মহা ধুমধাম ও সমারোহে শেষ হল চন্দননগরের এ বছরের জগদ্ধাত্রী পুজো। প্রচুর আলো, বহু পুজোমণ্ডপ, অনেক আনন্দ, অনেক উচ্ছ্বাস। বিভিন্ন টিভি চ্যানেল, সংবাদপত্র পরিবেশন করল এই আনন্দ ও ঐতিহ্যের উৎসবের ছবি। এ বর্ণচ্ছটার অন্য দিকও কিছু আছে, উৎসবের আনন্দে আমরা যেগুলি চিন্তাভাবনা করতে ভুলে যাই।
যাঁরা বারোয়ারি পুজোর সঙ্গে যুক্ত, তাঁদের প্রধান চিন্তা হল কী ভাবে নিজের বারোয়ারি পুজোকে শ্রেষ্ঠ করা যায়, কী ভাবে পুজোর জাঁকজমক আরও বাড়ানো যায়। ক্রীড়া বা সংস্কৃতি নিয়ে চিন্তাভাবনা বা আত্মনিয়োগের শতকরা হার ক্রমশ কমের দিকে। একটা শহরের সংখ্যাগরিষ্ঠ যুব ও তরুণ সম্প্রদায় তাদের প্রাথমিক সামাজিক দায় হিসেবে স্থির করেছেন যে, কী ভাবে আরও ভাল করে জগদ্ধাত্রী পুজো করা যায়। অর্থাৎ, কী ভাবে আরও আলোকসজ্জা, আরও দামি মণ্ডপ, আরও বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা করা যায়। যুবশক্তি ও উদ্যমের কী করুণ অপচয়! এ কারণে চন্দননগরের বেশির ভাগ ক্লাব, যাঁরা ক্রীড়াচর্চা করে থাকেন, তাঁরা অর্থহীনতায় দুর্বল এবং হতোদ্যম। অর্থ সংগ্রহের প্রায় সমস্ত নদী এবং উপনদীর প্রবাহ বারোয়ারি অভিমুখে। অর্থসংগ্রাহকদের মূল উৎসাহ, কিছু ব্যতিক্রম বাদ দিলে প্রায় সমস্তটাই এই পুজোকেন্দ্রিক। তাই চন্দননগরের ক্রীড়া এবং সংস্কৃতিচর্চা জগদ্ধাত্রী পুজোর আলোর রোশনাইয়ের পাশে মাটির প্রদীপের মতো নিষ্প্রভ। |
চন্দননগরের আর এক ঐতিহ্য হল এখানকার নাট্যচর্চা ও গ্রুপ থিয়েটার। এ ঐতিহ্য বাঁচাতে চন্দননগর উৎসাহী নয়। উৎসবের নামে, ঐতিহ্যের নামে আমরা, চন্দননগরবাসীরা আমাদের শহরকে কোন গন্তব্যে এগিয়ে নিয়ে চলেছি, তা বোধ হয় একটু চিন্তা করার সময় এসেছে। কারণ, সময় অনেক এগিয়ে গিয়েছে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, এত জাঁকজমকের সঙ্গে প্রতি বছর পুজো হলেও নিত্য পুজোর জন্য চন্দননগরে জগদ্ধাত্রীর কোনও দেবালয় নেই। মানুষ তার প্রয়োজনও অনুভব করেন না। তথাগত বন্দ্যোপাধ্যায়। চন্দননগর, হুগলি
|
জঙ্গিপুর মহকুমার সামসেরগঞ্জ ব্লকের প্রত্যন্ত অঞ্চলে অবস্থিত নিমতিতা একটি গণ্ডগ্রাম। লোকসভা নির্বাচনে সীমানা পুনর্বিন্যাসের ফলে সামসেরগঞ্জ বর্তমানে দক্ষিণ মালদহ কেন্দ্রের অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় গ্রামটি কার্যত রাজনৈতিক ছিটমহলে পরিণত হয়েছে। এ অঞ্চলটি থেকে জঙ্গিপুরের দূরত্ব যতটা, মালদহের দূরত্ব তার দ্বিগুণ। নিমতিতা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যে অত্যন্ত সমৃদ্ধ। এই গ্রাম এক সময় জমিদার মহেন্দ্রনারায়ণের পৃষ্ঠপোষকতায় নাট্যচর্চার জন্য পরিচিতি পেয়েছিল। সত্যজিৎ রায় তাঁর ‘জলসাঘর’ সিনেমার জন্য এখানকার জমিদারবাড়িকেই বেছে নিয়েছিলেন। এই অঞ্চলেই তাঁর ‘দেবী’ এবং ‘সমাপ্তি’ সিনেমার শুটিং হয়।
পুরনো ঐতিহ্য হারিয়ে গ্রামটি বর্তমানে চরম অবহেলা এবং বঞ্চনার শিকার। দীর্ঘদিন এ গ্রামের কোনও উন্নয়ন হয়নি। কোনও জনপ্রতিনিধির কৃপাদৃষ্টিই এ গ্রামে পড়েনি। বর্ষাকাল এখানে এক বিভীষিকা। এক পশলা ভারী বৃষ্টিতেই এ অঞ্চলের সব রাস্তাঘাট কাদাজলে ভরে ওঠে। জনসাধারণের দুর্ভোগের সীমা থাকে না। অথচ কী নেই এ গ্রামে! এ গ্রামের বহু প্রাচীন রেজিস্ট্রি অফিসে জমি কেনাবেচার জন্য দূর-দূরান্ত থেকে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সমাগম হয়। এখানকার ব্যাঙ্কের গ্রাহকদের লাইন সিনেমার লাইনকেও হার মানায়। এ গ্রামের শতবর্ষ প্রাচীন উচ্চ-মাধ্যমিক বিদ্যালয়টিতে শহরাঞ্চলের চারখানা উচ্চ-মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সমসংখ্যক ছাত্রছাত্রী পড়াশোনা করে। সীমান্ত রক্ষীবাহিনীর গাড়ি এ গ্রামের রাস্তাতেই কাদা ভেঙে তীব্র বেগে হরদম ছোটাছুটি করে। সরকারি বেসরকারি অনেক গুরুত্বপূর্ণ অফিস-কাছারিই এখানে আছে। নাই শুধু পানীয় জলের ব্যবস্থা এবং নিকাশি ব্যবস্থাযুক্ত ভাল রাস্তা।
তাই, বর্তমান সাংসদ এবং বিধায়ক উভয়ের কাছেই অনুরোধ, আপনারা গ্রামটির উন্নয়নে এগিয়ে আসুন। গ্রামটিকে তার পুরনো ঐতিহ্যে ফিরিয়ে দিয়ে সৌন্দর্যমণ্ডিত করুন। অশোককুমার সেনগুপ্ত। নিমতিতা, মুর্শিদাবাদ
|