকান্তবাবু জানান, গরমের ছুটিতে স্কুল থেকে লিখতে দেওয়া একটি বাংলা রচনাকে কেন্দ্র করে সমস্যার সূত্রপাত। স্বপ্নায়ুর লেখা ‘আমার ছেলেবেলা’ শীর্ষক ওই রচনা পছন্দ হয়নি শিক্ষিকা সুমিতা সাহার। সুকান্তবাবুর অভিযোগ, “রচনায় সমাজ ও পরিবেশ দূষণ প্রসঙ্গে স্বপ্নায়ু লিখেছিল, ‘মাঝে মাঝে মনে মনে খুঁজি মুক্তির সোজা পথ’। তা দেখে ক্লাসের মধ্যেই সুমিতাদেবী তাকে প্রশ্ন করেন, ‘তুমি কি আত্মহত্যার কথা বলতে চেয়েছ?’ তার পর থেকেই সহপাঠীরা এ কথা তুলে ওকে নানা ভাবে খেপাত।”
|
স্বপ্নায়ু বাসুরি।
নিজস্ব চিত্র। |
স্বপ্নায়ুর মা অভিরূপাদেবী জানান, বেশ কয়েক দিন এমন চলার পরে তাঁর ছেলে ‘হতাশায় ভুগতে’ শুরু করে। তখন তাঁরা বিষয়টি প্রধান শিক্ষককে জানান। অভিরূপাদেবীর অভিযোগ, “এর পরে গত ২৪ অগস্ট ওই শিক্ষিকা স্কুলের গ্রন্থাগারে চেঁচামেচি করার অভিযোগ তুলে আমার ছেলেকে মারধর করেন। তাতে ওর পায়ে ও ঠোঁটে কেটে যায়। একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাও করাতে হয়।” পর দিন তাঁরা স্কুলের প্রধান শিক্ষক এম এস আরোকিয়াস্যামির কাছে লিখিত অভিযোগ করেন।
স্কুল সূত্রে জানা যায়, প্রধান শিক্ষক স্বপ্নায়ুর কাছ থেকে সমস্ত ঘটনা শুনে তাঁর বাবা-মা ও অভিযুক্ত শিক্ষিকাকে মুখোমুখি বসিয়ে সমস্যা সমাধানে উদ্যোগী হন। প্রধান শিক্ষক বলেন, “স্বপ্নায়ু ভাল ছাত্র। স্কুলে যাতে তার কোনও সমস্যা না হয়, তা নিশ্চিত করতেই দু’পক্ষকে এক সঙ্গে বসাই। তাঁরা নিজেদের মধ্যে কথা বলার পরে বিষয়টি মিটেও যায়। স্বপ্নায়ুর বাবা-মায়ের আর্জি মেনে ওর সেকশন বদলে দেওয়া হয়।”
সুকান্তবাবুর অবশ্য দাবি, এতেও সমস্যা মেটেনি, বরং বেড়েছে। তাঁর অভিযোগ, “সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে আমার ছেলেকে স্কুলে সিঁড়ির তলায় নিয়ে গিয়ে মারধর করেন সুমিতাদেবী। ৩১ অক্টোম্বর ফের শারীরিক নির্যাতন করা হয়। লাগাতার এ ভাবে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের জেরে আমার ছেলে ২ ও ২৩ নভেম্বর স্কুলেই অজ্ঞান হয়ে পড়ে। ২৪ নভেম্বর বাড়িতেও অজ্ঞান হয়ে যায় স্বপ্নায়ু।” তার পর থেকে তাকে স্কুলে পাঠানো হচ্ছে না। ছাত্রটির পরিবারের তরফে দাবি করা হয়েছে, এক ব্যক্তির মাধ্যমে সুমিতাদেবীর স্বামী দেবাশিস সাহা ইতিমধ্যে তাঁদের হুমকিও দিয়েছেন। পুরো বিষয়টি জানিয়ে রবিবার রাতে দুর্গাপুরের নিউটাউনশিপ থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন সুকান্তবাবু। সোমবার চিকিৎসার জন্য স্বপ্নায়ুকে কলকাতায় নিয়ে গিয়েছেন তার বাবা-মা।
অভিযুক্ত শিক্ষিকা সুমিতাদেবী বলেন, “অতিরিক্ত কথা বলার জন্য এক দিন আমি ছেলেটির গাল টিপে দিয়েছিলাম। কিন্তু তার পর থেকে যা হচ্ছে তার কোনও ব্যাখ্যা আমার কাছে নেই। কোনও অসৎ উদ্দেশেই এমন অভিযোগ আনা হচ্ছে আমার বিরুদ্ধে।” তাঁর স্বামী দেবাশিসবাবুও বলেন, “আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা।” স্কুলের প্রধান শিক্ষক এম এস আরোকিয়াস্যামি বলেন, “স্বপ্নায়ুকে সুস্থ করে তোলার জন্য উপযুক্ত চিকিৎসা করাতে বলেছি ওর অভিভাবকদের। সুস্থ হয়ে স্কুলে ফিরে এলে ওর কাছ থেকে সমস্ত ঘটনার কথা শুনব। তার পরে বিষয়টি তদন্ত করব।”
পুলিশ জানিয়েছে, মোট তিনটি ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে। জোর করে আটকে রাখা, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা এবং ভয় দেখানো ও হুমকির অভিযোগে মামলা দায়ের হয়েছে। দুর্গাপুরের ডিসিপি শুভঙ্কর সিংহ সরকার জানান, তদন্ত শুরু হয়েছে। |