আপনার কলমে


ইতিহাস ও স্বপ্ন মেশানো কানকুন
রিমা বন্দ্যোপাধ্যায়
(কানকুন, মেক্সিকো)
মে মাসের প্রথম সপ্তাহ। কানকুন বেড়াতে গিয়েছি শুভ্রনীল ও আমি। সফর সঙ্গী আরও দু’জন, সুবীরদা ও রূপক। ওঁরা শুভ্রনীলের সহকর্মী। কানকুন মেক্সিকোর সব থেকে জনপ্রিয় ট্যুরিস্ট স্পট। পৃথিবীর অন্যতম সেরা সমুদ্র সৈকত এখানেই, যেখানে জলের রং প্রজাপতির মতো পাখা মেলে আপন সৌন্দর্যে মাতিয়ে দেয় চারপাশকে। এক অজানা অনুভূতির সঙ্গে এ জলে মিশে আছে স্বপ্নের নীল রং— কোথাও হাল্কা নীল, কোথাও গাঢ় নীল, কোথাও বা হাল্কা সবুজ। আর অসাধারণ রঙের এই সমন্বয় বিছিয়ে রয়েছে ধবধবে সাদা নরম বালির আস্তরণে। নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস করতাম না কখনও!

সপ্তাহ শেষে, এক শুক্রবার মেক্সিকো থেকে রওনা দিয়েছিলাম দুপুর দু’টোয়। ট্যাক্সি নিয়ে সোজা টুলকা বিমানবন্দর। চারটে পঁচিশের ভোলারিসগামী উড়ানে স্বপ্নের সমুদ্র-নীল দেশে নামলাম। শান্ত ও সাজানো গোছানো বিমানবন্দর আমাদের মন ভরিয়ে দিল। লাউঞ্জ থেকে বেরোতেই পর্যটন সংস্থার পক্ষ থেকে স্বাগত জানিয়ে এগিয়ে এলেন গাইড ভদ্রলোক। এখানকার সব কিছুই ভীষণ পরিশীলিত এবং আন্তরিকতায় ভরা। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত গাড়িতে বসে শহরটাকে একটু একটু অনুভব করে পৌঁছলাম হোটেলে। রাস্তার এক দিকে লেগুন আর অন্য দিকে রয়েছে ছোটবড় নানা ধরনের হোটেল। যাত্রাপথের পুরোটাই চোখে মায়ার মতো লেগে রইল। অসম্ভব সুন্দর পরিষ্কার রাস্তা, দু’পাশে সবুজ ঘাসের জমি আর তার মধ্যে নারকেল গাছের সারি। মনে হয়, কেউ যেন যত্ন করে, সময় নিয়ে, ধৈর্য ধরে, একটু একটু করে সাজিয়েছে এই শহরটাকে— শুধু আমরা আসব বলে!
হোটেলের ঘর পেরিয়ে বারান্দা, সেখান থেকে দেখা যাচ্ছে সেই মিষ্টি লেগুন, যার জলে এখনও লেগে রয়েছে অস্ত যাওয়া সূর্যের শেষ রং। এ দৃশ্য দেখেই বোঝা যাচ্ছিল আরও কত সব অজানা ছবি আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে এই সফরে! একটুও সময় যাতে নষ্ট না হয়, সে জন্য রাত আটটা নাগাদ ঘর থেকে বেরিয়ে রিসেপশন থেকে পরের দিনের ঘোরার প্যাকেজ ‘বুক’ করলাম। ঠিক হল শুভ্রনীল ও আমি যাব স্কারেট। আর সুবীরদা ও রূপক যাবে পৃথিবীর নতুন ‘ওয়ান্ডার্স অফ দ্য ওয়ার্ল্ড’-এর মধ্যে একটি চিচেন ইত্জায়— এক আশ্চর্যতম পিরামিড দেখতে। স্কারেট-এর জন্য খরচ জন প্রতি ১৫৫০ পেসো আর চিচেন ইত্জার জন্য ৭৫০ পেসো। ১ পেসো মানে ভারতীয় টাকায় প্রায় সাড়ে ৩ টাকা। এ সব করতে করতেই অনেক রাত হয়ে গেল।

হোটেলের বিরাট স্যুইমিং পুল যেখানটায় শেষ হয়েছে, সেখান থেকে শুরু হয়েছে সাগর ও তার রঙের মেলা। পাশেই নানা ধরনের লোভনীয় খাবারের রেস্তোরাঁ। সমুদ্রের ডাকে সাড়া দিয়ে পেটপুজো শেষ করেই দৌড়লাম। এই হোটেলের নিজস্ব সৈকত রয়েছে। সেখানে রাখা ‘বাথ চেয়ার’-এ ক্লান্ত শরীরটাকে বিছিয়ে দিয়ে চোখ রাখলাম আকাশের দিকে। আকাশকে এত সুন্দর আগে কখনও লাগেনি! তারাদের ঝিকিমিকি দেখে মনে হল, কত দিন ধরে ওরা সেজেগুজে বসে আছে শুধু আমারই জন্য!

কানকুন মেক্সিকোতে হলেও, এখানে মার্কিন ডলারেরই চল বেশি। কোনও কিছু কিনতে গেলে বিক্রেতারা দাম আগে মার্কিন ডলারে বলেন, পরে পেসোতে ‘কনভার্ট’ করেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রচুর পর্যটক আসেন বলেই এই রীতি। বেশ কয়েক জন মার্কিন ছেলেমেয়ে গিটার বাজিয়ে স্যুইমিং পুলের ধারে নাচগান করছে। একটি গ্রুপ আবার বল খেলছে পুলের জলে। খানিক ক্ষণ ঠান্ডা হাওয়াতে গা বিছিয়ে গল্প করে ঘরে ফেরার জন্য উঠে পড়লাম। ওই রকম মায়াবী রাতে সমুদ্র ও আকাশকে ছেড়ে যাওয়ার ইচ্ছে না থাকলেও, উঠতেই হল। সকালেই তো আবার বেরোতে হবে!

পর দিন শনিবার। সকালবেলা উঠে, স্নান সেরে, হোটেলেই জলখাবার খেয়ে নিলাম। আটটা বাজার আগেই ‘বেস্ট ডে ট্যুরিজম’-এর লাক্সারি বাস এসে হাজির। গাইডও প্রস্তুত, স্কারেটের দ্রষ্টব্য স্থানগুলি রাস্তা দিয়ে যেতে যেতে ইংরেজি ও স্প্যানিসে বুঝিয়ে দিলেন তিনি।

বাস থেকে নামলাম— আমাদের সকলের হাতে মানচিত্র, ফ্রি লাঞ্চ কুপন, তোয়ালে, লকারের কুপন। ডিজনিল্যান্ডের সঙ্গে স্কারেটের তুলনা করা যেতে পারে। মানচিত্র দেখে ঠিক করলাম, প্রথমেই যাব ম্যাকাওদের সঙ্গে ভাব জমাতে। বেশি ক্ষণ অপেক্ষা করতে হল না। সারা রাস্তায় অসংখ্য ম্যাকাও তাদের রঙিন পাখা দিয়ে ইশারায় দেখিয়ে দিচ্ছে ওদের বাড়ি যাওয়ার পথ। সারা জীবনে এমন রঙিন আর এত ধরনের ম্যাকাও আগে কখনও আমি দেখিনি! আর সব থেকে মজার, এরা সবাই স্বাধীন! যখন খুশি, যেখানে খুশি, উড়ে যেতে পারে, খেলা করতে পারে, ভালবাসতে পারে! তবে, উড়তে পারলেও এই মায়াবী পুরী ছেড়ে ওদের দূরে যাওয়ার ইচ্ছে নেই নিশ্চয়ই! এখানেই খেলা করে সময় কাটায় যে সব সময়। দেখে মনে হয়, ভগবান যেন আপন মনে নানা রঙের তুলির টানে রাঙিয়ে দিয়েছেন ওদের সারা শরীর!
অনেক ছবি তুললাম ম্যাকাওদের সঙ্গে। আমাদের পেয়ে ওরাও খেলায় মেতেছে। খেলাধুলো শেষে আমরা পৌঁছলাম মেইন প্লাজাতে। সেখানে বিভিন্ন দোকানপাট ঘুরতে লাগলাম, আর শুভ্রনীল সেই ফাঁকে গেল ওয়াটার ট্রেকের অগ্রিম টিকিট কাটতে। ১৫ ফুট জলের নীচে নেমে হাঁটব, রঙিন মাছেদের সঙ্গে ভাব জমাব— ভাবা যায়! এই আনন্দের মূল্য দু’জনের জন্য প্রায় ২২০০ পেসো। ওয়াটার ট্রেকে যাওয়ার রাস্তায় চিতাবাঘের সঙ্গে বাদুড়দের গুহা ও প্রজাপতিদের সাম্রাজ্যের দেখাও পেলাম। লক্ষ কোটি প্রজাপতি সেখানে বসে আছে!

স্বপ্নের দুনিয়ায় হাঁটতে হাঁটতে পৌঁছলাম ওয়াটার ট্রেকের নির্দিষ্ট জায়গায়। জামা কাপড় বদলে, মাথায় অক্সিজেন সরবরাহকারী মস্ত বড় হেলমেট পরে জলে নামার সিঁড়িতে পা রাখলাম। ঠান্ডা জল, গরমের সব ক্লান্তি এক নিমেষে মুছে দিল। সেই জলই আবার আমাদের আপন করে ডুবিয়ে নিয়ে গেল ১৫ ফুট নীচে। চারিদিকে নানা রঙের মাছ। আমাদের দেখা পাওয়া মাত্র হুটোপাটি করে ঘুরতে শুরু করেছে মনের সুখে। আধ ঘণ্টা জলের নীচে থাকার পর গাইডের নির্দেশ এল— সময় শেষ, এ বার জল থেকে ওঠার পালা। উপরে এসে, স্নান করার পর অনুভব করলাম, প্রচণ্ড খিদে পেয়েছে! পেটে কিছু না দিয়ে আর ঘোরা সম্ভব নয়!

অনেক রকমের রেস্তোরাঁ রয়েছে এখানে— আন্তর্জাতিক, মেক্সিকান, ক্যারিবিয়ান ইত্যাদি। দু’জনে ঠিক করলাম, আজ সি ফুডের রাজ্যে যাব। এক পাশে মেক্সিকোর রোম্যান্টিক গান গাইছে মিরাচি ব্যান্ড। আর সামনে সুদূর প্রসারিত সমুদ্র! ‘লাঞ্চ বক্স’-এ নানা ধরনের প্রায় একশো রকমের খাবার, তার মধ্যে বেশির ভাগই বাঙালির অতি আদরের মাছের পদ। প্রথমেই নিলাম হিবিসকাসের ঠান্ডা শরবত। আর দুপুরের খাবারে রকমারি মাছ ভাজা, চিকেন ভাজা, অ্যারোজ (ভাত)। সব শেষে মিষ্টি মুখ করে উঠে পড়লাম। এখনও অনেক কিছু দেখা বাকি যে!

সারা দিন চুটিয়ে ঘুরে বেড়ালাম, এ দিক থেকে সে দিক। সব শেষে এলাম মায়া গ্রামে— কোন সে প্রাচীন কালের মায়া সভ্যতা, আমাদের পৌঁছে দিল ইতিহাসের পাতায়!

স্কারেটের শেষ দ্রষ্টব্য ‘নাইট শো’— মায়া জগত্ থেকে শুরু করে আজকের আধুনিক সমাজের উত্থান-কাহিনি এই অনুষ্ঠানে পরিবেশিত হয়। বিশাল গোল গ্যালারিতে সিমেন্টে তৈরি বসার ব্যবস্থা। গ্যালারিতে রাতের খাবারের আয়োজনও আছে, তবে তার জন্য জনপ্রতি অতিরিক্ত ৩৫ মার্কিন ডলার লাগে। ‘শো’ শুরু হল। গ্যালারির চার দিক থেকে নানা রকমের মুখোশ পরা মেয়েরা এসে ঠিক পুজো মণ্ডপে ধুনো দেওয়ার মতো ঘুরে ঘুরে সুগন্ধি ধোঁয়ায় ভরিয়ে দিল। দর্শকদের প্রত্যেকের হাতে ধরিয়ে দেওয়া হল মোমবাতি। চারিদিকে অন্ধকার ভেদ করে অসংখ্য মোমবাতি ঝলমল করে উঠল, বেজে উঠল বাজনা, জ্বলল আরও হাজারো আলো। ‘নাইট শো’তে আড়াইশো জনেরও বেশি অংশগ্রহণকারী দর্শকদের হৃদয় জয় করে ফেলল খুব সহজেই।
গ্যালারির প্রবেশপথ মায়া জগত্ থেকে আজকের আধুনিক সমাজের উত্থান-কাহিনি সমৃদ্ধ ‘নাইট শো’ গ্যালারিতে কাচের নকশা
অনুষ্ঠান শুরু হল ছোট্ট একটি বাচ্চা মেয়ের গানের কলি দিয়ে। সে গানে আমরা পৌঁছে যাই, ইতিহাসের পাতা উল্টে পুরনো দিনের জনজীবনে! অবাক হয়ে দেখতে থাকলাম অনুষ্ঠান! অসাধারণ লাগল, প্রাচীন দিনের মতো কোমর দিয়ে মায়া-সমাজের বল খেলার অংশটুকু। শুধুমাত্র কোমর দিয়ে দু’ দল বল খেলল, সবার হাত পেছন থেকে বাঁধা। প্রাচীন সময়ে খেলা শেষে ‘মাথা’ কেটে উপহার দেওয়া হত ঈশ্বরকে। যদিও এই খেলার শেষে মাথা কাটাটা আর দেখিনি। পরের খেলাটাও বেশ অন্য রকম— আগুনের বল (আরহুক্কুয়া) নিয়ে খেলা। অনেকটা হকি খেলার মতো। তবে এ ক্ষেত্রে বলটা আগুনের গোলা আর খেলোয়াড়দের কারও পায়ে জুতো নেই!

আস্তে আস্তে শিল্পীরা গাইলেন পুরনোকে ছেড়ে নতুনকে আহ্বানের গান। অভিনয় করে দেখালেন কী ভাবে একটু একটু করে, কত যত্ন নিয়ে ওঁরা আজকের এই জগতে পৌঁছেছেন, সেই কাহিনি। একে একে মেক্সিকোর সব রাজ্যের নাচগান প্রদর্শিত হল। সব থেকে ভাল লাগল, মেক্সিকোর ইউকাতান প্রদেশের ‘ডাঞ্জা ডি লস ভিয়েজিতস’ (ওল্ড মেন ডান্স)।

অনুষ্ঠান তখন প্রায় শেষের দিকে! হঠাত্ চার দিকের আলো নিভে গেল। শুধু দেখা যাচ্ছে, বিরাট উঁচু একটা স্তম্ভ আর তার মাথায় বসে চার জন মানুষ বাজনা বাজাচ্ছে। প্রত্যেকের কোমর দড়ি দিয়ে বাঁধা। বাজনা বাজানো শেষে, ওই উঁচু স্তম্ভ থেকে কেমন ভাবে যেন লাট্টুর মতো ঘুরতে ঘুরতে নীচে নেমে এলেন সবাই। হাঁ করে বসে রইলাম ওদের খেলা দেখে! ঘোর কাটল কিছু ক্ষণ পর, সবার হাততালিতে। ওমা, কোথা থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে সেই সকালের
জঙ্গলের পথে প্রাচীন
সাজে ‘মায়ান মানুষ’।
রঙিন ম্যাকাওগুলো উড়ে এল! যুদ্ধ শেষে যেন জয়ধ্বনি দিচ্ছে!

অনুষ্ঠান শেষে, ক্লান্ত শরীরে, বাসে উঠে, কখন যে পৌঁছে গেলাম হোটেলে, কিছু টেরই পেলাম না! পৌঁছে দেখি, আমাদের বন্ধুরা অপেক্ষা করছেন। ওঁদের দেখে কোথায় যেন পালিয়ে গেল ঘুম। ভ্রমণসূচি নিয়ে আলোচনায় বসে গেলাম। ঠিক হল, পরের দিন গাড়ি ভাড়া করে ঘুরতে যাব। পর দিন সকাল আটটার সময় গাড়ি বলা হল। তবে কানকুন ঘুরতে গিয়ে আমার মনে হয়েছে, নিজে গাড়ি চালাতে পারলে এই জায়গাটা বেড়িয়ে আরও মজা পাওয়া যাবে। রাস্তা এত্ত ফাঁকা আর সুন্দর যে, বলার না! ‘রোড ম্যাপ’ দেওয়া আছে সর্বত্র। আর শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত গাড়ির ভাড়া বেশ কম এখানে। তবে সে মজা পেতে শুধু দরকার বৈধ আন্তর্জাতিক লাইসেন্স এবং ক্রেডিট কার্ড।

সকালে উঠে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। ‘ড্রাইভারজি’ বেশ হাসিখুশি মানুষ। আর তার চেয়ে বড় কথা, ভাল ইংরেজি বলতে পারেন। রাস্তায় ম্যাকডোনাল্ড থেকে সকালের জলখাবার নিয়ে নেওয়া হল। আমরা প্রথমে পৌঁছলাম ঐতিহাসিক স্থান টুলুম-এ। ইতিহাসকে সাক্ষী রেখে এখানে দাঁড়িয়ে আছে ঐতিহ্যের কাঠামো। গাড়ি রেখে অনেকটা টয় ট্রেনের মতো দেখতে এক রকমের গাড়ি করে ভগ্নাবশেষের কাছে পৌঁছলাম। মে মাসের রোদ্দুর এ বার মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে মনে হচ্ছে। প্রচণ্ড তেজ তার। প্রাচীন মায়া ইতিহাসকে বহন করে টুলুম এখনও দাঁড়িয়ে রয়েছে। বহু দিনের ঘনিষ্ঠ বন্ধুর মতো পাশাপাশি অবস্থান করছে সমুদ্র আর ঐতিহ্যের ভগ্নাবশেষ। এর ঠিক পূর্ব দিকে রয়েছে কেম্যান দ্বীপপুঞ্জ, কিউবা আর জামাইকা। দু’চার কথায় টুলুমকে বর্ণনা করা যায় না! এখানে ঐতিহ্য সমুদ্রকে যেন নীরবে জানাচ্ছে তার জীবন-কথা, আর সমুদ্র তার ঠান্ডা জলের ঝাপটায় দূর করছে ভগ্নাবশেষের সকল ক্লান্তি।
মায়া সভ্যতার মানুষদের যাপন-দৃশ্যের উপস্থাপন
টুলুম দেখে ফেরার পথে দুপুরের খাওয়া সারলাম চিনা রেস্তোরাঁয়। তার পর গাড়ি নিয়ে ছুটলাম প্লায়া ডি কারমেনের দিকে। ছোট্ট সাজানো গোছানো জায়গা। এক কথায় অসাধারণ! সমুদ্র সৈকত জুড়ে সারি সারি হোটেল। আর জলের রঙ? প্রকৃতি যেন কয়েক শো বছর ধরে ভেবেচিন্তে রং-তুলি দিয়ে সাজিয়েছে আপন মনে। নরম বালিতে খালি পায়ে দাঁড়ালে অদ্ভুত এক আরাম লাগে পায়ের তলায়। চার দিকে ধবধবে সাদা নরম বালি। বালি, নাকি পাউডার! অনুভূতিতে ধাঁধা লেগে যায়!

ফেরির টিকিট কেটে এ বার চললাম কজুমেলের দিকে। কজুমেলের সৌন্দর্য ও সেজে ওঠা দেখে একে শহর বলে ভ্রম হয়, আসলে সে একটা দ্বীপপুঞ্জ। ৫০০ পেসো দিয়ে গাড়ি ভাড়া করলাম আধ ঘণ্টার জন্য। এ গাড়ির চালকও দারুণ ভাল ইংরেজি জানেন। তার মুখে নানা গল্প শুনতে শুনতে পৌঁছলাম পুন্ত মারিনা সৈকতে। মিষ্টি সবুজ রঙের ঢেউ ধাক্কা খাচ্ছে বালি আর পাথরের গায়ে। এখানেও গাড়ি বা বাইক পাওয়া যায় খুব সস্তায়, সৈকতে নিজে ‘ড্রাইভ’ করলে ভারী মজা লাগবে। সময় থাকলে সারা দিন ধরে ঘুরে বেড়িয়ে, যেখানে খুশি গাড়ি দাঁড় করিয়ে, সৈকতে নেমে পড়লেই হল! থাকা খাওয়ারও কোনও চিন্তা নেই। নানা দামের হোটেল, রেস্তোরাঁ, দোকান বাজার— ভরপুর ট্যুরিস্ট স্পট!

তাড়াহুড়ো করে এলাম ঘাটে। ফেরি ছাড়তে আর বেশি সময় নেই। ফিরলাম প্লায়া ডি কারমেন-এ। এখানকার সব থেকে মজার জায়গা পাঁচ নম্বর অ্যাভিনিউ। রাস্তা জুড়ে দোকানিরা পসরা সাজিয়ে বসে আছেন। আলো দিয়ে সাজানো রোম্যান্টিক রাস্তা। পর্যটকদের মনের মতো জায়গা। তবে জিনিসপত্রের দাম বড্ড বেশি।

দিন শেষে ফিরে এলাম হোটেলে। আসার পথে রাস্তায় ভারতীয় রেস্তোরাঁ ‘তাজ মহল’-এ রাতের খাওয়া সারলাম। পর দিন সকাল এগারোটার উড়ানে সাগরের মায়া কাটিয়ে ফের মেক্সিকোয় ফিরতে হবে ভেবেই মনটা খারাপ হয়ে এল!

ছবি: লেখক
চাকরি সূত্রে আপাতত মেক্সিকোর বাসিন্দা। লেক গার্ডেন্স-এর মেয়ে আর শ্বশুরবাড়ি ফুলবাগানে। পড়াশোনার বেশির ভাগই বেঙ্গালুরুতে। দেশ-বিদেশ ঘুরে বেড়ানোর অভ্যাস ছোটবেলা থেকে। কয়েক মাস কোথাও না গেলে কেমন যেন দম বন্ধ লাগে! ফুলের বাগান ও শপিং করার পাশাপাশি বেড়ানোর ভাল লাগা মুহূর্তগুলো কাগজ-বন্দি করতেও দারুণ লাগে। ভাল লাগে বন্ধুদের সঙ্গে হৈ হুল্লোড় করতেও।

রোজের আনন্দবাজারএ বারের সংখ্যাসংবাদের হাওয়াবদলআপনার রান্নাঘরস্বাদবদল চিঠিপুরনো সংস্করণ