‘মুক্ত’ মিশরে আবার ঘনাচ্ছে অশান্তির মেঘ।
সেই প্রতিবাদ। সেই গুলির শব্দ। সেই বাহুবলে প্রতিবাদকে স্তব্ধ করে দেওয়ার চেষ্টা। তাহরির স্কোয়্যারে হাজারো মানুষের জমায়েত। সব মিলিয়ে আরও এক বার উত্তপ্ত হোসনি মুবারক-পরবর্তী মিশর। বিক্ষোভকারীদের বক্তব্য, মুবারক-জমানা শেষ হওয়ার পর দেশের শাসনব্যবস্থায় কার্যত সেনা আধিপত্য কায়েম হয়েছে। প্রতিবাদ তার বিরুদ্ধেই।
শনিবার থেকেই কায়রোর তাহরির স্কোয়্যার ফের চলে গিয়েছে বিদ্রোহীদের দখলে। সেনা শাসনের অবসানের দাবিতে ছোট ছোট তাঁবু তৈরি করে তারা ঘাঁটি গেড়েছেন বিপ্লবের পুরনো ঠিকানায়। তাঁদের হটাতে পুলিশ যথেচ্ছ লাঠি, গুলি, কাঁদানে গ্যাস, এমনকী পাথরও ব্যবহার করেছে বলে অভিযোগ। কায়রোয় পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন এক বিক্ষোভকারী। আলেকজান্দ্রিয়াতেও পুলিশের গুলিতে এক জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত প্রায় ৮০০। |
বিক্ষোভকারীদের থামাতে পুলিশি তৎপরতা। ছবি: এ পি |
অন্তর্বর্তী সরকারের তরফে এক বিবৃতিতে বিদ্রোহীদের হুঁশিয়ারি দিয়ে বলা হয়েছে, “যা হচ্ছে, তা অত্যন্ত বিপজ্জনক। এর ফলে দেশ ধ্বংসের দিকে যাবে।” বিষয়টি পর্যালোচনা করতে জরুরি বৈঠকে বসেছে অন্তর্বর্তী সরকার। তাতে অবশ্য টলানো যায়নি বিদ্রোহীদের। তাঁদের তরফে জানানো হয়েছে, দাবি না মেটা পর্যন্ত তাহরির স্কোয়্যার ছাড়বেন না তাঁরা। ২৮ নভেম্বর মুবারক-পতনের পর দেশে প্রথম পার্লামেন্ট নির্বাচন। নতুন করে শুরু হওয়া এই বিক্ষোভ সামলে তা সুষ্ঠু ভাবে সম্পন্ন করাটা এই মুহূর্তে মিশরের সামরিক শাসকদের কাজে বড় চ্যালেঞ্জ।
ন’মাস আগে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট হোসনি মুবারকের বিরুদ্ধে যখন রাস্তায় নেমেছিলেন গণতন্ত্রকামী মানুষের দল, তখন সেনাবাহিনীই ছিল তাদের অন্যতম পৃষ্ঠপোষক। সেনার তরফে আশ্বাস ছিল, নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা তুলে দেবে তারা। দেশের শাসনকার্যে কোনও ভূমিকা থাকবে না তাদের। কিন্তু ন’মাস পর বাস্তব চিত্রটা অনেকটাই আলাদা। বিদ্রোহীদের ক্ষোভ, মুবারক-জমানা শেষ হয়েছে ঠিকই। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকারের নিয়ন্ত্রণ রয়ে গিয়েছে সেনার হাতেই। দেশের সাধারণ মানুষের বিচার হচ্ছে সেনার আদালতে। অসন্তোষ বেড়েছে নয়া সংবিধান নিয়েও। এ মাসের শুরুতে নয়া সংবিধানের যে খসড়া পেশ করেছিলেন উপপ্রধানমন্ত্রী আলি আল সিলামি, তাতে দেখা যাচ্ছে সেনার কাজকর্মের উপরে কোনও নিয়ন্ত্রণ থাকবে না সরকারের। এমনকী সেনার বাজেটও হবে সরকারি নিয়ন্ত্রণমুক্ত। এতেই সিঁদুরে মেঘ দেখছেন বিদ্রোহীরা। তাঁদের ধারণা, এই সবই দেশের শাসনব্যবস্থার উপরে সেনার আধিপত্য কায়েম রাখার কৌশল। সেটা ঠেকাতেই আরও এক বার ‘মুক্তি’র খোঁজে মিশর। |