ছুটিতে শল্য চিকিৎসক, অ্যানাস্থেটিস্ট
অন্য ডাক্তার এসেও বাঁচাতে পারলেন না জখম যুবককে
রসা মাত্র এক জন শল্য চিকিৎসক ও অ্যানাস্থেটিস্ট! দু’জনেই ছুটিতে যাওয়ার কী পরিণাম, রবিবার তার সাক্ষী রইল বিষ্ণুপুর মহকুমা হাসপাতাল।
ট্রাকের চাকায় শরীরের নীচের অংশ পিষে যাওয়া এক যুবককে ওই হাসপাতালে এনেও সময়মতো চিকিৎসা শুরু করা যায়নি ওই দু’জনই না থাকায়। বিষ্ণুপুরে নিজের বাড়িতে আসা মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের শল্য চিকিৎসা বিভাগের এক শিক্ষক খবর পেয়ে বিষ্ণুপুর হাসপাতালে গিয়ে জখম যুবকের প্রাথমিক চিকিৎসা করেন। কিন্তু, হাসপাতালে অ্যানাস্থেটিস্টও না থাকায় তিনি ভাল করে পরীক্ষা বা অস্ত্রোপচারও করতে পারেননি। পরে বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে ওই যুবকের মৃত্যু হয়।
পুলিশ ও হাসপাতাল সূত্রের খবর, মৃত যুবক বুদ্ধদেব চক্রবর্তীর (২০) বাড়ি বিষ্ণুপুর শহরের কাদাকুলি এলাকায়। এ দিন দুপুরে বিষ্ণুপুর বাইপাসে তিনি ও এক সঙ্গী মোটরবাইকে যাচ্ছিলেন। সোনামুখী মোড়ে আরামবাগমুখী একটি দশ চাকার ট্রাক তাঁর মোটরবাইকে ধাক্কা মারে। বুদ্ধদেব রাস্তায় ছিটকে পড়েন। ট্রাকের চাকা তাঁর পেট ও দু’পা পিষে দেয়। ওই মোটরবাইকের অন্য আরোহী প্রশান্ত নন্দী ছিটকে রাস্তার পাশে ঝোপে পড়ে অল্প আঘাত পান।
স্থানীয় বাসিন্দারা বুদ্ধদেবকে উদ্ধার করে কয়েক কিলোমিটার দূরের বিষ্ণুপুর মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যান।
তখনও বেঁচে বুদ্ধদেব চক্রবর্তী। ছবি: শুভ্র মিত্র
চিকিৎসকের খোঁজ করতে গিয়ে তাঁরা জানতে পারেন, হাসপাতালের একমাত্র শল্য চিকিৎসক জগন্নাথ দাস ছুটিতে গিয়েছেন। ততক্ষণে খবর পেয়ে বুদ্ধদেবের বাবা সুব্রত চক্রবর্তী ও পড়শিরা এসে দেখেন, ওই যুবক যন্ত্রণায় ছটফট করছেন। পেটের নীচের অংশ থেকে অঝোরে রক্ত ঝরছে। এই ভাবে হাসপাতালেই প্রায় সওয়া এক ঘণ্টা কেটে যায়। জখম যুবকের এক ফোঁটা চিকিৎসাও তখনও হয়নি।
এই হাসপাতালেরই প্রাক্তন শল্য চিকিৎসক, বর্তমানে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষক মৃত্যুঞ্জয় পাল ছুটিতে স্থানীয় শালবাগানের বাড়িতে ছিলেন। বিষ্ণুপুর পুরসভার তৃণমূল কাউন্সিলর দিব্যেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় বুদ্ধদেবের বাড়ির লোকেদের নিয়ে মৃত্যুঞ্জয়বাবুর কাছে যান। সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে এসে মৃত্যুঞ্জয়বাবু বুদ্ধদেবের প্রাথমিক চিকিৎসা করেন। ক্ষতস্থানে ড্রেসিং করে ওই যুবককে বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। কিন্তু সেখানে যাওয়ার পথেই তাঁর মৃত্যু হয়।
বুদ্ধদেবের মৃত্যু সংবাদ পেয়ে মৃত্যুঞ্জয়বাবু মর্মাহত। তাঁর খেদ, “এই হাসপাতালে এক জনও অ্যানাস্থেটিস্ট ছিলেন না। ফলে, জখম যুবকের পেটের ভিতরে রক্তক্ষরণ হচ্ছিল কি না, তা দেখতে পারলাম না। অস্ত্রোপচার তো দূরের কথা। ওই পরিস্থিতির মধ্যেই ক্ষতের যতটা সম্ভব প্রাথমিক চিকিৎসা করে তাঁকে বাঁকুড়া পাঠানো হয়েছিল।” প্রাথমিক ভাবে তাঁর ধারণা, পেট ও কোমরের ভিতরে রক্তক্ষরণে মৃত্যু হয় ওই যুবকের।
২৩০ শয্যার এত গুরুত্বপূর্ণ হাসপাতালে পর্যাপ্ত শল্য চিকিৎসক ও অ্যানাস্থেটিস্ট নেই কেন? বিষ্ণুপুর হাসপাতালের সুপার রবীন্দ্রনাথ প্রধান বলেন, “প্রথম থেকেই এই হাসপাতালে এক জন মাত্র শল্য চিকিৎসক ও এক জন অ্যানাসথেটিস্টের পদ রয়েছে। কয়েক দফায় হাসপাতালের শয্যা বেড়ে ২৩০ হয়েছে, কিন্তু শল্য চিকিৎসক বাড়ানো হয়নি।” তিনি জানান, ছেলে অসুস্থ বলে শল্য চিকিৎসক এ দিন ছুটি নিয়েছেন। স্থায়ী অ্যানাস্থেটিস্টও ছুটিতে। অস্থায়ী ভিত্তিতে একজন অ্যানাস্থেটিস্ট কাজ করেন। তিনিও এ দিন স্বাস্থ্য দফতরেরই একটি কর্মসূচিতে গিয়েছিলেন। একই সঙ্গে সুপার বলেন, “রোগীর আত্মীয়দের ডাকে এ ভাবে আগেও এগিয়ে এসেছেন মৃত্যুঞ্জয়বাবু। আমরা ওঁর কাছে কৃতজ্ঞ।”
বাঁকুড়ার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক জগন্নাথ দিন্দা বলেন, “শল্য চিকিৎসক ও অ্যানাস্থেটিস্ট চেয়ে আমরা স্বাস্থ্য ভবনে একাধিকবার আবেদন করেছি। কিন্তু পাওয়া যাচ্ছে না বলে হাসপাতালে সমস্যা হচ্ছে। ওই যুবকের মৃত্যুর ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক। আরও এক জন করে শল্য চিকিৎসক ও অ্যানাস্থেটিস্টের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে আবার বলব।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.