উত্তরের চিঠি
কোনও পঞ্চায়েত-শাসিত গ্রামের হাট নয়। এখানে সন্ধ্যায় মোম-কুপির আলোয় ব্যাগ ভরে যায় ড্রাইভার থেকে অধ্যাপকেরবিকিকিনির লেট নাইট এক্সটেনশন! জলপাইগুড়ি স্টেশন বাজার চত্বর। প্রশ্ন করতেই ওরা বলেছিল, বাবুরা আমাদের শ্রম চায়, আমাদের চায় না। সরকার বলে জুতোর ফিতে বেঁধে চাষ-আবাদ করো। আগে জুতোটাতো পাই। বর্ষায় ত্রিপল, আর শীতে বস্তা যাদের আড়াল করে, সেই সব বাজারিদের জন্য পুরসভার পুরা-কীর্তি দিন দিন মাটির গভীর অন্ধকারে জায়গা করে নিচ্ছে। কাঠের টেবিলে নেতাদের উত্তাল হাতগুলোর চাপড়ানি, ফাইলের রোপওয়ে মুভমেন্ট আর কিছু বললেই ‘দেখছি’, বদলায়নি।
জলপাইগুড়ি স্টেশন বাজার। ছবি: সন্দীপন নন্দী
মাছের আঁশ, মাংস-ধোওয়া জল, পচা সবজির ত্রিবেণী সঙ্গম স্টেশন বাজার। যে সব পরিবেশবাদী দীর্ঘ দিন কোনও খবর করতে পারেননি, তাঁদের অনুরোধ করছি খাতা-কলম-লেন্স নিয়ে সোজা চলে আসুন। আপনাদের কথা রাখতে বসে আছে পুরবোডর্র্। ক্ষমতা যাদের হস্তরেখা, তাদের কোনও কিছু দখলের জন্য প্রবাল-পান্না অর্থহীন। সুতরাং আগামীতেও বিগত চল্লিশ বছরের মতো স্টেশন বাজারের লজঝড়ে, পূতিগন্ধময় অবস্থার কোনও পরিবর্তন হবে না, ভরসা দিল পুরসভার দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ড। এই বোর্ডের কাজ কী? ব্লিচিং দিয়ে দোল খেলা, আর মাঝে মাঝে নীতির সঙ্গে বিরোধে গিয়ে প্লাস্টিক হটাও বিপ্লব। ব্যস, পুরনো আচারের মতো বয়ামবন্দি হয়ে গেল নাগরিক পরিষেবা, এক বছরের জন্য। আবার সেই শীতের গাজর, পালং কিংবা লেপের মতো আনুষ্ঠানিক তোড়জোড় শুরু হবে বর্ষাকালে, গরমকালে কিংবা পুরভোটের আগে। সাধারণ মানুষের এ বাজার থেকে ধনেপাতা, বেগুন না কিনলেও শরীরে ক্যালরি জুড়বে। কিন্তু হলদিবাড়ি থেকে যে মাসি দশ কেজি মানকচু নিয়ে আসে, মণ্ডলঘাটের বাবলুর কুড়ি বছরের হট্টমন্দিরের উপর ডিপেনডেন্ট বারোজন, কিংবা পাঙ্গার এইট পাশ পদ্মিনী, যে রোজ লাউডগা, কুমড়োফুল বেচে বাবার টি বি-র ক্যাপসুল কেনেতাদের কী হবে? কী আবার হবে! বারোমাস এই নরকে বসে স্বর্গের কাছাকাছি পৌঁছনর দিন গুণতে হবে! বাজারে ঘুরতেই একজন বললেন, বিশ্বাস উঠে গিয়েছে প্রশাসন থেকে। তাই কোনও সংগঠন নেই আমাদের, নেই সংস্থা কিংবা এন জি ও, আজ আন্দোলনও নেই, শুধু প্রতিবাদ আছে। কথা বলতে গেলে ভাষাটা জানা প্রয়োজন। কিন্তু এখনও ওদের জন্য প্রতিনিয়ত অপেক্ষা করছে উচ্ছেদের ভয়, অস্বাভাবিক নয়। কী ভাবছে জলপাইগুড়ির একশো না কত বছর পেরোন পুরসভা? পোস্ট অফিস মোড় থেকে রেসকোর্স পাড়া পর্যন্ত আলোর উপহার, তিস্তাবাঁধে বিটুমিনাস, সুইমিং পুল-বৃদ্ধাশ্রম, দুশো দর্শকের হলঘরই কি প্রগতির ফুলমার্কস! তবে সেই মানুষগুলোর কী হবে যারা কখনও বিদ্যুতের আলো দেখেনি, যারা জানে না পিৎজা কী ভাবে খেতে হয়, জানে না শপিং মল মাটির উপরে না নীচে তাদের কাছে সমর্থনের মাইক ছুটে যায়, মাটির দেওয়ালে ভরে ওঠে দুর্নীতির মার্কা। এদেরই একটা শ্রেণী স্টেশন বাজারে দীর্ঘ দিন ধরে যন্ত্রণা, কষ্ট সহ্য করে আমাদের রবিবাসরীয় পাতে রকমারি ভোজের ব্যবস্থা করে চলেছে, স্বাদকোরকে ঢেলে দিয়েছে স্পর্শসুখ, বুঝলাম কই? শুধু থলে হাতে কিনেই গেলাম, পয়সা দিলাম, ওদের সুখ দিতে পারলাম না। অন্তত একদিন ওঁদের দুরবিন দিয়ে দেখুন। দেখবেন ডাইনিংটা এই প্রথম বার কেমন খারাপ লাগছে।
চিঠি পাঠান নাম ও ঠিকানা উল্লেখ করে।
‘উত্তরের চিঠি’
এ বি পি প্রাঃ লিঃ,
১৩৬/৮৯ চার্চ রোড,
শিলিগুড়ি ৭৩৪৪০১



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.