|
|
|
|
‘বুদ্ধ-কায়দায়’ গরহাজির বিজয়ন, অস্বস্তিতে কারাট |
সন্দীপন চক্রবর্তী • কলকাতা |
পলিটব্যুরোর বৈঠকে গরহাজির থেকে ‘নীরব বার্তা’ পাঠানোর ধারা অব্যাহত সিপিএমে! তার ফলে অব্যাহত প্রকাশ কারাটের ‘অস্বস্তি’ও! সেই ‘অস্বস্তি’র ক্ষেত্র কখনও পশ্চিমবঙ্গ। কখনও কেরল।
কলকাতায় এ বারের পলিটব্যুরো এবং কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে আসেননি সিপিএমের কেরল রাজ্য সম্পাদক পিনারাই বিজয়ন। আনুষ্ঠানিক ভাবে বলা হচ্ছে, তাঁর অনুপস্থিতির কারণ ‘অসুস্থতা’। আয়ুর্বেদিক চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন কেরল থেকে দলের এই পলিটব্যুরো সদস্য। তবে দলেরই একাংশের মতে, এ রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের অতীতের পদাঙ্ক অনুসরণ করেই পলিটব্যুরো এবং কেন্দ্রীয় কমিটি এড়িয়ে গিয়েছেন বিজয়ন। বিধানসভা ভোটে কেরলের বিগত এলডিএফ সরকারের মুখ্যমন্ত্রী ভি এস অচ্যুতানন্দনকে টিকিট দেওয়া নিয়ে ‘বিভ্রান্তি’ তৈরি করে রাজ্য সিপিএম ঠিক করেনি বলে যে মূল্যায়ন পলিটব্যুরো এবং কেন্দ্রীয় কমিটি করেছে, তাতেই ‘অসন্তুষ্ট’ বিজয়ন ‘বার্তা’ পাঠাতে চেয়েছেন কারাটদের। এবং সেই জন্যই চিকিৎসার জন্য ঠিক এই সময়টাই বেছে নেওয়া হয়েছে বলে দলের ওই অংশের অভিমত। প্রার্থীদের প্রথম তালিকায় ভি এসের নাম ছিল না, পরে পলিটব্যুরোর হস্তক্ষেপে চূড়ান্ত তালিকা তৈরির সময় তাঁর নাম ঢোকানো হয় মাঝের দু’দিনে প্রবল বিক্ষোভ হয় দলের অন্দরেই। এই ‘বিভ্রান্তি’ ঘটানোর দায় রাজ্য নেতৃত্বেরই বলে মনে করে কেন্দ্রীয় কমিটি। বিজয়নদের ‘অসন্তোষ’ সেখানেই। প্রসঙ্গত, কলকাতায় এসেও অসুস্থ হয়ে পড়ায় শনিবার কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে থাকতে পারেননি আর এক পলিটব্যুরো সদস্য সীতারাম ইয়েচুরিও। |
|
বস্তুত, কেরলে এখন ভি এস বনাম বিজয়ন দ্বন্দ্ব আবার চরমে। এক দিকে বিজয়ন যখন কলকাতার বৈঠকে আসেনইনি, ভি এস তখন এসেও সাধারণ সম্পাদকের জবাবের জন্য অপেক্ষা করতে চান না! আজ, রবিবার কেন্দ্রীয় কমিটিতে জবাবি বক্তৃতা দেওয়ার কথা কারাটের। তার আগেই কলকাতা থেকে ভোরের তিরুঅনন্তপুরমের উড়ানের টিকিট কেটে রেখেছেন কেরলের বিরোধী দলনেতা। হায়দরাবাদে কেন্দ্রীয় কমিটির বিগত বৈঠকেও তিনি কারাটের জবাব শোনার জন্য অপেক্ষা করেননি। সিপিএম সূত্রের ব্যাখ্যায়, ভি এস এবং বিজয়ন, দুই শিবিরকে নিয়েই এখন যথেষ্ট ‘বিড়ম্বনা’য় কারাট। বুদ্ধবাবুর হাজির থাকা ‘নিশ্চিত’ করতে পলিটব্যুরো এবং কেন্দ্রীয় কমিটি যখন কলকাতায় নিয়ে আসা হয়েছে, তখন নতুন সমস্যা দেখা দিয়েছে তিরঅনন্তপুরমে!
সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির এক সদস্যের কথায়, “বর্ষাকালের এই সময়টাই আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা করানোর পক্ষে উপযুক্ত। সেই জন্যই বিজয়ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর পিছনে অন্য কোনও কারণ খোঁজা ঠিক নয়।” কিন্তু দলেরই একাংশের বক্তব্য, গত বছর বিজয়ওয়াড়ায় কেন্দ্রীয় কমিটির বর্ধিত অধিবেশন থেকে ঠিক একই ভাবে আয়ুর্বেদিক চিকিৎসার কারণ দেখিয়ে সরে দাঁড়িয়েছিলেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী ভি এস। এ বার বিজয়ন সেই পথে হাঁটলেন। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, ‘অসুস্থ’ হলেও বিজয়ন কিন্তু ভি এস-কে বেকায়দায় ফেলার জন্য দলীয় মুখপত্রে নিজের নিবন্ধকে ব্যবহার করেছেন মাত্র দু’দিন আগেই!
বিধানসভা ভোটে ভি এস-কে প্রাথমিক প্রার্থী তালিকায় না-রাখার প্রতিবাদে যাঁরা বিক্ষোভ সংগঠিত করেছিলেন, তাঁদের বিরুদ্ধে এখন ব্যবস্থা নিচ্ছেন কেরল সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্ব। ভি এস বিক্ষোভকারীদের পাশে দাঁড়িয়ে বলেছেন, ওঁরা ‘দল-বিরোধী’ কিছু করেননি। এতেই প্রবল ক্ষুব্ধ বিজয়ন-শিবির। কেরল থেকে কেন্দ্রীয় কমিটির এক সদস্য এ দিন বৈঠকের ফাঁকে আনন্দবাজারকে বলেছেন, “শৃঙ্খলাভঙ্গের দায়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সিদ্ধান্তের শরিক তো ভি এস নিজেও! তা হলে আর অহেতুক বিভ্রান্তি তৈরি করে লাভ কী?” পলিটব্যুরো থেকে বহিষ্কৃত ভি এস বারবার দলীয় শৃঙ্খলা নিয়ে প্রশ্ন তুলেও কেন আরও বড় শাস্তির মুখে পড়বেন না, বিজয়নের প্রশ্ন সেটাই। কেন্দ্রীয় কমিটি উল্টে রাজ্য নেতৃত্বের ঘাড়ে বন্দুক রাখায় রাজ্য সম্পাদক আরও ‘ক্ষুব্ধ’।
ছেড়ে দেওয়ার পাত্র অবশ্য ভি এস-ও নন! দল থেকে বহিষ্কৃত নেতা, অসুস্থ বার্লিন কুনহানন্দন নায়ারের বাড়িতে গিয়ে রাজ্য নেতৃত্বের রোষে পড়েছেন তিনি। কলকাতায় আসার আগে তিনি আবার পাল্টা বলে এসেছেন, শেষকৃত্য, বিয়ে বা অসুস্থ কাউকে দেখতে যাওয়ার সঙ্গে ‘রাজনীতি’ জড়ানো ঠিক নয়। খোদ বিজয়নের মেয়ের বিয়েতেই তাঁর সঙ্গে গিয়েছিলেন বহিষ্কৃত নেতা এম ভি রাঘবন এবং বিজেপি নেতা সি কে পদ্মনাভন। ভি এসের প্রশ্ন, যাঁরা এখন তাঁর সমালোচনা করছেন, তাঁরা ওই ঘটনাকে কী বলবেন! ভি এসের ঘনিষ্ঠ এক নেতা এ দিন বলেছেন, “উনি জানেন, ওঁর প্রতি দলীয় নেতৃত্বের মনোভাব কী! তাই আর কেন্দ্রীয় কমিটির শেষার্ধের জন্য অপেক্ষা করছেন না। ওঁর পক্ষে স্বস্তির কারণ, পালাক্কাডের মল্লমপুরা বিধানসভা কেন্দ্রে ভি এসের প্রতিদ্বন্দ্বী কংগ্রেস প্রার্থী লতিকা সুভাষ তাঁর বিরুদ্ধে যে মানহানির মামলা করেছিলেন, এ দিনই তা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।” অধুনা কেরলের বিরোধী দলনেতা ভি এস কলকাতায় উঠেছিলেন কিড স্ট্রিটের বিধায়ক আবাসে। ওই রাজ্যের বাকি নেতারা সল্টলেকের একটি হোটেলে। |
|
|
|
|
|