|
|
|
|
তদারকির অভাবে ব্যাহত উন্নয়ন-কাজ |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
কোষাগারে অর্থ পড়ে থাকলেও পশ্চিম মেদিনীপুরে গ্রামীণ উন্নয়নে কেন্দ্র ও রাজ্যের একগুচ্ছ প্রকল্পের কাজ রয়েছে আটকে। কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী জয়রাম রমেশকে জেলা প্রশাসনের দেওয়া রিপোর্টে উঠে এল এমনই তথ্য। যথাযথ পরিকল্পনা ও সময় মতো তদারকির অভাবেই এই পরিস্থিতি বলে মত প্রশাসনিক আধিকারিকদের একাংশের। রিপোর্ট খতিয়ে দেখার পরে তাই বিভিন্ন প্রকল্পে নজরদাড়ি বাড়াতে প্রশাসনকে উদ্যোগী হতে বললেন মন্ত্রী।
জঙ্গলমহল সফরের জন্য কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জয়রাম রমেশ মেদিনীপুরে এসে পৌঁছনোর পরই তাঁর হাতে ২৭ পাতার একটি রিপোর্ট তুলে দিয়েছিল পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন। গ্রামোন্নয়ন দফতরের বিভিন্ন প্রকল্পে এ জেলার জন্য কত টাকা বরাদ্দ হয়েছে, কত টাকা খরচ হয়েছে, তারই বিস্তারিত উল্লেখ ছিল রিপোর্টে। দুপুরে তা পড়ার সময় পাননি মন্ত্রী। সন্ধ্যায় রিপোর্ট খুঁটিয়ে দেখার পরে মেদিনীপুর সার্কিট হাউসে প্রশাসনিক বৈঠক করেন তিনি। উপস্থিত ছিলেন জেলাশাসক সুরেন্দ্র গুপ্ত-সহ জেলা প্রশাসনের পদস্থ কর্তারা।
প্রশাসনিক সেই রিপোর্ট থেকে দেখা যাচ্ছে, পশ্চিম মেদিনীপুরে কর্ম সুনিশ্চিত প্রকল্প, প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনা, ইন্দিরা আবাস, সজলধারা’র মতো প্রকল্পগুলির ক্ষেত্রে কোষাগারে অর্থ এসে পড়ে রয়েছে। অথচ, কাজ হচ্ছে না। পরিকল্পনা ও তদারকির অভাবেই এই পরিস্থিতি বলে অভিযোগ। জেলা আধিকারিকদের কাছে বিভিন্ন প্রকল্পের হালহকিকৎ জানার পরে মন্ত্রী কাজের গতি বাড়াতে নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশ দেন। পরে জেলাশাসক সুরেন্দ্র গুপ্ত বলেন, “প্রতিটি প্রকল্পের ক্ষেত্রেই নজরদারি বাড়ানো হচ্ছে। পর্যালোচনা বৈঠক হচ্ছে। সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করার চেষ্টা চলছে।”
গ্রামের গরিব মানুষের দু’বেলা দু’মুঠো খাবার সংস্থানের উদ্দেশেই কর্মসুনিশ্চিত প্রকল্পের ভাবনা। কেন্দ্রীয় সরকারের এই প্রকল্পও এ বার পশ্চিম মেদিনীপুরের মতো পিছিয়ে পড়া জেলায় ব্যাহত হয়েছে। জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, একশো দিনের প্রকল্পে চলতি বছরের অক্টোবর পর্যন্ত পশ্চিম মেদিনীপুরে বরাদ্দ হয়েছে ১২৭ কোটি ৮৬ লক্ষ ৫৪ হাজার টাকা। এর মধ্যে খরচ হয়েছে ৮৮ কোটি ৬২ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা। মোট জব কার্ড ইস্যু হয়েছে ৮ লক্ষ ৪২ হাজার ৮৫৫। সব মিলিয়ে ৬৭ হাজার ৩২টি প্রকল্পের প্রস্তাব রয়েছে। তবে, এখনও পর্যন্ত ৭ হাজার ৯১০টি প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে। আরও ৭ হাজার ১১৭টি প্রকল্পের কাজ চলছে। মানুষ গড়ে কাজ পেয়েছে ১৮ দিন। শুধু একশো দিনের কাজই নয়, জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, ইন্দিরা আবাস, সজলধারা, প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনার মতো প্রকল্পগুলির কাজও স্বাভাবিক গতিতে এগোচ্ছে না। পানীয় জল সরবরাহের ক্ষেত্রে এ জেলায় ১৪৩টি প্রকল্প হওয়ার কথা। এখনও পর্যন্ত ৭৯টি প্রকল্পের কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে। বাকি ৬৪টির কাজ চলছে। সজলধারা প্রকল্পের ক্ষেত্রে বরাদ্দ হয়েছে ৪ কোটি ১০ লক্ষ ২১ হাজার টাকা।
এর মধ্যে খরচ হয়েছে ৩ কোটি ৮৯ লক্ষ ৫৭ হাজার।
জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিকের ব্যাখ্যা, “অধিকাংশ পঞ্চায়েত কার্যত অচল হয়ে গিয়েছে। কোথাও পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, কর্মাধ্যক্ষরা নিয়মিত আসছেন না। কোথাও আবার গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্যরা দীর্ঘ দিন ধরে এলাকায় নেই। ফলে, সমস্যা হচ্ছে।” পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদের সভাধিপতি অন্তরা ভট্টাচার্য বলেন, “বেশ কিছু পঞ্চায়েতে কাজ করার পরিবেশই নেই। বিষয়টি প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। কাজে গতি আনতে সংশ্লিষ্ট সকলকেই সমান উদ্যোগী হতে হবে।”
|
পশ্চিমে কেন্দ্রীয় প্রকল্পের হাল |
প্রকল্প |
বরাদ্দ |
খরচ |
একশো দিনের কাজ |
১২৭ কোটি ৮৬ লক্ষ ৫৪ হাজার |
৮৮ কোটি ৬২ লক্ষ ৪০ হাজার |
ইন্দিরা আবাস যোজনা |
৩৩ কোটি ৪৪ লক্ষ ৪ হাজার |
১৬ কোটি ৮ লক্ষ ৭৯ হাজার |
সজলধারা প্রকল্প |
৪ কোটি ১০ লক্ষ ২১ হাজার |
৩ কোটি ৮৯ লক্ষ ৫৭ হাজার |
প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক |
৪৫৬ কোটি ৫৬ লক্ষ ১৫ হাজার |
৩১৭ কোটি ৪৯ লক্ষ ৮০ হাজার |
|
|
|
|
|
|