|
|
|
|
মন্ত্রিগোষ্ঠী গড়লেন মনমোহন |
শীলাকে নিয়ে চাপ বাড়াচ্ছে বিজেপি, বিপাকে কংগ্রেস |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
কমনওয়েলথ গেমস দুর্নীতি নিয়ে সিএজি রিপোর্টে দিল্লির শীলা দীক্ষিত সরকারের বিরুদ্ধে আঙুল ওঠায় নতুন করে সঙ্কটে পড়েছে কংগ্রেস।
সিএজি রিপোর্টের ভিত্তিতে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে শীলাকে সরানোর দাবি তুলেছে বিজেপি। সোমবার থেকে এই দাবিতে সংসদেও সরব হবে তারা। এমনিতেই সিএজি-রিপোর্টে প্রধানমন্ত্রীর দফতরের দিকে আঙুল ওঠায় তা নিয়ে ময়দানে নেমেছে বিজেপি। কংগ্রেসের সমস্যা হল, কর্নাটকে ইয়েদুরাপ্পার অপসারণের পরে বিজেপির দিকে পাল্টা আঙুল তুলতে পারছে না তারা।
সমস্যার শেষ এখানেই নয়। দুর্নীতির বিরুদ্ধে কড়া অবস্থান নিতে গিয়ে একের পর এক নেতাকে মুখ্যমন্ত্রী বা কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর পদ থেকে সরাতে গিয়ে দলের মধ্যেও সমস্যা তৈরি হচ্ছে।
সব মিলিয়ে উভয়সঙ্কটে কংগ্রেস।
পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে দল আপাতত শীলা দীক্ষিতের পক্ষে থাকারই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেই সঙ্গে তাঁর দফতরের দিকে ওঠা অভিযোগকে ভোঁতা করতে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী এ কে অ্যান্টনির নেতৃত্বে একটি মন্ত্রিগোষ্ঠী গঠন করেছেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ নিজেই। কমনওয়েলথ গেমস সংক্রান্ত যাবতীয় বেনিয়ম নিয়ে শুংলু কমিটির রিপোর্ট খতিয়ে দেখার পাশাপাশি ভবিষ্যতে কমনওয়েলথ গেমসের মতো আন্তর্জাতিক মাপের প্রতিযোগিতা বা অনুষ্ঠান আয়োজনের ক্ষেত্রে কী নীতি নেওয়া হবে, সে বিষয়েও সুপারিশ করবে ওই মন্ত্রিগোষ্ঠী।
কমনওয়েলথ দুর্নীতি নিয়ে সিএজি রিপোর্টের ভিত্তিতে কৌশল ঠিক করতে শনিবার কংগ্রেস কোর গ্রুপের বৈঠক বসে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে। সভানেত্রী সনিয়া গাঁধীর অসুস্থতার পরে এটাই ছিল কোর গ্রুপের প্রথম বৈঠক। সেখানেই ঠিক হয়, কোনও চাপেই শীলাকে ইস্তফা দিতে বলা হবে না। কারণ সিএজি-রিপোর্টকে শীলার বিরুদ্ধে প্রমাণ বলে ধরে নেওয়া যায় না। শীলা নিজেও আজ এ প্রসঙ্গে নিজের দায় এড়িয়েছেন। কংগ্রেস নেতাদের বক্তব্য, ইয়েদুরাপ্পার দুর্নীতির সঙ্গে শীলা প্রসঙ্গে সিএজি রিপোর্টের কোনও তুলনা হয় না। কারণ ইয়েদুরাপ্পার বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত স্তরে দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ উঠেছিল। শীলার ক্ষেত্রে তা হয়নি। তা ছাড়া শীলার নেতৃত্বেই কংগ্রেস দিল্লিতে টানা তিন বার ক্ষমতায় এসেছে। তাঁকে সরানোর অর্থ মানুষের রায়কে অগ্রাহ্য করা।
এ দিনের বৈঠক শেষে কংগ্রেস নেতা জনার্দন দ্বিবেদী বলেন, “বিরোধীরা কড়া শাস্তির দাবি তুলেছে। কিন্তু সিএজি রিপোর্ট বলছে, কিছু ক্ষেত্রে বেশি অর্থ খরচ হয়েছে, যা বাঁচানো যেত। এটা এমন কিছু বড় বিষয় নয়, যার সঙ্গে ইয়েদুরাপ্পা বা অন্য কারও তুলনা করা যায়।” এর আগে আদর্শ আবাসন মামলায় মহারাষ্ট্রের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অশোক চহ্বাণের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু সেই অপসারণ নিয়ে মহারাষ্ট্রে কংগ্রেসের অভ্যন্তরে সমস্যা হয়। দিল্লিতে তেমন পরিস্থিতি এড়াতে চাইছেন কংগ্রেস নেতৃত্ব।
বিজেপি কিন্তু বিষয়টি এত সহজে ছেড়ে দিতে নারাজ। শীলাকে কেন আড়াল করা হচ্ছে, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন তুলেছে তারা। দলের মুখপাত্র রাজীব প্রতাপ রুডি এ দিন বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে গঠিত শুংলু কমিটি এবং সিএজি-র রিপোর্টেই তো শীলার সরকারকে দায়ী করা হচ্ছে। তার পরেও কংগ্রেস কেন শীলাকে আড়াল করছে?” পিএমও-র ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলছে তারা। কারণ সিএজি-রিপোর্টে বলা হয়েছে, কয়েক জন মন্ত্রীর প্রবল আপত্তি সত্ত্বেও পিএমও-র সুপারিশেই গেমস পরিচালনার সর্বোচ্চ দায়িত্ব সুরেশ কলমডীকে দেওয়া হয়। প্রাক্তন সিএজি শুংলুর নেতৃত্বে প্রধানমন্ত্রী যে কমিটি গঠন করেছিলেন, তার রিপোর্ট খতিয়ে দেখতে অ্যান্টনির নেতৃত্বে মন্ত্রিগোষ্ঠী গঠিত হল এ দিন! মন্ত্রিগোষ্ঠীর বাকি সদস্যরা হলেন সলমন খুরশিদ, কপিল সিব্বল ও আনন্দ শর্মা। প্রধানমন্ত্রীর দফতরের প্রতিমন্ত্রী ভি নারায়ণস্বামীকেও এর আমন্ত্রিত সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে। তিন মাসের মধ্যে ওই মন্ত্রিগোষ্ঠীকে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।
বিজেপি অবশ্য পিছু হঠছে না।
কৌশল ঠিক করতে আগামিকাল বিজেপির সংসদীয় দলের নেতারা আলোচনায় বসছেন। আজ দলের দিল্লির নেতারা লালকৃষ্ণ আডবাণী, সুষমা স্বরাজ ও অরুণ জেটলির সঙ্গে দেখা করেন। স্থির হয়, সোমবার থেকে দল শীলার বিরুদ্ধে ত্রিমুখী আক্রমণে নামবে। এক, দিল্লি সচিবালয়ের সামনে শীলার অপসারণের দাবিতে আন্দোলনে নামবে। দুই, সংসদে শীলার অপসারণের দাবিতে সরব হবে। তিন, দিল্লির জেলায় জেলায় শীলার বিরুদ্ধে কর্মসূচি নেওয়া হবে। |
|
|
|
|
|