‘টুকলি’ পৌঁছতে সরাসরি ক্লাসরুমে
রীক্ষায় টুকতে বাধা দেওয়ায় কলেজ শিক্ষকদের হুমকি-হেনস্থা চলছেই। তার সঙ্গে এ বার যুক্ত হল আর একটি নতুন ঘটনা। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বহিরাগতরা কলেজে ঢুকে পরীক্ষার্থীদের ‘টুকলি’ দেওয়ার চেষ্টা করল।
শুক্রবার ঘটনাটি ঘটে হাবরা শ্রীচৈতন্য কলেজে। এ দিনই আবার ট্রেনে বাড়ি ফেরার সময়ে পরীক্ষার্থীদের হুমকির মুখে পড়তে হয় দক্ষিণ ২৪ পরগনার মথুরাপুরের গৌরমোহন শচীন মণ্ডল মহাবিদ্যালয়ের শিক্ষক হৃষিকেশ হালদারকে। তিনি বারুইপুর রেল পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেছেন। এই জাতীয় ঘটনা কী ভাবে বন্ধ হবে তা নিয়ে চিন্তিত শিক্ষক মহল। রাজ্যের উচ্চ শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলেন, “দু’টি ঘটনাই অত্যন্ত খারাপ। যারাই এর সঙ্গে যুক্ত থাকুক না কেন, তাদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেবে প্রশাসন। আমি এই ঘটনার ঘোর বিরোধিতা করছি। ঘটনাগুলি খতিয়ে দেখা হবে।”
ট্রেনে নিগৃহীত কলেজ শিক্ষক হৃষিকেশ হালদার। ছবি পিন্টু মণ্ডল।
হাবরার কলেজটিতে শুক্রবার পার্ট-ওয়ানের এডুকেশন পরীক্ষা চলছিল। ‘সিট’ পড়েছিল বনগাঁর দীনবন্ধু মহাবিদ্যালয় এবং গোবরডাঙা হিন্দু কলেজের। দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ ১৮ নম্বর ঘরে ‘গার্ড’ দিচ্ছিলেন ওই কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষক বিশ্বনাথ সর্দার। সেই সময়ে কয়েক জন বহিরাগত বারান্দা দিয়ে যাতায়াত করছিল। এক জন পরীক্ষার্থীদের সঙ্গে আকার-ইঙ্গিতে কথাও বলে। বিশ্বনাথবাবু প্রতিবাদ জানান। এর পরে বহিরাগত এক যুবক ওই ঘরের সামনে এসে দাঁড়িয়ে পড়ে। তা নিয়ে গোলমাল বাধে। বিশ্বনাথবাবুকে হুমকি দেওয়া হয় বলে অভিযোগ।
কলেজ চলাকালীন বহিরাগতদের কোনও ক্লাসে যাওয়া নিষেধ। এ নিয়ে কলেজে বিজ্ঞপ্তিও দেওয়া রয়েছে। কোনও প্রয়োজনে বহিরাগতরা শুধু কলেজের অফিস-ঘরে যেতে পারেন। কিন্তু শুক্রবার বহিরাগতরা যে ভাবে পরীক্ষার ঘরের সামনে চলে যায়, তা চিন্তায় ফেলেছে অধ্যক্ষ ইন্দ্রমোহন মণ্ডলকে। তিনি ঘটনার কথা পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অশোকরঞ্জন ঠাকুরকে জানাবেন বলে জানিয়েছেন। শনিবার অধ্যক্ষের কাছে শুক্রবারের ঘটনার প্রতিবাদ এবং নিরাপত্তার দাবি জানান শিক্ষকেরা।
অধ্যক্ষ বলেন, “পরীক্ষার্থীদের টুকলি দিয়ে সাহায্য করতে এসেছিল ওই বহিরাগতেরা। আবেদন না করায় কোনও পুলিশ প্রহরা ছিল না।” বিশ্বনাথবাবু বলেন, “ওই যুবকদের এক জন আমাকে বলে সে পার্টির লোক। তবে কোন পার্টি বলেনি।”
শুক্রবার মথুরাপুরের কলেজটিতে পার্ট-ওয়ানের দর্শনের পরীক্ষা ছিল। ‘সিট’ পড়েছিল দক্ষিণ বারাসতের ধ্রুব হালদার মহাবিদ্যালয়ের। ‘গার্ড’ দিচ্ছিলেন হৃষিকেশবাবু। কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে, কয়েক জন ছাত্রকে টুকতে দেখে তিনি আপত্তি জানান। ‘টুকলি’ কেড়ে নেন। কয়েক জনের খাতাও কিছু ক্ষণ আটকে রাখেন। হৃষিকেশবাবুর বাড়ি যাদবপুরে। পরীক্ষার পরে ফেরার জন্য তিনি মাধবপুর স্টেশন থেকে ট্রেন ধরেন। হৃষিকেশবাবু যে কামরায় উঠেছিলেন, সেই কামরায় পরীক্ষার্থীদেরও অনেকে ওঠে। অভিযোগ, ট্রেনে ওঠার সময়ে ‘টুকলি’ করতে না-পারা কয়েক জন পরীক্ষার্থী তাঁকে ধাক্কা মারে, গালিগালাজ করে ও খুনের হুমকি দেয়। ওই কামরায় থাকা বাকি নিত্যযাত্রী এবং অন্য কলেজের শিক্ষকেরা তাঁকে নিগ্রহের হাত থেকে উদ্ধার করেন। শাসন স্টেশনে পরীক্ষার্থীরা নেমে যায়। বারুইপুর স্টেশনে নেমে রেল পুলিশের কাছে এই অভিযোগ দায়ের করেন হৃষিকেশবাবু। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে রেল পুলিশ।
ট্রেনের মধ্যে এ ভাবে হেনস্থা হওয়ায় কিছুটা ভেঙে পড়েছেন হৃষিকেশবাবু। শনিবার তিনি বলেন, “ছাত্রদের মধ্যে টোকাটুকির প্রবণতা বাড়ছে। পড়াশোনা না করেই পরীক্ষায় পাশ করতে চাইছে তারা।” ধ্রুব হালদার কলেজের অধ্যক্ষ চিত্তরঞ্জন সাঁতরা বলেন, “আমি ঘটনার কথা শুনেছি। তবে ওই কলেজের তরফ থেকে আমাকে সরকারি ভাবে কিছু জানানো হয়নি। ওই শিক্ষকও আমায় কিছু জানাননি।”
Previous Story Next Story



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.