|
|
|
|
আলোচনার সিদ্ধান্ত, তবুও সিপিএম-ফব জট অব্যাহত |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কোচবিহার |
দু’দলের জেলা নেতৃত্ব শরিকি দ্বন্দ্ব মেটাতে আলোচনায় বসার সিদ্ধান্ত নিলেও কোচবিহারে বিভিন্ন লোকাল কমিটি সম্মেলনের প্রতিবেদনে ফরওয়ার্ড ব্লকের তুলোধোনা অব্যাহত রাখল সিপিএম। কোচবিহার সদরের ঘুঘুমারি, দিনহাটার নাজিরহাট, বুড়িরহাট ও গোসানিমারিতে রবিবার সিপিএমের লোকাল কমিটির সম্মেলন ছিল। তার মধ্যে কোচবিহারের ঘুঘুমারি লোকাল কমিটির প্রতিবেদনে সরাসরি বামফ্রন্টের ঐক্যে ফাটল ধরার কথা স্বীকার করে বাম শরিক ফ ব-কে কাঠগড়ার তোলা হয়েছে। নাজিরহাট লোকাল কমিটির সম্মেলনেও গত পঞ্চায়েত ভোটে দলের দিনহাটা জোনাল কমিটির সম্পাদক তথা জেলা পরিষদ প্রার্থী তারাপদ বর্মনকে হারাতে শরিক দল তৃণমূলকে ভোট দিয়েছে বলে ফব-র বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে। ফলে, কোচবিহারে ফ্রন্টের দুই শরিকের সম্পর্কে ‘টানাপোড়েন’ মিটছে না।
সিপিএমের একের পর এক লোকাল কমিটির সম্মলনে এ ভাবে তাঁদের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোয় ক্ষুব্ধ ফ ব নেতৃত্ব ২৪-২৮ নভেম্বর জেলায় বামফ্রন্টের আইন অমান্য কর্মসূচিতে অংশ না-নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। পরিস্থিতি সামলাতে ২৫ নভেম্বর কোচবিহারে ফ ব-র সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিপিএম। কিন্তু ওই বৈঠক কতটা ‘ফলপ্রসূ’ হবে, তা নিয়ে দুই শরিক দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যেই সংশয় সৃষ্টি হয়েছে। সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অনন্ত রায় অবশ্য বলেন, “দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে সমস্ত বিষয় নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে ভুল বোঝাবুঝি মিটে যাবে বলে আশা করছি।” ফ ব-র জেলা সম্পাদক উদয়ন গুহ বলেন, “২৫ নভেম্বর সিপিএমের সঙ্গে বৈঠকের পরেই যা বলার বলব।”
উদয়নবাবু এ দিন ফ ব-র রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠক উপলক্ষে কলকাতায় ছিলেন। ওই বৈঠকে কোচবিহারের পরিস্থিতি নিয়ে কথা হয়। সেখানে ঠিক হয়, সিপিএমের জেলা নেতৃত্বের মুখোমুখি বসে ক্ষোভের কথা জানানো হবে। তার পরে পরিস্থিতি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
কোচবিহার শহরে সিপিএমের ঘুঘুমারি লোকাল কমিটির সম্মেলনের সাংগঠনিক ও রাজনৈতিক খসড়া প্রতিবেদনের ১৮ নম্বর পাতায় ‘পঞ্চায়েত’ বিষয়ক আলোচনায় লেখা হয়েছে, ‘গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে ঘুঘুমারি গ্রাম পঞ্চায়েতের ক্ষেত্রে ফ ব বামফ্রন্টের নীতি ভেঙে প্রতিক্রিয়াশীল শক্তির সঙ্গে মহাজোট গড়ে আমাদের দলের বিরুদ্ধে প্রার্থী দেয়। এই পরিস্থিতিতে গ্রাম পঞ্চায়েতের ৮টি আসন আমাদের হাতে আসে। প্রধান নির্বাচনের সময়েও ফ ব, কংগ্রেস, তৃণমূল ও গ্রেটার কোচবিহার ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সদস্যদের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হয় এবং উপপ্রধান পদটি দখল করে। এমনকী, গ্রাম পঞ্চায়েতের স্থায়ী সমিতিগুলিতেও আমাদের সদস্যদের নেওয়া হয়নি’। আরও বলা হয়েছে, ‘গত বিধানসভা নির্বাচনের আগে হুমকির কাছে নতি স্বীকার করে আমাদের দলের ৫ জন পঞ্চায়েত সদস্য তৃণমূলে যোগ দেন। ফলে ওই গ্রাম পঞ্চায়েত তৃণমূলের দখলে চলে যায়’। পানিশালা পঞ্চায়েত হাতছাড়া হওয়ার জন্যও ফ ব-কেই দায়ী করা হয়েছে ওই প্রতিবেদনে। ওই লোকাল কমিটির সম্পাদক বিনোদ পাল অবশ্য বলেন, “সাংগঠনিক প্রতিবেদন নিয়ে মন্তব্য করতে চাই না।”
এর আগে ভেটাগুড়ি এবং নিগমনগর লোকাল কমিটির সম্মেলনেও ফ ব-র ‘রাজনৈতিক চরিত্র’ এবং ‘তৃণমূল-ঘনিষ্ঠতা’ নিয়ে প্রশ্ন তোলে সিপিএম। নাজিরহাট লোকাল কমিটির সম্মেলনেও এ দিন অভিযোগ করা হয়, ফ ব-র সমর্থকেরা ভোট না-দেওয়াতেই গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে তাঁদের জেলা পরিষদ প্রার্থী তারাপদবাবুকে হার স্বীকার করতে হয়। তবে সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য বেণুবাদল চক্রবর্তীর বক্তব্য, “জেলা পরিষদ আসনে তৃণমূল প্রার্থীর জয় নিয়ে স্থানীয় স্তরের কর্মীদের নানা ধারণা রয়েছে। লোকাল কমিটির প্রতিবেদনে তারই প্রতিফলন ঘটে থাকতে পারে। আমি ওই প্রতিবেদন দেখিনি। তবে জেলা কমিটির পক্ষ থেকে আমরা ওই বক্তব্য সমর্থন করি না।” জেলা নেতৃত্ব ‘অনুমোদন’ না-করলেও ওই ধরনের প্রতিবেদনের জেরে প্রভাব পড়ছে শরিকি সম্পর্কে। |
|
|
|
|
|