আমার আরও এক মা, কলকাতা

গায়ক
নৈহাটিতে জন্ম হলেও আমার ভাল লাগার সব কিছু যেন কলকাতা শহর ঘিরেই। ছোট থেকেই এই শহর আমাকে এত টানত যে বেশির ভাগ সময়েই আমি এখানেই কাটাতাম। সেই ট্রাম, ভিড় আর ব্যস্ততা আমাকে খুবই উৎসাহ দিত। মনে হত শিয়ালদহ স্টেশনের গিজগিজে ভিড় ঠেলে কত মানুষ তো শহরে মিশে যান, আমিও তো তেমনই এক জন, এই অগুন্তির ভিড় থেকে আমি এমন কিছু করতে চাই, যেখানে আমার গান, আমার নাম এই ভিড়ে হারিয়ে যাবে না!

ছোটবেলা থেকেই গানের পরিবেশে বড় হয়েছি। মা, শীলা চট্টোপাধ্যায় শাস্ত্রীয় সঙ্গীত শিল্পী। তাঁর কাছেই আমার তালিম, বড় হয়ে ওঠা। বহু দিন আগে কলকাতার এক পার্কে এক জনকে দেখেছিলাম গিটার হাতে নানা গানের সুর তুলছে, একের পর এক। তখন আমি বেশ ছোট। আর থাকতে পারিনি। গিটার নিয়ে আমিও শুরু করলাম এত দিনের শেখা নানা গানের অংশ বিশেষ। কিছু ক্ষণ পরে মুখ তুলে দেখি পার্কের চার পাশে বেশ ভিড় জমে গেছে।

কলকাতার রাস্তায় তখন ট্রামের আওয়াজ না-শুনলে মনে হত, কী যেন নেই। আমি ট্রামের ওই বিচিত্র আওয়াজ শুনতে শুনতে গানের নানা রকম ছন্দ তৈরি করতাম। কলকাতার অনেক কিছু ভাল লাগার মধ্যে ট্রাম আমার আজও খুব প্রিয়। কত দিন হয়েছে কোনও কারণ ছাড়াই ট্রামে চড়ে কত্ত দূর চলে গিয়েছি! ট্রামের জানলার ধারে বসে ভিক্টোরিয়া বা হাওড়া ব্রিজ দেখার মজা যেমন অন্য রকম, তেমনই গানের বিভিন্ন কলি মনে মনে রেওয়াজ করার আনন্দটাই আলাদা! ট্রাম এখনও চড়ি। তবে বেশি দূর যাওয়া হয় না। ট্রাম চড়লে এখন খারাপ লাগে, কেন না আগেকার মতো সেই ভিড় আর পাওয়া যায় না। ‘দাদা একটু চেপে দাঁড়ান’ বা ‘এগিয়ে যান, সামনে ফাঁকা আছে’ এগুলো আর শোনা যায় না!
কলকাতা আমার আর এক মা! মা যেমন তাঁর সন্তানকে স্নেহ ও ভালবাসায় লালিত করেন, তেমনই এই মা আমাকে দিয়েছে সঙ্গীত শিক্ষার নানা দিক। জন্মদাত্রী মা গানের কলি শিখিয়েছেন, আর ‘কলকাতা মা’ আমাকে তার বিস্তৃতির পথ চিনিয়েছে। সেই ভালবাসার একটা নমুনা, আমার স্বপ্ন ‘সঙ্গীত রিসার্চ অ্যাকাডেমি’তে পা রাখা। পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তীর কাছে তালিম নেওয়া।

গানবাজনার সঙ্গে পুরোপুরি জড়িয়ে যাওয়ায় আমার ঠিকানাও এখন কলকাতা। টানা অনুষ্ঠানের ফাঁকে ক্লান্ত হয়ে পড়লে মাঝে মধ্যে কী করি জানেন? কলকাতা ঘুরে ‘নস্টালজিয়া’ খুঁজি। কলকাতার ভিড়ে কিছু ক্ষণের জন্য নিজেকে ভাসিয়ে দিই। গলির মুখে দাঁড়িয়ে ভাঁড়ে চা খাই, আর উপভোগ করি ছোট ছোট জটলার মধ্যে চলতে থাকা নানা আলোচনা। ‘গলি কালচার’ এ কারণেই ভাল লাগে, কারণ নানা জনের মতামতটা চট করে ধরে নেওয়া যায়। এমনই এক গলিতে সন্ধের আড্ডায় শুনেছিলাম আমারই সম্প্রতি রিলিজ হওয়া রাগপ্রধান গানের প্রশংসা।

আসলে কলকাতাকে এত ভাল লাগে তার কারণ হল, এখানে প্রশংসা এবং সমালোচনা দুটোই সমান তালে চলে। সত্যি কথা বলতে কি, এটাই তো চাই।

 
 

Content on this page requires a newer version of Adobe Flash Player.

Get Adobe Flash player


প্রথম পাতা অতীতের তাঁরাফিরে দেখাশিরোনামে শেষ তিরিশ • আনাচে-কানাচে

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.