২৮ আশ্বিন ১৪১৮ শনিবার ১৫ অক্টোবর ২০১১


সংবাদের পরিভাষায় যাকে ‘হার্ড নিউজ’ বলে তার বাইরেও বিস্তৃত খবর-রাশি প্রতিনিয়ত গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়।
আর সেই পাহাড়-প্রমাণ খবরের খনি থেকে কিছু বিষয় ভিত্তিক সংবাদকে বেছে নিয়ে আমরা সাজিয়েছি ‘সংবাদের হাওয়াবদল’।
সরাসরি বেড়ানোর কথা না-বললেও এইসমস্ত খবর আসলে হাওয়াবদলকে কেন্দ্র করেই। সংবাদের মোড়কে পর্যটন,
চমকে দেওয়া না-জানা তথ্য, জীবজগতের পাশাপাশি পার্বণ, প্রত্নতত্ত্ব সবমিলিয়ে এক অন্য খবরের জগৎ।
ঐতিহ্য
• শেষবারের মতো ‘বুল ফাইটিং’ বাসের্লোনায়
ঐতিহ্যের অবসান! কেন না বার্সেলোনায় শেষ বারের মতো অনুষ্ঠিত হল ‘বুল ফাইটিং’। মরশুমের শেষ ‘খেলা’ই হয়ে উঠল ‘অন্তিম’ খেলা। দীর্ঘদিন ধরেই চলছিল আন্দোলন, পাল্টা-আন্দোলন। যুক্তি পাল্টা-যুক্তির ঘেরাটোপ থেকে বেরিয়ে এসেছিল শেষ পর্যন্ত ‘নিষেধাজ্ঞা’র নির্দেশ। আইন মেনে এই ঐতিহ্যবাহী ‘খেলা’র শেষবারের মতো সাক্ষী থাকল এ বার বার্সেলোনার মনুমেন্টাল এরিনা।দুর্ঘটনায় প্রাণ হারাতে হয় বলে এক দিকে মানবতাবাদীরা, অন্য দিকে প্রাণীটিকে হত্যা করা হয় বলে পশুপ্রেমীরাও সরব হয়ে উঠেছিলেন। সে জন্য দাবি উঠেছিল রাষ্ট্রীয়ভাবে ‘খেলা’টিকে নিষিদ্ধ করার। ১ লাখ ৮০ হাজার নাগরিকের স্বাক্ষরিত আবেদনপত্রে সাড়া দিয়ে কাতালান ও বার্সেলোনা-সহ অনেক স্বশাসিত অঞ্চলে খেলাটি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল গত বছরেই। তবে কাজটা সহজে হয়নি। কেন না বিষয়টি নিস্পত্তির জন্য স্পেনের পার্লামেন্টে ভোটাভুটি পর্যন্ত করতে হয়েছে। আগামী ১ জানুয়ারি থেকে এই নিধেধাজ্ঞা জারি হতে চলেছে স্পেনের দক্ষিণ-পূর্বের কাতালোনীয় অঞ্চলে। ফলে সেপ্টেম্বরের শেষ রবিবার এই মরশুমের শেষ ‘বুল ফাইটিং’-এর সঙ্গে সঙ্গেই শেষ হল প্রাচীন এই ঐতিহ্যের। বার্সেলোনার মনুমেন্টাল এরিনায় প্রায় ২০ হাজার দর্শকের সামনে শীর্ষস্থানীয় ম্যাটাডোরেরা লড়লেন। যার মধ্যে ছিলেন কিংবদন্তী ‘বুল ফাইটার’ হোসে টমাস। ঐতিহ্য অবসানের সাক্ষী থাকলেন স্পেনের বহু মানুষ। আসলে এই লড়াই ঘিরে উত্তেজনার পারদ চড়ছিল অনেকদিন ধরেই। প্রায় পাঁচ গুণ বেশি দামে টিকিট নিঃশেষিত হতে সময় লাগেনি। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে জয়ী হল দেশের বহু পশুপ্রেমীদের দীর্ঘদিনের লড়াই। তাঁদের আশা অদূর ভবিয্যতে বুল ফাইটিং-এর উপর স্পেন জুড়ে নিষেধাজ্ঞা জারি হবে। যদিও তা হওয়া বেশ সহজ নয়। কারণ বহু স্পেনীয়র মতে, বুল ফাইটিং কেবলমাত্র খেলা নয় এটি একটি প্রাচীন ‘শিল্প’, যা সংরক্ষণের প্রয়োজন।

• এঙ্গেলসের ‘কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টো’ আবার পার্টির হাতে
গত ৩১ অগস্ট জার্মানির সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি ফিরে পেল কিছু ‘অমূল্য সম্পদ’। পার্টির প্রায় ৭০টি বই ফিরে এল তাদের সংগ্রহে। বার্লিনের মধ্য ও আঞ্চলিক গ্রন্থাগার নাৎসিদের চুরি করা এই বইগুলি ফেরতের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল আগেই। এর মধ্যে রয়েছে ইংরেজিতে অনূদিত ‘কমিউনিস্ট মেনিফেস্টো’-র একটি সংস্করণ। মনে করা হচ্ছে ১৮৮৩-র এই বইটি স্বয়ং ফ্রেদরিক এঙ্গেলসের নিজস্ব সংগ্রহের। প্রসঙ্গত, ১৮৪৮ সালে কার্ল মার্কসের সঙ্গে যৌথভাবে ‘কমিউনিস্ট মেনিফেস্টো’ লিখেছিলেন এঙ্গেলস। বার্লিন গ্রন্থাগারের ডঃ অ্যানেট জারল্যাখ জানিয়েছেন, “তাঁদের গ্রন্থাগারের ২০ লাখ বইয়ের মধ্যে এ ধরনের আরও বইয়ের খোঁজে একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। ফলে ইতিমধ্যেই ১০টি বই ও ৩টি সাময়িক পত্রের খণ্ডিত সমগ্র তুলে দেওয়া হয়েছে দেশের ইহুদিদের।

• আর্থার কন্যান ডয়্যালের অপ্রকাশিত প্রথম উপন্যাস এ বার বাজারে
আর্থার কন্যান ডয়্যালের ভক্তদের জন্য সুখবর! গত ২৭ সেপ্টেম্বরে বই বাজারে এল কন্যান ডয়্যালের এত দিন অপ্রকাশিত প্রথম উপন্যাস ‘দ্য ন্যারেটিভ অফ জন স্মিথ’। গাউটে আক্রান্ত ঘরবন্দি এক ভদ্রলোককে নিয়ে এই উপন্যাসটি শেষ করে ডাকযোগে প্রকাশকের উদ্দেশ্যে পাঠিয়েছিলেন ডয়্যাল। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে তা মাঝপথেই সেটি হারিয়ে যায়। ১৮৮৩ থেকে ’৮৪-র মধ্যে লেখা এই উপন্যাসটি ফের স্মৃতি থেকে লেখেন ডয়্যাল। ২০০৭ থেকে সেটিই রয়েছে ব্রিটিশ গ্রন্থাগারের সংগ্রহে। ‘কন্যান ডয়্যাল লিটারারি এস্টেট’-এর অনুমতিক্রমে সম্প্রতি এই উপন্যাস প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত নেয় ব্রিটিশ গ্রন্থাগার। এ ছাড়া অভিনেতা রবার্ট লিন্ডসের স্বরে ‘অডিওবুক’ হিসেবেও প্রকাশ পাবে ‘দ্য ন্যারেটিভ অফ জন স্মিথ’। চারটি নোটবই সমেত এই পাণ্ডুলিপিটি আগামী ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত রাখা থাকবে গ্রন্থাগারের প্রদর্শনীতে।
প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কার
• কেনিয়াতে মিলল ‘প্রস্তরযুগের’ হাতিয়ার
দক্ষিণ-পশ্চিম কেনিয়ার তুরকানা হ্রদের কাছে পৃথিবীর প্রাচীনতম পাথরের হাতিয়ারের সন্ধান পেয়েছেন প্রত্নতাত্ত্বিকেরা। অশ্রু ফোঁটার মতো দেখতে এই হাতিয়ার হাত-কুড়ুলটির বয়স প্রায় ১.৭৬ কোটি বছর। কাঠ কাটা থেকে মাংস কুচানো বিভিন্ন কাজে এটি ব্যবহৃত হত বলে অনুমান। প্রস্তরযুগে এই অস্ত্রের উপযোগিতার কথা ভেবে বিজ্ঞানীরা একে ‘সুইস আর্মি নাইফ’ বলে উল্লেখ করেছেন। বিজ্ঞানীদের ধারণা, এই অস্ত্রের নির্মাতা প্রধানত আধুনিক মানুষ হোমো স্যাপিয়েন্সের উত্তরপ্রজাতি হোমো ইরেক্টাস। প্রস্তরযুগের এই জীবের ছিল বৃহৎ-মস্তিষ্ক। তারা ছিল চতুর ও অত্যন্ত কর্মনিপুণ। প্রধানত এশিয়া ও আফ্রিকার বিভিন্ন অঞ্চলে এদের অস্তিত্বের প্রমান পাওয়া গেছে। অনেকের ধারণা, অভিব্যক্তির নিরিখে আধুনিক মানুষের সঙ্গে এই প্রজাতির যোগসূত্র আছে।
প্যালিওলিথিক যুগের পাথরের হাতিয়ারকে আকৃতি ও প্রকৃতিগত ভাবে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়েছে এই বিশেষ ধরনটিকে নৃতত্ত্ববিদেরা ‘অ্যাকিউলিয়ান টেকনোলজি’ বলে উল্লেখ করেছেন। এই ধরনের অস্ত্রগুলি ‘অল্ডওয়ান টেকনোলজি’র তুলনায় অনেক বেশি বড় ও ভারী। ‘অল্ডওয়ান টেকনোলজি’তে উল্লিখিত অস্ত্রগুলির নির্মাতা আদিম মানুষ হোমো হ্যাবিলিস। ‘অ্যাকিউলিয়ান’ হাত-কুড়ুলগুলি মজবুত ও সংগঠিত, এদের কিনারাগুলিতে বৈশিষ্ট্যপূর্ণ খাঁজ আছে। এই হাতিয়ারগুলি দেখে প্রাচীন হোমো ইরেক্টাস প্রজাতির তীক্ষ্ন বুদ্ধি ও গঠন-প্রণালী সম্পর্কে তাদের অভিজ্ঞতার পরিচয় পাওয়া যায়। তুলনায় ‘অল্ডওয়ান হাতিয়ার’গুলি অনেক অবিন্যস্ত। প্রাচীন প্রস্তরযুগের যে জীবাশ্মগুলি প্রত্নতাত্ত্বিকেরা মাটি খুঁড়ে বার করেছেন তার সঠিক বয়স জানা গেছে সে জায়গার মাটি পরীক্ষা করে। মাটিতে সঞ্চিত খনিজ লোহা জীবাশ্মগুলির সঠিক বয়স ধরে রাখে তার চৌম্বক-ক্ষেত্রের দিক নির্ধারণের মাধ্যমে। এই পরীক্ষা থেকে জানা গেছে যে হাতিয়ারগুলি আগে পাওয়া অ্যাকিউলিয়ান হাতিয়ারগুলির থেকেও প্রায় ৩৫০,০০০ বছরের পুরনো।

• পালকের বিবর্তন
নাম তার অ্যাম্বার। এটি এক ধরনের গাছ থেকে প্রাপ্ত হলদে রঞ্জক বিশিষ্ট লাক্ষাজাতীয় বস্তু। কানাডার পশ্চিমে অ্যালবার্টার গ্রাসি হ্রদের কাছ থেকে প্রত্নতাত্ত্বিকেরা এই অ্যাম্বারের মধ্যে প্রায় ৮ কোটি বছর আগের ডাইনোসরের পালক আবিষ্কার করেছেন। এগারোটি খণ্ডে বিভক্ত এই পালকের জীবাশ্ম প্রমাণ করে যে কী ভাবে সূক্ষ্ম তন্তুর রোমের মতো অংশ থেকে অভিব্যক্তির মাধ্যমে বর্তমানে দ্বিশাখা বিশিষ্ট পালকের উৎপত্তি হয়েছে। এই জীবাশ্মের আবিষ্কর্তা অ্যালবার্টা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞ রায়ান ম্যাকেলা। তাঁর মতে পালকের প্রতিটি সূক্ষ্ম রোম একটি নির্দিষ্ট অক্ষ থেকে উৎপন্ন হয়ে গুচ্ছাকারে আরও অনেক রোমের সৃষ্টি করেছে। এই অক্ষটিকে বলে ‘বার্ব’, পরবর্তী পর্যায়ে এই ‘বার্ব’গুলি একসঙ্গে যুক্ত হয়ে কেন্দ্রীয় অক্ষের সৃষ্টি করে, যাকে ‘র্যাচিস’ বলে। এই র্যাচিস থেকেই আবার পর্যায়ক্রমে নতুন রোমের উৎপত্তি হয়। ‘আমেরিকান মিউসিয়াম অফ ন্যাচারাল হিস্ট্রি’র কর্ণধার জীবাশ্ম-বিশেষজ্ঞ মার্ক নোরেলের মতে ক্রিটেশিয়াস যুগের বেশির ভাগ সরীসৃপদের পালক থাকত এবং তাদের মধ্যে অনেকের পালকের সঙ্গে বর্তমান যুগের পায়রার পালকের অনেক সাদৃশ্য লক্ষ করা যায়। ম্যাকেলারের মতে এই পালকগুলি ওড়ার কাজে ব্যবহৃত হত না। বরং ডাইনোসরের দেহের বিচিত্র বর্ণের জন্য এরা দায়ী। এই রঙের উৎস হল ‘মেলানোসোম’ যা ‘মেলানিন’ নামক রঞ্জক পদার্থ দিয়ে তৈরি। এই মেলানিনের রঙের উপর নির্ভর করে পালকের রং, যেমন প্রথম পালকবিশিষ্ট ডাইনোসর ‘সিনোসোরপটেরিক্স’কে তার লাল রঙের পালকের জন্য ‘রেড হেড’ বলা হত। এর থেকেই অনুমান করা হয় যে প্রায় ৮ কোটি বছর আগের ক্রিটেশিয়াস সরীসৃপরা বর্ণহীন ছিল না বরং নানা উজ্জ্বল বর্ণের পালকেই মোড়া ছিল এদের শরীর।

• যুদ্ধবাজদের স্কুল
ভিয়েনায় রোমান গ্ল্যাডিয়েটরদের স্কুলের ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পাওয়া গেল। গত মাসের প্রথম দিকে অস্ট্রিয়ার প্রত্নতাত্বিকেরা এই খবর জানিয়েছেন। খননের কাজ শুরুর আগেই র্যাডারে এই স্কুলের বিভিন্ন চিত্র ধরা পড়েছে। তাতে দেখা গিয়েছে, চওড়া পাঁচিল ঘেরা চত্ত্বরে রয়েছে গ্ল্যাডিয়েটরদের থাকার জন্য ৪০টি ছোট ছোট ঘর। পাঁচিলের বাইরে একটি গোরস্থানের সন্ধানও মিলেছে। মনে করা হচ্ছে প্রশিক্ষণের সময় মৃত সৈনিকদের এখানে কবর দেওয়া হত। প্রশিক্ষণ এলাকা ছাড়াও ধ্বংসাবশেষের মধ্যে রয়েছে এক বিশাল স্নানাগার। বিশেষ ভাবে নজরে এসেছে, চত্ত্বরের মাঝখানের একটি কাঠের মোটা পোস্ট। সম্ভবত, এই কাঠটিকেই গ্ল্যাডিয়েটররা প্রতিপক্ষ ভেবে নিয়ে অনুশীলন করতেন। ত্রিমাত্রিক র্যাডার চিত্র থেকে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন এই স্কুলটি আসলে ছাউনি ও কারাগারের মিশেলেই গড়ে উঠেছিল। তাঁদের মতে, এখানকার সমস্ত যুদ্ধবাজরাই ছিলেন, হয় ক্রীতদাস, নয় দাগী আসামী অথবা যুদ্ধবন্দি। এই বিশাল স্কুলটি ১৭শো বছর আগের সামরিক ও বাণিজ্যিক রোমান শহরের অংশ বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞ মহল। তখন সেই শহরে বসতির সংখ্যা ছিল প্রায় ৫০ হাজার। বিশেষজ্ঞ মহলের ধারণা, রোমান সাম্রাজ্যের এশীয় সীমান্তের সঙ্গে মধ্য ও উত্তর ইউরোপীয় অঞ্চলের যোগসূত্র ছিল এই শহর। বর্তমানে এখানে মূলত খননকাজের উপরেই জোর দিচ্ছেন প্রত্নতাত্ত্বিকেরা।

• ডাইনোসরের সন্তান
প্রাচীন প্রস্তরযুগ ও তুষার-যুগের সীমানা ছাড়িয়ে এ বার ক্রিটেসিয়াস যুগের অন্দরে প্রবেশ করলেন প্রত্নতাত্ত্বিকেরা। কেনিয়ার গভীর অরণ্য অঞ্চল বা দিগন্তবিস্তৃত তিব্বতীয় মালভূমি নয়, কর্মব্যস্ত নগরী ওয়াশিংটন ডিসি-র মেরিল্যান্ড অঞ্চলে তাদের খোঁজ চালালেন, পেলেন ‘অমূল্য রতন’। সদ্য ডিম ফুটে বেরোনো পাঁচ-ইঞ্চি ‘নোডোসরের’ বাচ্চার জীবাশ্ম সাড়া জাগাল পূর্ব মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। কোটি কোটি বছর আগে যে সব প্রাণীর চিহ্ন মুছে গেছে পৃথিবী থেকে তাদেরই মধ্যে একটি হল নোডোসর নামক বৃহৎ সরীসৃপ। ক্ষুদ্র গ্রীবা, তৃণভোজী এই প্রাণীটি লম্বায় ছিল প্রায় ৩০ ফুট, প্রাপ্তবয়স্ক নোডোসরের ছিল শক্ত চোয়াল ও ছোট দাঁত। ‘জার্নাল অফ প্যালিওন্টোলজি’র কর্ণধার রে স্ট্যানফোর্ডের মতে, মেরিল্যান্ডে প্রাপ্ত পাঁচ ইঞ্চি নোডোসরের এই ক্ষুদ্র সংস্করণটি সদ্য ডিম ফুটে বেরোনো একটি শাবক, যার অস্থিগুলি নরম, স্থিতিস্থাপক এবং তরুনাস্থির পর্যায় রয়ে গেছে। জীবাশ্ম দেখে বিজ্ঞানীরা অনুমান করেছেন পাঁচ ইঞ্চি এই শাবকটির ছিল ছোট নাক এবং পৃষ্ঠদেশে বর্ম ও সূচিমুখ শক্ত কাঁটার মতো বা কীলকাকৃতি অংশ।

কুমীরের জীবাশ্ম
প্রায় ৬কোটি বছরের পুরনো কুমীরের জীবাশ্ম প্রত্নতাত্ত্বিকেরা আবিষ্কার করেছেন কলম্বিয়ার কয়লাখনি থেকে। আশ্চর্যের বিষয় ওই একই জায়গা থেকে পৃথিবীর বৃহত্তম সাপ, ‘টিটানোবোয়া’র জীবাশ্মও উদ্ধার হয়েছে। প্রত্নতাত্ত্বিকদের মতে এই দুই প্রজাতি পরস্পরের সঙ্গে লড়াইয়ে প্রাণ হারায়। প্রায় ৬ কোটি বছর আগে ৪০ ফুট লম্বা সাপের সঙ্গে ২০ ফুট কুমীরের লড়াইতে কুমীরই বিজয়ী হয়েছিল, বিশেষজ্ঞরা অন্তত তাই বলেছেন। প্রায় ৭ কোটি ৫০ লক্ষ বছর আগে প্রাচীন ‘প্যালিওসিন’ যুগে এই জাতীয় সরীসৃপরা প্রধানত অতলান্তিক মহাসাগরে তাদের আস্তানা গেড়েছিল। উত্তর-পূর্ব কলম্বিয়ার বিভিন্ন অংশ ছিল এদের নির্ভরযোগ্য বাসভূমি। ‘ফ্লোরিডা মিউসিয়াম অফ ন্যাচারাল হিস্ট্রি’র বিশেষজ্ঞ অ্যালেক্স হেস্টিংসের মতে এই দুই প্রজাতির প্রতিদ্বন্দ্বীতার কারণ তাদের একই রকম খাদ্যাভ্যাস। এরা ‘ডাইরোসরিড’পরিবারভুক্ত। শক্ত চোয়াল সরু ও তীক্ষ্ন দাঁতবিশিষ্ট, যা মাছধরার জন্য উপযুক্ত। এই প্রজাতির জীবেরা গভীর সমুদ্র ছাড়াও উপকূলবর্তী অঞ্চলেও বাস করত। মনে করা হয় গ্রিক পুরাণে উল্লিখিত ‘দুঃখের নদী’অ্যাচেরন-এর নামানুসারে এদের নামকরণ করা হয়েছে Acheorontisuchus guajiraensis.

• লোমাবৃত গণ্ডার
তিব্বতের মালভূমি অঞ্চল থেকে প্রায় ৩ কোটি ৬০লক্ষ বছরের পুরনো লোমাবৃত গণ্ডারের জীবাশ্ম আবিষ্কার করেছেন প্রত্নতাত্ত্বিকেরা। তাদের মতে এই জীবটির অস্তিত্ব ছিল তুষার-যুগে। উত্তর এশিয়া ও ইউরোপের বিভিন্ন জায়গা ছিল এদের বিচরণ ক্ষেত্র। তিব্বতের ঝান্ডা বেসিন অঞ্চলটি জীবাশ্মের জন্য বিখ্যাত। লোমাবৃত গণ্ডারের জীবাশ্মের সঙ্গে সঙ্গে প্রত্নতাত্ত্বিকেরা ঘোড়া, তুষার-চিতা, অ্যান্টিলোপ ইত্যাদি স্তন্যপায়ী প্রাণীর জীবাশ্ম আবিষ্কার করেছেন যেগুলি বহু বছর আগে পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। লস এঞ্জেলসের ন্যাশনাল হিস্ট্রি মিউজিয়াম-এর ডঃ ওয়ানের মতে, পৃথিবীর প্রাচীনতম এই জীবটির জীবাশ্ম সম্পূর্ণ অবিকৃত অবস্থায় পাওয়া যায়নি, কিন্তু এর করোটি ও নীচের চোয়াল ন্যাশনাল মিউজিয়ামে ভাল ভাবে সংরক্ষিত আছে। এই খুলি পরীক্ষা করে ওয়ান ও তার সহকর্মীরা এই বিশেষ প্রজাতির মাথায় শিং জাতীয় কোনও অঙ্গের অস্তিত্বের প্রমান পেয়েছেন, যা কালের প্রভাবে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। বিজ্ঞানীদের অনুমান শাকাহারী এই জীবটি তাদের শিং-এর সাহায্যে চলার পথের বরফ সরিয়ে খাদ্যের সন্ধান করত, যা রুক্ষ তিব্বতীয় জলবায়ুতে তাদের বেঁচে থাকার পক্ষে সহায়ক ছিল। বিবর্তনের ইতিহাসে তুষার-যুগ এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এই সময় পৃথিবীর বেশিরভাগ অংশ বরফ ও হিমবাহে আবৃত ছিল। আবহাওয়া ছিল রুক্ষ ও হিমশীতল। এই প্রকার পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিয়ে সে যুগে বহু বিচিত্র স্তন্যপায়ী প্রাণীর আবির্ভাব ঘটেছিল যারা কালের প্রভাবে ধীরে ধীরে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। কিন্তু প্রকৃতির বুকে এদের জীবাশ্মগুলি বিজ্ঞানীদের গবেষণায় রসদ যুগিয়েছে। লক্ষ কোটি বছর আগে ম্যামথ, লোমাবৃত গণ্ডার, স্যাবিয়ার ট্যুথ নামক যে প্রাণীরা পৃথিবীতে দাপিয়ে বেড়াত তারা আজ কোনও বইয়ের পাতায় ছবি হয়ে বা কোনও মিউজিয়ামে ফসিল হয়ে রয়ে গেছে, ভাবতেই আশ্চর্য লাগে। বিজ্ঞানীরা দেখেছেন পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে এই সব প্রাণীদের শারীরিক পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে খাদ্যাভ্যাসেরও পরিবর্তন হয়েছিল। তিব্বতীয় লোমাবৃত গণ্ডারের যখন আবির্ভাব হয় তখন তুষার-যুগের শুরুর কাল অর্থাৎ পরিবেশ অনেক মনোরম ছিল, বরফের পুরু আস্তরণ ছিল না। কিন্তু তখন থেকেই এই প্রজাতির প্রাণীরা পরবর্তী যুগে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য নিজেদের প্রস্তুত করে নিয়েছিল, তাদের গায়ের লোম এবং মাথার শিংই এর প্রমাণ। প্রাচীন তুষার-যুগে এইসব প্রাণীদের সৃষ্টির রহস্য এবং অস্তিত্বের জন্য সংগ্রাম এখনও বিজ্ঞানীদের গবেষণার বিষয়।
বন্যপ্রাণ
• পাখির বাসা
জানা ছিল, প্রবৃত্তিগত কারণেই পাখিরা বাসা তৈরি করে। কিন্তু সাম্প্রতিক সমীক্ষায় জানা গেল, শুধু প্রবৃত্তি নয়, বাসা তৈরিতে অভিজ্ঞতাকেও এরা কাজে লাগায়। আর এই কারণেই একটি বাসার সঙ্গে আর একটি বাসার আকার ও গঠন আলাদা হয়। বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে দেখেন, বাসা তৈরির ক্ষেত্রে পাখিরা দু’টি ধরন ব্যবহার করে থাকে বাঁ দিক থেকে ডান দিক এবং ডান দিক থেকে বাঁ দিক। আবার দেখা গেছে, বাসা তৈরিতে এক একটি পাখি এক এক রকম কৌশল ব্যবহার করে থাকে। আরও আশ্চর্যের বিষয়, অভিজ্ঞতা যত বাড়তে থাকে বাসা তৈরিতে এরা ঘাসের ব্যবহার ততই কমাতে শুরু করে। এ যেন শিক্ষার অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে প্রযুক্তিগত কৌশলের উন্নয়ন ঘটানো! বাসা তৈরির মধ্যে শিল্পীর আলাদা আলাদা শিল্পবোধও লক্ষণীয়। বাসা তৈরিতে পাখিদের ভূমিকা, তাদের শেখার ক্ষমতা বা ঘন ঘন বাসা তৈরিতে কি ধরনের কৌশলগত উন্নতি ঘটছে— তা জানতে এডিনবার্গ ও গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা উদ্যোগী হয়েছেন। তাঁরা জানান এর ফলে পাখিদের জীবনচক্রের অনেক অজানা তথ্য প্রকাশ্যে আসবে। তাই তারা আফ্রিকার পাখির উপর গবেষণা শুরু করেন। এই পাখিরা খুবই জটিল পদ্ধতির বাসা বানায়। যাতে এদের বুদ্ধিমত্তার একটা ছাপ লক্ষ করা গেছে। তাঁদের মতে, পাখিরা যদি জন্মগত প্রবৃত্তিকেই অনুসরণ করত তা হলে বাসার প্রকৃতি ও আকৃতিগত পার্থক্য লক্ষ করা যেত না! অভিজ্ঞতার প্রাধান্যতাই পাখির শিল্পীবোধের পরিচয় ফুটিয়ে তোলে। আর অনুশীলনই অভিজ্ঞতা বাড়ায়, সেইসঙ্গে নিপুণতাও।

পার্বণ
• লক্ষ্মী দশমীর মেলা ধূপগুড়িতে
লক্ষ্মী দশমীর মেলায় মেতেছে ধূপগুড়ির দুরামারির বাসিন্দারা। ৫২ বছরে পা দিল এই মেলা। শহর থেকে ২০ কিমি দূরে শালবাড়ি-১ পঞ্চায়েতের দুরামারি গ্রামের বাসিন্দারা বছরভর লক্ষ্মী পুজো কবে আসবে সে দিকে অপেক্ষা করে থাকেন। গ্রামে প্রতিটি বাড়িতে কোজাগরী লক্ষ্মী পুজো করা হলেও পাড়ায় মণ্ডপ সাজানো হয়। পুজোর ৩ দিনের মাথায় সমস্ত প্রতিমা চলে আসে মাঠে। ১৩ অক্টোবর বৃহস্পতিবার বিকাল থেকে ওই বিসর্জনের মেলাকে ঘিরে নানান পসরা সাজিয়ে বসেছেন ব্যবসায়ীরা। মাঠের একপাশে বসেছে নাগরদোলা ও নানান খেলার সামগ্রী, চিত্রহার, ম্যাজিক শো। দু’দিন মেলা চলার পর যে হেতু লক্ষ্মী প্রতিমা জলে ভাসানোর নিয়ম নেই তাই সমস্ত প্রতিমা চলে যাবে পাড়ার বাড়ি ও স্থায়ী মণ্ডপে। মেলা কমিটির সদস্য সুধীর সরকারের কথায়, “আমাদের এই কৃষি প্রধান এলাকায় লক্ষ্মীর কদর সবচেয়ে বেশী। জমিতে যাতে ভাল ফসল হয় সে প্রার্থনা সকলে মায়ের কাছে করি। তাছাড়া এই মিলন মেলায় গ্রামের ও বাইরের বহু মানুষ আনন্দে মেতে উঠি।” এক সঙ্গে এক জায়গায় যাতে সমস্ত প্রতিমা দেখা যায় সে জন্য দশমী মেলার আয়োজন করা হয়। গ্রামের রতন সরকারের কথায়, “এই পুজো আর মেলা দেখতে এখন প্রতিটি বাড়িতে আত্মীয়স্বজন এসেছেন। সকলে আনন্দ করি।”

• লক্ষ্মীপুজোর মেলা
মালবাজার মহকুমার মৌলানিতে জমে উঠেছে ডুয়ার্সের অন্যতম প্রাচীন লক্ষ্মীপুজোর মেলা। বুধবার মৌলানি গ্রাম পঞ্চায়েতের উদ্যোগে এই মেলার এবার উদ্বোধন করেন জলপাইগুড়ির সাংসদ মহেন্দ্রকুমার রায়। আগামী ১৬ অক্টোবর থেকে মালবাজার ব্লকের ক্রান্তিতে শুরু হচ্ছে ঐতিহ্যবাহী চেকেন্দা ভান্ডারি মেলা। এ বার মেলার ৭৩ বছরে পড়ল। মালবাজার পঞ্চায়েত সমিতির উদ্যোগে এই মেলা বসে। রাত যত বাড়ে, ততই জনসমাগম বাড়ে।
পরিষেবা
• শান্তিনিকতন-কলকাতা সংস্কৃতি যাত্রা
শান্তিনিকতন-কলকাতা সংস্কৃতি যাত্রা বাসের সূচনা নিয়ে উৎসাহ ছিল আম জনতার। উদ্বোধন করেন বিশ্বভারতীর ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য উদয়নারায়ণ সিংহ। আইনমন্ত্রী মলয় ঘটক, পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। পৌষমেলার মাঠে এই অনুষ্ঠান হয়। প্রতিদিন দুপুর ৩টায় কলকাতার উদ্দেশে বাস রওনা দেবে। কলকাতা থেকে ফেরার বাস পাওয়া যাবে সকাল সাড়ে ৬টায়। উদয়নারায়ণবাবুর প্রস্তাব,“শান্তিনিকেতন থেকে শিলিগুড়ি বাস চালু অনুরোধ জানাচ্ছি।” পাশাপাশি চন্দ্রনাথবাবু বোলপুর-বহরমপুর দুটি বাস চালু করার দাবি জানান।

• চালু বিমান পরিষেবা
গত অগস্টে কোচবিহার-কলকাতা বিমান পরিষেবার উদ্বোধন করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শিলিগুড়ির কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামে আয়োজিত এক অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ওই বিমান পরিষেবার উদ্বোধন হয়। বেসরকারি পরিবহণ সংস্থা ‘নর্থ ইস্ট শাটল’ এই উদ্বোধনী উড়ান চালাবে। অগস্ট থেকে উড়ান নিয়মিত হবে বলে এয়ারপোর্ট অথরিটি অব ইন্ডিয়ার পূর্বাঞ্চলের কর্তা গৌতম মুখোপাধ্যায় জানান।





রোজের আনন্দবাজারএ বারের সংখ্যা • সংবাদের হাওয়াবদল ভোগ-ব্যঞ্জনপুরনো সংস্করণ