|
|
|
|
কৌশল নিয়ে আলোচনা আজ |
এখন সনিয়াকে আক্রমণ করা নিয়ে দ্বিধায় বিজেপি |
দিগন্ত বন্দ্যোপাধ্যায় • নয়াদিল্লি |
আরোগ্যের পথে তিনি। তবে এখনও বিদেশে চিকিৎসাধীন। তাঁর স্বাস্থ্য নিয়ে দেশ জুড়ে উৎকণ্ঠা। শুরু হয়ে গিয়েছে যজ্ঞ-প্রার্থনাও। শুধু রাজনীতিকরাই নন, তাঁর দ্রুত আরোগ্য কামনা করছেন সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ।
সনিয়া গাঁধীর প্রতি যখন এই রকম সহানুভূতির ঢল, তারই মধ্যে সরাসরি গাঁধী পরিবারের বিরুদ্ধে জমি দুর্নীতির অভিযোগ তোলা বা রাজনৈতিক আক্রমণ চালিয়ে যাওয়া ঠিক হবে কি না তা নিয়ে চিন্তায় পড়েছে বিজেপি। দলের কৌশল স্থির করতে আগামিকাল বৈঠকে বসছেন দলের শীর্ষ নেতারা। সুষমা স্বরাজ জানিয়েছেন, “বর্তমান পরিস্থিতিতে হরিয়ানার জমি বিতর্ক নিয়ে দলের কৌশল কী হবে, তা নিয়েও আলোচনা হবে এই বৈঠকে।”
সদ্যই এই জমি বিতর্কে সরাসরি গাঁধী পরিবারের বিরুদ্ধে আক্রমণের মোক্ষম সুযোগ হাতে পেয়েছেন বিজেপি নেতৃত্ব। দলের কৌশল ছিল, প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ ও তাঁর সরকারের দুর্নীতি ও স্বজনপোষণের নানা অভিযোগের বিরুদ্ধে সরব হওয়ার পাশাপাশি সনিয়া-রাহুলের বিরুদ্ধেও গর্জে ওঠা। কারণ, হরিয়ানায় রাজীব গাঁধী চ্যারিটেবল ট্রাস্টের জন্য যে বিতর্কিত জমি দেওয়া হয়েছে, তার পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছেন স্বয়ং সনিয়া-রাহুল ও প্রিয়ঙ্কা বঢরা। কিন্তু সনিয়াই এখন হাসপাতালে। রাহুল-প্রিয়ঙ্কাও ছুটে গিয়েছেন আমেরিকায়। এই পরিস্থিতিতে গাঁধী পরিবারকে, বিশেষ করে সনিয়াকে আক্রমণ করলে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার আশঙ্কা করছেন বিজেপি নেতৃত্বের একাংশ।
দলের এক শীর্ষ নেতা বলেন, “এই সময় তাঁকে রাজনৈতিক আক্রমণ করা সৌজন্যের পরিচয় নয়। তার উপর এই মুহূর্তে কংগ্রেস সভানেত্রীর প্রতি সহানুভূতিও রয়েছে। ফলে তাঁকে আক্রমণ করলে বিজেপি-কে রাজনৈতিক খেসারতও দিতে হতে পারে। এবং এই কারণেই রাজনাথ সিংহ কাল হরিয়ানার গ্রামে গিয়ে কৃষকদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন, জোর করে জমি নেওয়ার প্রতিবাদে পদযাত্রাও করেছেন, কিন্তু দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের পক্ষ থেকে তা নিয়ে কোনও মন্তব্য করা হয়নি। দু’দিন আগেও গাঁধী পরিবারের বিরুদ্ধে যে তীব্র আক্রমণ করা হয়েছে, গত কাল থেকে তা বন্ধ রাখা হয়েছে। আজ দলের মুখপাত্র রাজীব প্রতাপ রুডি এয়ার ইন্ডিয়ার সিএমডি নিয়োগ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে কাঠগড়ায় দাঁড় করালেও হরিয়ানার জমি বিতর্ক নিয়ে টুঁ শব্দটি করেননি।”
কিন্তু বিজেপি নেতৃত্বেরই অন্য একটা অংশের বক্তব্য, সনিয়ার পুরো সুস্থ হতে এখনও মাসখানেক সময় লাগবে। তত দিন এই প্রসঙ্গে নীরব থাকলে বিতর্কের হাওয়া বেরিয়ে যাবে। গাঁধী পরিবার নিয়ম ভেঙ্গে জমি আদায় করছে, এমন অভিযোগ সচরাচর পাওয়া যাবে না। ফলে এই পরিস্থিতিতে তিনটি কৌশল নেওয়া যেতে পারে। এক, সনিয়ার কিছুটা সুস্থ হয়ে ওঠা পর্যন্ত অপেক্ষা করে ফের আক্রমণ শুরু করা যেতে পারে। দুই, সনিয়াকে বাদ দিয়েই শুধু রাহুলকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো যেতে পারে। কারণ, রাহুলই উত্তরপ্রদেশের ভাট্টা পারসল গ্রামে গিয়ে জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে নিজেকে ‘হিরো’ হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। ফলে তাঁর দ্বিচারিতা রাজনৈতিক ভাবে তুলে ধরা যেতেই পারে। আর তৃতীয় পথ হল, সব কিছু ভুলে শুধু নীতির প্রশ্নে গাঁধী পরিবারকে আক্রমণ করে যাওয়া। এই সব সম্ভাব্য পথ নিয়েই কাল আলোচনা করবেন বিজেপি নেতারা।
তবে সনিয়াকে আক্রমণ নিয়ে দলে দ্বিধা থাকলেও শীলা দীক্ষিত ‘বধ’ ও প্রধানমন্ত্রীকে আরও ‘দুর্বল’ করা নিয়ে কোনও দ্বিমত নেই দলে। আজ বিজেপি-র সদর দফতরে সাংবাদিক বৈঠক করতে এসে দলের মুখপাত্র রুডি মুমূর্ষু এয়ার ইন্ডিয়ার সিএমডি পদে অরবিন্দ যাদবের নিয়োগ নিয়ে সরাসরি মনমোহন সিংহকে কাঠগড়ায় দাঁড় করান। তাঁর অভিযোগ, “এর আগে সিভিসি পদে পি জে টমাসের নিয়োগের পর তাঁকে ইস্তফা দিতে হয়, প্রধানমন্ত্রী কমনওয়েলথ গেমসের আয়োজক কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে সুরেশ কলমডীকে নিয়োগের পর তাঁকেও জেলে যেতে হয়েছে। এ বারে এয়ার ইন্ডিয়ার সিএমডি-র পদেও অযোগ্য অরবিন্দ যাদবকে কারসাজি করে নিয়োগ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। ২০০৮ সালেই অযোগ্য বলে এই অরবিন্দ যাদবকে ওই পদে নিয়োগের প্রস্তাব বাতিল করে দেওয়া হয়েছিল। অথচ তার এক বছরের মাথায় তাঁকেই আবার ফিরিয়ে আনা হয়।” বিজেপি-র অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রীর প্রাক্তন মুখ্য সচিব টি কে নায়ারের জোরাজুরিতেই প্রধানমন্ত্রী এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এ বারে তার জন্যও খেসারত দিতে হবে মনমোহনকে। |
|
|
|
|
|