|
|
|
|
যুবকর্মীরা ‘সুশৃঙ্খল’ হোন, নির্দেশ মুকুল-শুভেন্দুর |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
৩০-৪০ বছর নয়, যত দিন ‘শ্বাস’, তত দিনই পশ্চিমবঙ্গের সরকারে থাকার ‘আশ’ তৃণমূল নেতৃত্বের। তা পূরণের জন্য শনিবার ইউনিভার্সিটি ইনস্টিটিউট হলে তৃণমূল যুব কংগ্রেসের বর্ধিত সভায় যুবকর্মীদের ‘সুশৃঙ্খল’ ভাবে সংগঠন করার নির্দেশ দিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মুকুল রায়। সেই সভাতেই যুবকর্মীদের বিভিন্ন ‘চক্রান্তকারী শক্তি’ সম্পর্কে সজাগ থাকার পরামর্শ দিলেন তৃণমূল যুব কংগ্রেসের রাজ্য সভাপতি তথা সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী। পাশাপাশি, তৃণমূলের যুব কর্মীদের প্রতি মুকুলবাবু এবং শুভেন্দুর বার্তা‘নিষ্ঠার সঙ্গে’ দল করলে দলও কর্মীদের ‘মূল্যায়ন’ করবে। সে ক্ষেত্রে নেতৃত্বের কাছে ভোটের টিকিটের ‘উমেদারি’ না-করলেও কর্মীদের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ ‘উজ্জ্বল’।
প্রসঙ্গত, মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিয়মিতই নেতা-কর্মীদের ‘সুশৃঙ্খল, বিনয়ী এবং সংযত’ ভাবে দল করার নির্দেশ দিচ্ছেন। সেই ধারাবাহিকতা রক্ষা করেই এ দিন মুকুলবাবু বলেন, “ঔদ্ধত্যের কোনও স্থান নেই। নিষ্ঠার সঙ্গে বিনম্র ভাবে দল করুন। ৩০-৪০ বছর নয়। যত দিন বেঁচে থাকব, তত দিন বাংলায় তৃণমূলই থাকবে। সে জন্য সমন্বয় রেখে কাজ করুন।”
মুকুলবাবুর বক্তব্য, বিরোধী থাকার সময় তৃণমূল সিপিএমের ‘অপশাসন এবং সন্ত্রাস’-এর বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে লড়েছে। কিন্তু ‘শাসক’ তৃণমূলের ‘নতুন’ কাজসরকারের তরফে জনগণকে ‘আইনের সুশাসন’ দেওয়া এবং ‘উন্নয়ন’ করা। যুবকর্মীদের ‘নতুন’ কাজসরকারে ‘সুশাসন’ এবং ‘উন্নয়ন কর্মসূচিগুলির সুফল’ মানুষের কাছে পৌঁছচ্ছে কিনা, তা নজরে রাখা। মুকুলবাবুর কথায়, “বালু (খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক) বলেছে, ২ টাকা কেজি দরে চাল দেবে। আপনাদের দায়িত্ব, সে চাল ঠিক জায়গায় পৌঁছচ্ছে কিনা, তা দেখা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জঙ্গলমহলে যে উন্নয়ন করার কথা বলেছেন, তা ঠিকমতো হচ্ছে কিনা, আপনারা খেয়াল রাখবেন। মনে রাখবেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ধর্মগ্রন্থ তাঁর নির্বাচনী ইস্তাহার। সরকারে এসে নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিগুলির কতটা পূরণ করা হল, কতটা বাকি আছে, তিনি সর্বদা তার হিসাব রাখেন।” আগামী ১২ অক্টোবর ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজ শুরু হবে। তার ভিত্তিতেই ২০১৩ সালে রাজ্যে পঞ্চায়েত ভোট হবে। সেই প্রেক্ষিতে যুব কর্মীদের প্রতি মুকুলবাবুর নির্দেশ, “সরকারে এসে গিয়েছি। অতএব, সব হয়ে গিয়েছেএমন ভাবনা থেকে যেন কাজে শৈথিল্য না আসে। এত দিন ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজ আপনারাই করতেন। এ বারও করবেন। সিদ্ধার্থশঙ্কর রায় অনেক ভাল কাজ করলেও সাংগঠনিক পরিকাঠামো মজবুত করতে পারেননি। আমাদের কিন্তু সেটা করতে হবে।” দলের যুবকর্মীদের প্রতি মুকুলবাবুর আরও নির্দেশ নতুন সদস্য নিতে হলে তাঁদের নাম-ঠিকানা রাজ্য সভাপতি মারফৎ তাঁর কাছে জমা দিতে হবে। রক্তদান শিবির করলেও তার জন্য কার্ড ছাপিয়ে চাঁদা তোলা যাবে না। হোর্ডিং-ব্যানার-পোস্টার যিনি তৈরি করাচ্ছেন, তিনি নিজের নাম সেখানে লিখতে পারবেন না। কলকাতা পুরসভার ১০ নম্বর ওয়ার্ড নিয়ে তাঁর কাছে অভিযোগ জমা পড়েছে বলেও মুকুলবাবু জানান। এর পরেই যুবকর্মীদের তাঁর আশ্বাস, “নেত্রীর প্রতি আনুগত্য রাখুন। দেখবেন দলও আপনাদের যথার্থ মূল্যায়ন করবে।” মন্ত্রী কথায়, এবার বিধানসভা ভোটে জিতে যাঁরা বিধায়ক বা মন্ত্রী হয়েছেন, তাঁদের অনেকেই তৃণমূলের যুব সংগঠন করতেন। মমতা তাঁদের প্রত্যেকের কাজের মূল্যায়ন করেই তাঁদের ভোটে জিতিয়ে এনেছেন। তার জন্য কোনও ‘সুপারিশ’ লাগেনি। শুভেন্দুও বলেন, “তৃণমূলের ১৭ জন যুব নেতা পশ্চিমবঙ্গ থেকে নির্বাচিত হয়েছেন। আমরা যুবদের নতুন দিশা দেখাতে চাই। আপনারা ভাল কাজে উদ্যোগী হোন। সেই উদ্যোগ জনতার মধ্যে ছড়িয়ে দিন।”
শুভেন্দু যুবকর্মীদের একগুচ্ছ কর্মসূচি পালনেরও নির্দেশও দিয়েছেন। আগামিকাল, সোমবার রবীন্দ্রনাথের প্রয়াণ দিবসে তাঁর জন্মের সার্ধশতবর্ষ পালন, মঙ্গলবার অগস্ট আন্দোলনের স্মরণে মহিষাদলে অনুষ্ঠান, ১১ অগস্ট ক্ষুদিরামের শহিদ দিবসে কেশপুরের মৌবনিতে অনুষ্ঠান, ১৩ অগস্ট রাখিবন্ধনের দিন ‘মৈত্রী উৎসব’, স্বাধীনতা দিবসে হাসপাতাল এবং সংশোধনাগারে ফল-মিষ্টি বিতরণ এবং ২৮ অগস্ট নেতাজি ইন্ডোরে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবস পালন। সভায় ছিলেন তৃণমূল ছাত্র পরিষদের রাজ্য সভাপতি শঙ্কুদেব পণ্ডাও। প্রসঙ্গত, আজ, রবিবার তৃণমূল ভবনে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের বর্ধিত সভায় প্রাক্তন ছাত্রনেতা সুব্রত মুখোপাধ্যায়, তাপস রায়, অরূপ বিশ্বাস, সোনালি গুহ প্রমুখকে ডাকা হয়েছে। ২৮ অগস্টের কর্মসূচি এবং ছাত্র সংগঠনের রূপরেখা স্থির হবে ওই বৈঠকে। |
|
|
|
|
|