|
|
|
|
‘লন্ডনে কিন্তু গোড়ালিতে ব্যান্ডেজ থাকছে না’ |
বক্তার নাম সাইনা নেহওয়াল। সোমবার লন্ডনে শুরু বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ খেলতে শুক্রবার
গভীর রাতে ফ্লাইট ধরতে বেরিয়ে গেলেন তিনি। তার কয়েক ঘণ্টা আগে হায়দরাবাদ থেকে ফোনে
সুপ্রিয় মুখোপাধ্যায়-কে বিশেষ সাক্ষাৎকার দিলেন ভারতের ব্যাডমিন্টন রানি। |
প্রশ্ন: আপনি নাকি রজনীকান্তের সঙ্গে তেলুগু ছবিতে অভিনয় করতে চেয়েছেন?
সাইনা নেহওয়াল: একদম বাজে কথা। ফিল্মি ম্যাগাজিনের মস্তিষ্কপ্রসূত গুজব। আর সিনেমা করলে শুধু রজনীকান্তের সঙ্গে করব কেন? আমির খান-শাহরুখ খানের সঙ্গে হিন্দি ছবিও করব। স্বপ্ন দেখলে পুরো স্বপ্নটাই দেখা ভাল নয় কি?
প্র: আমির খান তো আপনার ব্যাডমিন্টনের বিরাট ভক্ত! নিয়মিত আপনাদের মধ্যে এসএমএস চালাচালি হয়।
সাইনা: হয়, তবে নিয়মিত নয়। আমি কোনও ম্যাচ জিতলে উনি আমাকে অভিনন্দন জানিয়ে এসএমএস করেন। কোনও টুর্নামেন্ট খেলতে যাওয়ার সময় আমাকে ‘বেস্ট অব লাক’ও জানান। আমিও ওঁর কোনও সিনেমা হিট করলে অভিনন্দন জানিয়ে এসএমএস করেটরে থাকি। এই তো ‘দিল্লি বেলি’ ছবিটা দেখে ওঁকে এসএমএস করেছি। আমির খান আসলে খেলাধুলোরই ভক্ত। ক্রিকেট, টেনিস, ব্যাডমিন্টন...
প্র: বরাবরের অভ্যেসের মতো এ বারও কি বিদেশে খেলতে যাওয়ার সময় সঙ্গে হিন্দি সিনেমার ভিসিডি নিয়ে যাচ্ছেন? এ বার লন্ডনে বিশ্ব ব্যাডমিন্টন চ্যাম্পিয়নশিপের কিটসে কি ‘দিল্লি বেলি’ থাকছে?
সাইনা: ওটার ভিসিডি তো থাকছেই। ‘চক দে ইন্ডিয়া’, ‘লগন’ওই দুটো ভিসিডি এ বারও নিয়েছি। দু’টো সিনেমাই প্লেয়ার প্রজাতির কাছে ভীষণ অনুপ্রেরণামূলক।
প্র: কঠিন ম্যাচের আগে কি ওই সিনেমাগুলো দেখেটেখে কোর্টে যান?
সাইনা: তিন ঘণ্টা বসে বসে কী আর দেখি? পছন্দের জায়গাগুলো চালিয়ে চালিয়ে হয়তো কিছুক্ষণ হোটেলের ঘরে ম্যাচের আগের রাতে দেখি।
প্র: লন্ডনে ‘চক দে ইন্ডিয়া’র ভিসিডি, না ভিডিও অ্যানালিস্ট রামকি কার অগ্রাধিকার এ বার আপনার কাছে বেশি? ভারতীয় ক্রিকেট টিমের প্রাক্তন ভিডিও অ্যানালিস্ট তো এখন আপনার সাহায্যকারী!
সাইনা: ঠিক পুরোপুরি আমার নয়। অলিম্পিক গোল্ড কোয়েস্ট নামে একটা আধা সরকারি সংস্থা দু’হাজার বারো অলিম্পিকের বারো মাস আগে বিভিন্ন ইভেন্টে আমাদের বেশ ক’জন ভারতীয় প্লেয়ারের জন্য রামকি-কে দিয়েছে। পরের বছর লন্ডনেই অলিম্পিক বলে পরের সপ্তাহে বিশ্ব ব্যাডমিন্টন চ্যাম্পিয়নশিপেও উনি আমার সঙ্গে থাকছেন। অবশ্যই ওঁর সাহায্য আমার কাছে যথেষ্ট গুরুত্বের হতে চলেছে।
প্র: নিজের সাপোর্ট স্টাফে ভারতীয় ক্রিকেট দলের প্রাক্তন টেকনিক্যাল লোককে ঢুকিয়ে আপনি কি পারবেন ইংল্যান্ডে ধোনির টিমের লজ্জাজনক পারফরম্যান্সকে আপনার র্যাকেটের জোরে মুছে দিতে?
সাইনা: ইংল্যান্ডে পরপর টেস্ট ম্যাচে ভারতের হার আমাকেও কষ্ট দিয়েছে। কিন্তু সেটা আমাকে মুছতে হবে, সে সব ভেবে আমি খেলব না। সচিনদের সিরিজ আর বিশ্ব ব্যাডমিন্টন একই সময়ে লন্ডনে পড়েছে এটা কাকতালীয় ছাড়া আমার কাছে আর কিছু নয়।
|
|
প্র: কিন্তু সব মিলিয়ে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে আপনার প্রধান অস্ত্র কী?
সাইনা: আমার ফিটনেস। বহু দিন পর একেবারে চোটমুক্ত, সম্পূর্ণ ফিট অবস্থায় আমি কোনও টুর্নামেন্টে নামছি। আশা করি নিজের পুরো স্কিলটা কোর্টে বার করার সময় এ বার আর শরীর কোনও রকম বাধা হবে না।
ভাবতেই ভাল লাগছে, লন্ডনে আমার গোড়ালি ব্যান্ডেজ বাঁধা থাকবে না। আট মাস ধরে যা ছিল।
প্র: দিল্লি কমনওয়েলথ গেমসের সোনা ছাড়া সত্যিকারের বড় মঞ্চে আপনার এখনও তেমন সাফল্য নেই। এশিয়াড, অলিম্পিক, পরপর দুটো বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপকোথাও কোয়ার্টার ফাইনালের বেশি এগোতে পারেননি। সাইনা নেহওয়াল মানে কি তা হলে শেষ আট বা শেষ চারের প্লেয়ার হয়েই থাকা?
সাইনা: আমি যদিও আর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ খেলার জন্য ফ্লাইট ধরতে বেরোচ্ছি, কিন্তু আমার চূড়ান্ত লক্ষ্য পরের বছর অলিম্পিক পদক। তবে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপেও এ বার কিছু করে দেখাতে চাই। চোট নিয়েও এ বছর ইন্দোনেশিয়া সুপার সিরিজ ফাইনাল খেলেছি। এখন আমি পুরো ফিট। গত দু’মাস প্রচণ্ড কঠিন ট্রেনিং শিডিউলের মধ্য দিয়ে গিয়েছি। আশা করি এ বার ভাল কিছু হবে।
প্র: একপ্রস্ত মনোমালিন্য, ছাড়াছাড়ির পর গুরু গোপীচন্দের কাছেই আবার প্র্যাক্টিস করে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে যাচ্ছেন। গোপীস্যর-ও যাচ্ছেন। পুরো ব্যাপারটা কী ভাবে দেখছেন আপনার সম্ভাব্য পারফরম্যান্সের পরিপ্রেক্ষিতে?
সাইনা: গোপীস্যর আর আমার মধ্যে সমস্ত ভুল বোঝাবুঝি মিটে গেছে। আমার ফিটনেস, প্রোমোশনাল কাজ নিয়ে আমাদের মধ্যে একটা মনোমালিন্য সত্যিই হয়েছিল। কিন্তু এখন সব ঠিকঠাক। গোপীস্যর আর আমি দু’জনই ছটফট করছি লন্ডনে নামার জন্য।
বিশেষ করে আরও যেহেতু ওয়েম্বলি এরিনা-য় যেখানে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ হচ্ছে, সেই একই স্টেডিয়ামে পরের বছর অলিম্পিকেও ব্যাডমিন্টন হবে। সে জন্য গোটা পরিবেশ-পরিস্থিতি সম্পর্কে পুরো ওয়াকিবহাল হতে পারব আগামী সাত দিনে।
প্র: আপাতত বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে আপনার ড্র-এর পরিস্থিতি কেমন? কতটা কঠিন আপনার পক্ষে বিশ্বসেরা হওয়া?
সাইনা: বিশ্বসেরা হওয়া যে-কোনও সময়ই প্রচণ্ড কঠিন। তবে গোপীস্যরের সঙ্গে আমি একমতড্র’টা ভালই পেয়েছি। আমার দিকে যারা আছে, তাদের সঙ্গে আমি আগে অনেক বার খেলেছি। সবাইকে হারিয়েওছি আগে। কেউ অজানা প্রতিদ্বন্দ্বী নয়। এটা অবশ্যই একটা ভাল দিক।
প্র: বিশ্ব ব্যাডমিন্টনে চিনের প্রাচীর গুঁড়িয়ে ভারতীয় সাম্রাজ্য কায়েম করতে পারবেন?
সাইনা: অনেকগুলো ফ্যাক্টর আমার পক্ষে যেতে হবে। তা হলে নিশ্চয়ই সম্ভব সেটা করা। প্রথম রাউন্ড ‘বাই’ পাওয়ায় প্রথম তিন দিনে আমায় মাত্র একটা ম্যাচ খেলতে হবে। তার পর কিন্তু ফাইনাল অবধি উঠলে শেষ চার দিনে চারটে ম্যাচ। রোজ। কোয়ার্টার ফাইনাল থেকেই চিনা প্রতিপক্ষদের পাববিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে তিন নম্বর...দু’নম্বর। তার আগে ইন্দেনেশিয়ান আর মালয়েশিয়ানদের সামলাতে হবে। ওদের দেশও কিন্তু বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে ভারতের অনেক আগে।
প্র: বিশ্ব ব্যাডমিন্টনে আপনার আবির্ভাবের পাঁচ বছরের মাথায় ভারত বিশ্ব ক্রমপর্যায়ে এ দিনই প্রথম দশের মধ্যে উঠে এসেছে। আপনিই সিঙ্গলসে বারোশোর বেশি ক্রমপর্যায়ে পয়েন্ট এনে দিয়েছেন। লন্ডনে এটা আপনাকে কতটা তাতিয়ে তুলবে?
সাইনা: তবু এখনও আমার দেশ পিছিয়ে আছেচিন তো বটেই, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া এমনকী তাইল্যান্ডের থেকেও। আমি স্বপ্ন দেখি ব্যাডমিন্টনে ভারত একদিন বিশ্বের এক নম্বর দেশের মর্যাদা পাবে। সে আমি নিজে এক নম্বর হতে পারি বা না পারি! |
|
|
|
|
|