|
|
|
|
রেজিস্ট্রেশন-মিউটেশন এ বার এক লপ্তে ইন্টারনেটে |
গার্গী গুহঠাকুরতা • কলকাতা |
লাল ফিতের ফাঁস কাটতে ই-গভর্ন্যান্সের পথে আর এক ধাপ। বিক্রয়কর ব্যবস্থার পর এ বার জমি কিংবা বাড়ির ‘রেজিস্ট্রেশন’ (নথিভুক্তি) এবং ‘মিউটেশন’ (নাম বদল)-কেও পুরোদস্তুর ইন্টারনেটের দুনিয়ায় এনে ফেলার পথে পা বাড়াচ্ছে রাজ্য। এবং নয়া ব্যবস্থায় এই দু’টি কাজই একসঙ্গে করা যাবে বলে রাজ্য সরকারের দাবি। সব ঠিক চললে, এই পরিষেবা চালু হওয়ার কথা চলতি বছরের মধ্যেই।
এই লক্ষ্যে ‘ভূচিত্র’ নামে একটি সফটওয়্যার তৈরি করেছে কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থা ন্যাশনাল ইনফর্মেটিকস সেন্টার (এনআইসি)। যা ব্যবহার করে এই পরিষেবা ব্লক-স্তর পর্যন্ত ছড়িয়ে দিতে চায় রাজ্য। তথ্যপ্রযুক্তি দফতর সূত্রে খবর, এ জন্য ইতিমধ্যেই তৈরি হয়েছে পাইলট প্রকল্প। যার মাধ্যমে হাওড়ার পাঁচলায় পরীক্ষামূলক ভাবে দেখা হবে যে, দু’টি প্রক্রিয়া মিলিয়ে দেওয়ার ফলে সত্যিই কতটা সুবিধা পাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। দেখা হবে, কোন কোন ক্ষেত্রেই বা অসুবিধার মুখে পড়ছেন তাঁরা। দফতরের দাবি, এই ব্যবস্থা চালু হলে যেমন গতি ও স্বচ্ছতা আসবে, তেমনই ঝক্কি কমবে সাধারণ মানুষের। অকারণ হয়রানি ও সময়ের অপচয় থেকেও রেহাই পাবেন তাঁরা।
অফিস কিংবা অন্যান্য জরুরি কাজ শিকেয় তুলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে বাড়ি বা জমি রেজিস্ট্রেশন বা মিউটেশন করার তিক্ত অভিজ্ঞতা আছে অনেকেরই। বিশেষত এই দু’টি বিষয় দুই পৃথক দফতরের অধীন হওয়ায় সেই ঝক্কির পরিমাণও দ্বিগুণ। কারণ এক দিকে নথিভুক্তির জন্য ছুটতে হয় অর্থ দফতরের আওতায় থাকা রেজিস্ট্রেশন অফিসে। আর মূলত ভূমি দফতরের হয়ে মিউটেশনের কাজ করে সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েত অথবা পুরসভা।
এর ফলে দু’জায়গায় দু’বার আলাদা করে ছোটাছুটি করতে বাধ্য হন সাধারণ মানুষ। আবার প্রায়শই দু’টি দফতরের মধ্যে সমন্বয় না থাকায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে হারিয়ে যায় অনেক তথ্য। এবং অনেক সময়েই ফায়দা তোলা হয় এই অসম্পূর্ণ তথ্যের। যেমন, কোনও কোনও ক্ষেত্রে একই জমি বিক্রি করা হয় একাধিক মানুষকে। কখনও আবার লোপাট হয়ে যায় জমির মালিকানা সংক্রান্ত ফাইলই। রমরমিয়ে চলে লোক-ঠকানো ব্যবসা। তথ্যপ্রযুক্তি দফতরের দাবি, নয়া ব্যবস্থায় এই সব হেনস্থা থেকেও রেহাই পাবেন সাধারণ মানুষ। কারণ, এ ক্ষেত্রে সফটওয়্যার ব্যবহারের মাধ্যমে তৈরি করা হবে জমি সংক্রান্ত তথ্যভাণ্ডার। এবং সংশ্লিষ্ট দফতর ছাড়াও সব তথ্য সংরক্ষিত থাকবে ‘স্টেট ডেটা সেন্টার’-এ। তাই সম্ভাবনা প্রায় থাকবেই না তথ্য হারিয়ে যাওয়ার।
মিউটেশন ও রেজিস্ট্রেশনের মতো দু’টি বহুল তথ্য সম্বলিত প্রক্রিয়া এক সূত্রে গেঁথে ব্লক স্তর পর্যন্ত পরিষেবা দিতে যে ধরনের ‘ব্যান্ডউইডথ’ বা তথ্য পরিবহণের ‘রাস্তা’ এনআইসি চাইছিল, তা দিতে গেলে খরচের বহর দাঁড়াত বিপুল। তথ্যপ্রযুক্তি দফতরের দাবি, ওই খরচ কমাতে সফটওয়্যারের পূর্ণ সদ্ব্যবহারের দিকে নজর দিচ্ছে তারা। একই রাস্তায় কত ধরনের তথ্য পাঠানো সম্ভব, খতিয়ে দেখা হচ্ছে তা-ও।
আসলে ‘ইলেকট্রনিক সার্ভিস ডেলিভারি’ বা ই-গভর্ন্যান্সের মাধ্যমে নাগরিক পরিষেবা আরও বেশি করে আমজনতার কাছে পৌঁছে দিতে আইন তৈরির কথা ভাবছে কেন্দ্র। ভাবনাচিন্তা চলছে নেটের মাধ্যমে সরকারি পরিষেবা দেওয়া বাধ্যতামূলক করার কথাও। আর সেই কারণেই রাজ্যগুলিকে ‘ব্যান্ডউইডথ’ ধাপে ধাপে শক্তিশালী করার নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্র। আগামী ৮ বছরে জেলা-স্তর পর্যন্ত যা করতে হবে প্রতি সেকেন্ডে ৩৪ মেগাবাইট। আর ব্লক-স্তর পর্যন্ত সেকেন্ডে ৮ মেগাবাইট।
তথ্যপ্রযুক্তি দফতরের দাবি, ই-গভর্ন্যান্সের একাধিক প্রকল্পের সুবিধা সাধারণ মানুষের দরজায় পৌঁছে দিতে আগ্রহী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। অর্থ, পূর্ত, ভূমি-সহ বিভিন্ন দফতরে এ ধরনের পরিষেবা দেওয়ার উপযুক্ত পরিকাঠামো দ্রুত গড়ে তুলতে আগ্রহী খোদ মুখ্যমন্ত্রী। যাতে এক দফতর থেকে আর এক দফতরে হন্যে হয়ে দৌড়াদৌড়ির বদলে কম্পিউটারের বোতাম টিপেই এই সব কাজ সেরে ফেলতে পারেন সাধারণ মানুষ। |
|
|
|
|
|