|
|
|
|
স্পষ্ট সেই গাঁধী-ঘরানার ছাপ |
নিঃশব্দ উত্তরণের লক্ষ্য ২০১৪-ই |
জয়ন্ত ঘোষাল • নয়াদিল্লি |
একে বলা যেতে পারে, ‘নিঃশব্দ অভিষেক’।
মা সনিয়া গাঁধী যখন চিকিৎসার জন্য পাড়ি দিয়েছেন মার্কিন মুলুকে, ঠিক তখন দল পরিচালনার জন্য একটি ছোট্ট কমিটিতে রাহুল গাঁধীকে সদস্য করে গাঁধী পরিবার তাদের চিরাচরিত পদ্ধতিতে জানিয়ে দিল, আগামী দিনে কংগ্রেস রাজনীতির অন্যতম নির্ণায়ক শক্তি হতে চলেছেন রাজীব-তনয়।
এটা এক ধরনের নিঃশব্দ রাজনৈতিক উত্তরাধিকারের প্রক্রিয়া। লোকসভা নির্বাচন দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থায় গুণগত পরিবর্তন নিয়ে আসে। কিন্তু তার আড়াই বছর আগে এটা হল ধীর গতিতে সচেতন ভাবে রূপান্তরের পর্ব। কমিটিতে দশ নম্বর জনপথের ঘনিষ্ঠ অনুগামী, প্রতিরক্ষামন্ত্রী এ কে অ্যান্টনি আছেন। কিন্তু ইন্দিরা গাঁধীর স্নেহধন্য, দেশের অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায় নেই। আবার আহমেদ পটেল, জনার্দন দ্বিবেদী থাকলেও দিগ্বিজয় সিংহের অনুপস্থিতির মাধ্যমে সনিয়া বুঝিয়ে দিয়েছেন, অনুগত হয়েও অতিরিক্ত বল্গাহীন কথা বলার ফল ভাল হয় না।
ইউপিএ ২-এর আড়াই বছর অতিবাহিত। দিল্লির রাজ্যপাট শাসক কংগ্রেস দলের পক্ষে যে এখন অনুকূল নয়, তা দশ জনপথও বুঝতে পারছে। এক দিকে মূল্যবৃদ্ধি, অন্য দিকে দুর্নীতি নিয়ে সংসদ থেকে রাজপথ, সর্বত্রই মনমোহন সিংহ এক চূড়ান্ত প্রতিকূলতার শিকার। মন্ত্রিসভার রদবদলে বড় ঝাঁকুনি দিতে ব্যর্থ প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু থোড়-বড়ি-খাড়া আর খাড়া-বড়ি-থোড়ের কুশীলবদের নিয়ে ২০১৪ সালের নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়া যে কঠিন, সেটা সনিয়াও বুঝছেন। তা ছাড়া, লোকসভা নির্বাচনের আগে উত্তরপ্রদেশের ভোটও এক বড় অগ্নিপরীক্ষা। তার আগে লখনউ-সহ গোটা দেশে রাহুল গাঁধী নামক ব্রহ্মাস্ত্রটিকে পুরোপুরি না হলেও আংশিক ভাবে প্রয়োগ করার একটা সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
অস্ত্রোপচারের পরে ২৪ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণে রাখার পরে সনিয়াকে আইসিইউ থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তিনি ভাল আছেন। কংগ্রেস মুখপাত্র জনার্দন দ্বিবেদী আজ এ কথা জানিয়েছেন। আজই সনিয়ার দ্রুত আরোগ্য কামনা করেছেন অমিতাভ বচ্চন। তিনি বলেছেন, “আমরা সবাই চাই সনিয়াজি তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠুন। ঈশ্বরের কাছে ওঁর দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি।” তবে আরোগ্যের পথে অগ্রগতি হলেও এখন বেশ কিছু দিন সনিয়া অনুপস্থিত থাকবেন বলেই আজ জানিয়েছেন তাঁর রাজনৈতিক সচিব আহমেদ পটেল।
সনিয়ার চিকিৎসা শুরু হয়েছে প্রায় এক বছর আগে। তখন থেকেই রাহুলের অভিষেক নিয়ে পরিবারের ঘনিষ্ঠ মহলে আলোচনাও হয়েছে। কংগ্রেস সূত্র বলছে, গাঁধী পরিবার তাদের উত্তরাধিকারীদের রাজ্যাভিষেক এ ভাবেই বরাবর নিঃশব্দে ক্রমিক পদ্ধতিতে করে থাকে। ভুবনেশ্বরে কংগ্রেস অধিবেশনে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন জওহরলাল নেহরু। তাঁর স্ট্রোক হয়েছিল। তখন থেকেই নেহরু ইন্দিরাকে নিঃশব্দে দায়িত্বভার অর্পণ করতে শুরু করেছিলেন। নেহরুর সঙ্গে সর্বত্র যেতে শুরু করেছিলেন ইন্দিরা। আবার ইন্দিরা যখন সঞ্জয় গাঁধীকে রাজনীতিতে নিয়ে এসেছিলেন, তখনও এ ভাবেই ধাপে ধাপে এনেছিলেন। সঞ্জয়ের মৃত্যুর পর দলের সাধারণ সম্পাদক হিসেবেই রাজীব গাঁধীর অভিষেক ঘটিয়েছিলেন ইন্দিরা। সনিয়া খুব কাছ থেকে শাশুড়ির রাজনীতি দেখেছেন। ইউরোপীয় হয়েও গাঁধী পরিবারের এই রাজনীতির ঘরানাটা সনিয়া অসাধারণ ভাবে আত্মস্থ করতে সমর্থ হয়েছেন। তিনি নিজে প্রধানমন্ত্রী হননি। গাঁধী পরিবারের সদস্য না হয়েও দশ বছর রাজ্যপাটের রেকর্ড স্থাপন করতে চলেছেন মনমোহন সিংহ। এই অবস্থায় রাহুলকে ঠিক রাজীবের মতোই দলের সাধারণ সম্পাদক করেছেন সনিয়া। দলের নেতা অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি বলেন, “রাহুল গাঁধী হলেন একটা ব্র্যান্ড। আপনারা এখন এই ব্র্যান্ডের প্রোমো দেখছেন। এটাকে বলা যেতে পারে সফ্ট লঞ্চ। কিন্তু এই ব্র্যান্ড ভারতীয় বাজারে আনুষ্ঠানিক ভাবে আত্মপ্রকাশ করবে আরও কিছু দিন পর।”
কত দিন পর?
২০১৪ সালের আগে মনমোহনকে সরিয়ে রাহুল প্রধানমন্ত্রী হয়ে যাবেন আর মনমোহনকে রাষ্ট্রপতি করে দেওয়া হবে, রাজধানীতে এই রটনা যতই চাউর হোক না কেন, সনিয়া সেটা করবেন না বলেই মনে করেন তাঁর ঘনিষ্ঠ মহল। কিন্তু ২০১৪ সালের পর রাহুলই যে প্রধান কাণ্ডারী হবেন, সেই বার্তা জনগণের কাছে
পৌঁছে না দিলে নতুন প্রজন্ম (যারা ভোটার হিসেবে শতকরা ৫০ ভাগেরও বেশি) আন্দোলিত হবে কী ভাবে? ২৪ নম্বর আকবর রোডের কংগ্রেস
নেতারা আরও বলছেন, গাঁধী পরিবারই বারবার কংগ্রেসের প্রধান পরিত্রাতা হয়ে দেখা দিয়েছে। মনমোহন সিংহের মন্ত্রিসভার আমির-ওমরাহদের অন্তর্দ্বন্দ্ব, সমন্বয়হীনতা, ভেঙে যাওয়া মনোবলের দৃশ্যপটকে সম্পূর্ণ বদলে দিতে পারে রাহুলের আরও সক্রিয় হয়ে, শুধু ছাত্র-যুব সংগঠন নয়, সার্বিক প্রশাসনের ছায়া-কাণ্ডারী হয়ে ওঠা।
মা এখনই ফিরবেন না। চিকিৎসা চলবে সম্ভবত আরও দু’সপ্তাহ। কিন্তু ছেলে ফিরে আসছেন। সাউথ ব্লকের এক রাজকর্মচারীর মন্তব্য, “এ তো আগমন নয়, আবির্ভাব।” |
|
|
|
|
|