|
|
|
|
ফের কালু রহমানই ‘বাধা’, পোলবায় প্রশ্নের মুখে শিল্প |
গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায় • কলকাতা |
তৃণমূল নেতা কালু রহমানের ‘দৌরাত্ম্যে’ নাভিশ্বাস উঠেছে পোলবার রাজহাটের শিল্পোদ্যোগীদের।
প্রভাবশালী এই তৃণমূল নেতা কখনও ইচ্ছামতো মোটা টাকা দাবি করছেন, কখনও শিল্প-কারখানায় নিজের লোক ঢোকাতে চাইছেন এমনই সব অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। ফের তাঁর দাবি মতো একটি ‘সেবামূলক সংস্থা’য় মোটা টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় ভরত পারেখ নামে এক শিল্পোদ্যোগীর প্রস্তাবিত শিল্প-কারখানার কাজ অন্তত চার বছর ধরে আটকে থাকার অভিযোগ উঠল। এখনও ওই শিল্পোদ্যোগী পঞ্চায়েতের ছাড়পত্র (এনওসি) পাননি। এর পিছনে কালু রহমানের ‘হাত’ রয়েছে বলে অভিযোগ ওই শিল্পোদ্যোগীর। প্রতিকারের আশায় তিনি ঘটনার কথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কেও লিখিত ভাবে জানিয়েছেন। তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অবশ্য ওই তৃণমূল নেতা মানেননি।
ভরতবাবু বলেন, “সরকারি নিয়মে যা টাকা লাগবে, দেব। কিন্তু কাউকে তাঁর দাবি অনুযায়ী টাকা দেব না। মুখ্যমন্ত্রী এবং শিল্পমন্ত্রীর উপর আমার ভরসা আছে। দলের কারও এই অন্যায় আচরণ নিশ্চয়ই তাঁরা মানবেন না।” তাঁর প্রশ্ন, “যে রাজনৈতিক দল রাজ্যে পরিবর্তন আনতে চাইছে তারা এই ধরনের দুর্নীতিগ্রস্ত লোককে দলের মধ্যে রেখে কী ভাবে লক্ষ্যে পৌঁছবে?” |
|
এখানেই কারখানা গড়ে ওঠার কথা। তাপস ঘোষের তোলা ছবি। |
শিল্পমন্ত্রী পার্থবাবু বলেন, “রাজ্যের আইন মেনে কোনও শিল্পপতি যদি শিল্প গড়তে চান, কোন মস্তান তাঁকে আটকাবে! ওই শিল্পোদ্যোগীকে আমি ডেকে পাঠিয়েছি।” তবে ওই এলাকার তৃণমূল সাংসদ রত্না দে নাগ বলেন, “আমি ওখানে গিয়ে কালু রহমানের সঙ্গে কথা না বলে কিছু বলব না। এখন সংসদ চলছে।” চুঁচুড়ার মহকুমাশাসক জলি চৌধুরী অবশ্য বলেন, “সম্ভবত ভুক্তভোগী শিল্পোদ্যোগী জেলা প্রশাসনের কাছে ওঁর সমস্যার কথা জানাননি। তা জানালে দ্রুত ব্যবস্থা নিয়ে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করব। এর আগেও ওই এলাকায় শিল্প গড়তে গিয়ে কিছু শিল্পপতির সমস্যা প্রশাসন মিটিয়েছে।”
রাজহাটে প্রায় তিন একর জমিতে ২০ কোটি টাকায় বিশেষ ধরনের আসবাবপত্র তৈরির আধুনিক কারখানা গড়ার প্রকল্প হাতে নিয়েছে ভরত পারেখের সংস্থা ‘গণেশবাড়ি ডাকটাইল কাস্টিং প্রাইভেট লিমিটেড’। সংস্থার দাবি, শুধু এ রাজ্যে নয়, পূর্ব ভারতে এই ধরনের কোনও প্রকল্প নেই। দক্ষ শ্রমিক তৈরির জন্য কারখানার পাশাপাশি একটি কারিগরি প্রশিক্ষণ স্কুলও তৈরি করা হবে। যাতে কাজ শিখে শ্রমিকেরা ওই কারখানাতেই কাজ পেয়ে যান। ফলে, ওই এলাকায় বহু যুবকের কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে।
২০০৭ সালে সংস্থাটি অন্য একটি প্রতিষ্ঠানের থেকে জমি কেনে। তাদের পরিকল্পনা ছিল, স্থানীয় পঞ্চায়েতের ছাড়পত্র পেলেই কারখানা গড়ার কাজ শুরু হবে। সংস্থার কর্তারা তৃণমূল পরিচালিত পোলবার রাজহাট পঞ্চায়েতে যান। ওই শিল্পোদ্যোগী বলেন, “পঞ্চায়েতের কথায় আমরা প্রথমেই জমির বকেয়া খাজনা মিটিয়ে দিই। এর পরে, পঞ্চায়েত থেকেই বলা হয় কালু রহমানের সঙ্গে দেখা করতে।” তাঁর সংযোজন, “কালু রহমান বলেছিলেন, কোনও চিন্তা করতে হবে না। আমাদের সেবা প্রতিষ্ঠানে কেবল চাঁদা দিতে হবে। টাকার পরিমাণ এত বেশি, আমি হতাশ হয়ে ফিরে আসি।”
কালু রহমানের পাশাপাশি পঞ্চায়েতের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও তা গুরুত্ব দিতে নারাজ উপপ্রধান তৃণমূল নেতা শেখ সাহদাদ আলি। তিনি বলেন, “এখানে কারখানা করে কী হবে? কলাগাছ, আমগাছ কেটে কারখানা করে ওরা নিজেদের কাজ গুছিয়ে নেয়। অথচ এলাকার ছেলেদের চাকরি দেয় না। আর পঞ্চায়েতের ছাড়পত্রের কী আছে? পঞ্চায়েত সমিতি, মহকুমাশাসক, জেলাশাসক যার কাছ থেকে খুশি নিক।” কালু রহমান অবশ্য জানিয়েছেন, এই অভিযোগ ভিত্তিহীন। তিনি বলেন, “আমার বিরুদ্ধে যত সব বিভ্রান্তিকর খবর প্রচার করা হচ্ছে।” |
|
পোলবার তৃণমূল নেতা কালু রহমান। নিজস্ব চিত্র |
এর আগে রাজহাটেই ‘টেকনোম্যাক্স ইঞ্জিনিয়ারিং প্রাইভেট লিমিটেড’ নামে একটি শিল্পসংস্থার ডিরেক্টর রফিকুল হাসান কালু রহমানের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ তুলেছিলেন। যে কারণে তিনি রীতিমতো ব্যানার লিখে তাঁর নির্মীয়মাণ প্রকল্পের কাজ বন্ধ করছেন বলে জানিয়েছিলেন। জেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপে সমস্যাটি মেটে। এর পরে ‘তুলসিয়ান’ নামে আর একটি শিল্পসংস্থাও অভিযোগ তোলে, কালু রহমান তাঁর লোক নিয়োগের জন্য চাপ সৃষ্টি করে কারখানায় গণ্ডগোল পাকানোর চেষ্টা করছেন। বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ায়। আদালতের নির্দেশে কারখানা চত্বরে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। |
|
|
|
|
|