আগেই তাঁর পেনশন আটকেছিল। এ বার আটকে গেল বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের নির্বাচনী জনসভাও। অন্তত তাঁর দল সিপিএমের অভিযোগ তেমনই। মাত্র ৬ মাস আগেও যিনি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন, তাঁর নির্বাচনী কর্মসূচিতে পুলিশ-প্রশাসনের ‘জটিলতা’ তৈরির ঘটনায় স্বভাবতই ক্ষুব্ধ সিপিএম।
দক্ষিণ কলকাতা লোকসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে প্রচারের শেষ সপ্তাহে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য নেতৃত্বকে ময়দানে নামাবে সিপিএম। বুদ্ধবাবুও সেই তালিকায় আছেন। আগামী রবিবার, ২৭ নভেম্বর বেহালায় একটি জনসভায় যাওয়ার কথা তাঁর। কিন্তু ওই একই দিনে কসবায় আরও একটি সভা করতে চেয়েও পুলিশি অনুমতির ‘গেরো’য় পড়ে সেই পরিকল্পনা ত্যাগ করতে হয়েছে সিপিএমকে। মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের খাস তালুক দক্ষিণ কলকাতায় এমন ঘটনা প্রকৃতপক্ষে রাজ্য জুড়ে ‘গণতান্ত্রিক পরিবেশ’ ভেঙে দেওয়ার চেষ্টারই এক খণ্ড উদাহরণ বলে আলিমুদ্দিনের অভিযোগ। তাদের বক্তব্য, দক্ষিণ কলকাতা লোকসভা কেন্দ্রের আওতায় ৫৬টি ওয়ার্ডের মধ্যে মাত্র ৮টিতে বামপন্থী কাউন্সিলর আছেন। আসনটি ২০ বছর ধরে মমতাই জিতে এসেছেন। তা সত্ত্বেও বিরোধীদের প্রচারে বাধা দেওয়ার চেষ্টা কেন?
সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য রবীন দেব এবং দক্ষিণ কলকাতা কেন্দ্রে বামফ্রন্টের নির্বাচনী কমিটির আহ্বায়ক নিরঞ্জন চট্টোপাধ্যায় এ দিন বলেন, “কোথাও কোথাও অনুমতি না-পাওয়ায় সভার স্থান পরিবর্তন করতে হচ্ছে। কসবায় ২৭ তারিখ বুদ্ধবাবুর সভার জন্য অনুমতি পাওয়া যায়নি। প্রথমে বলা হয়েছিল, সভাস্থল আগেই তৃণমূল ‘বুক’ করে রেখেছে। বিকল্প জায়গার কথা বলতে বলা হল, সেটাও নাকি ‘বুক’ করা আছে!” যে কোনও রাজনৈতিক দলই নির্বাচনী বা অন্য কোনও সভা থাকলে পুলিশকে প্রথামাফিক জানিয়ে রাখে। কিন্তু রবীনবাবুদের অভিযোগ, এ বার দক্ষিণ কলকাতার ক্ষেত্রে কোথাও বলা হচ্ছে, সভার তিন দিন আগে অনুমতি চাইতে হবে। তার আগে নয়। তখন অনুমতি না-পেলে বিকল্প জায়গায় তড়িঘড়ি সভা করা মুশকিল হয়ে যাচ্ছে। কোথাও আবার বলা হচ্ছে, সভাস্থলের জমির মালিকের অনুমতি নিয়ে আসতে হবে!
দক্ষিণ কলকাতায় সিপিএমের প্রার্থী ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় দলের ছাত্র সংগঠন এসএফআইয়ের সাধারণ সম্পাদক। সেই জন্যই সিপিএম এ বার সেই সব নেতাদের তাঁর হয়ে প্রচারে নামাচ্ছে, যাঁরা কোনও না কোনও সময় ছাত্র সংগঠনের সর্বভারতীয় নেতৃত্বে ছিলেন। এই তালিকায় আছেন দলের দুই পলিটব্যুরো সদস্য সীতারাম ইয়েচুরি (২৭ তারিখ) ও বিমান বসু, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নীলোৎপল বসু ও গৌতম দেব, রাজ্য কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী ও শমীক লাহিড়ী। আছেন নেপালদেব ভট্টাচার্য, কল্লোল রায়ের মতো নেতারাও। এসএফআইয়ের বর্তমান সর্বভারতীয় সভাপতি তথা কেরলের সাংসদ পি কে বিজুও ঋতব্রতের হয়ে প্রচারে আসছেন। আলিমুদ্দিনে ঋতব্রতকে পাশে নিয়েই রবীনবাবু দাবি করেন, তাঁদের প্রার্থী পাড়ায় পাড়ায় প্রচারে গিয়ে এমন কিছু মানুষের সমর্থন পাচ্ছেন, যাঁদের ভবানীপুর বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনেও পাশে পাওয়া যায়নি। প্রথাগত প্রচার ছাড়াও সোস্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে পাওয়া উপকরণ ব্যবহার করছেন তরুণ ঋতব্রত।
প্রসঙ্গত, সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমানবাবু এ দিনই প্রমোদ দাশগুপ্ত ভবনে রাজ্য কেন্দ্রের সাধারণ সভায় দলের নির্দেশিকা ব্যাখ্যা করে ফের বলেছেন, সম্মেলন প্রক্রিয়ায় দলকে ‘স্বচ্ছ’ হিসাবে তুলে ধরতে হবে। অসুস্থ এবং ‘নিষ্ক্রিয়’ সদস্যদের কমিটি থেকে বাদ দিতে হবে। কমিটির কলেবর ছোট করতে হবে। উপর তলার নির্দেশিকা থাকা সত্ত্বেও নিচু তলার কমিটিতে ‘বিতর্কিত’ ভাবমূর্তির নেতারা ঢুকে পড়লে প্রয়োজনে তদন্ত করে তাঁদের বাদ দেওয়ার এক্তিয়ার থাকবে নিচু তলারই। দলীয় সূত্রের খবর, বিমানবাবু সাধারণ সভায় বলেন, বেশি নেতা বানিয়ে লাভ নেই! ‘খাঁটি’ কর্মী গড়ে তোলাই এখন অগ্রাধিকার। |