কম ওজনের শিশুদের জন্য স্বাস্থ্য শিবির পূর্বে
মলুকের কুলবেড়িয়া গ্রামের তিন বছর চার মাসের শিশু মানিক মাইতির ওজন ৯ কেজি ১০০ গ্রাম। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার স্বাস্থ্যবিধি অনুযায়ী এই বয়সে মানিকের ওজন হওয়া উচিত কমপক্ষে ১২ কেজি। তমলুকের চকশ্রীকৃষ্ণপুরের এক বছর চার মাসের আনিসা খাতুনের শরীরেও রুগ্ণতার চিহ্ন।
শুধু মানিক বা আনিসা নয়। ওদের মতো ৬ বছর বয়স পর্যন্ত পূর্ব মেদিনীপুর জেলার ৩৮২১ জন শিশুকে অপুষ্টির শিকার হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ওই শিশুদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে পুষ্টিকর খাবার দেওয়া-সহ বিভিন্ন অসুখের চিকিৎসার ব্যবস্থার জন্য জেলার প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েতে বিশেষ শিবির করা হচ্ছে জেলা জুড়েই। প্রতি মাসের দ্বিতীয় ও চতুর্থ শনিবার করে এই শিবিরের আয়োজন করা হয়েছে। তিন মাস ধরে এই শিবির চালানোর পরিকল্পনা নিয়েছে জেলা প্রশাসন। পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক অন্তরা আচার্য বলেন, “জেলার অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলিতে আসা শিশুদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার সময় বেশ কয়েকজন কম ওজনের শিশুর বিষয়টি নজরে আসে। ওই শিশুদের চিহ্নিত করে তাদের স্বাভাবিক ওজনে নিয়ে আসা-সহ এদের কোন অসুখ থাকলে তা নিরাময়ের জন্য বিশেষ কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।”

উত্তর সোনামুই গ্রাম পঞ্চায়েতের স্বাস্থ্য পরীক্ষা শিবির।—নিজস্ব চিত্র।
গত শনিবার ছিল স্বাস্থ্য পরীক্ষা শিবিরের দিন। শনিবার বেলা ১২ টা নাগাদ তমলুক ব্লকের উত্তর সোনামুই গ্রাম পঞ্চায়েতে গিয়ে দেখা যায় অফিস সংলগ্ন সদর উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রের শিবিরে শিশুদের নিয়ে মায়েদের ভিড়। এখানেই মায়ের সঙ্গে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে এসেছিল ছোট্ট আনিসা। আনিসার মা জরিনা বিবি বলেন, “স্বামীর সামান্য আয়ে সংসার চলে। মেয়েটাকে সবসময় ভাল খাবার খেতে দিতে পারি না।” এই শিশুদের মধ্যে অনেকেই অন্য নানা অসুখেও আক্রান্ত। যেমন কুলবেড়িয়া গ্রামের দেড় বছরের সায়ন ভৌমিক থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত। সায়নের মা ফাল্গুনী ভৌমিক বলেন, “সায়নের যখন মাত্র সাড়ে তিন মাস বয়স, তখন ওর রক্ত পরীক্ষার সময় থ্যালাসেমিয়া ধরা পড়ে। সেই থেকে চিকিৎসা চলছে।”
পূর্ব মেদিনীপুর জেলার ৩৮২১ জন কম ওজনের শিশুর মধ্যে তমলুক ব্লকে রয়েছে ২৪২ জন। এদের মধ্যে অনন্তপুর-১ গ্রাম পঞ্চায়েতে ৪০ জন, অনন্তপুর-২ পঞ্চায়েতে ৫৮ জন, শ্রীরামপুর-১ পঞ্চায়েতে-২৫ জন ও শ্রীরামপুর-২ গ্রামপঞ্চায়েতে ৩৩ জন শিশু রয়েছে। প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েত সদর উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এই স্বাস্থ্য পরীক্ষা শিবিরে আসা এইসব শিশুদের ভিটামিন খাওয়ানো ছাড়াও পুষ্টিকর খাবারের একটি প্যাকেট দেওয়া হচ্ছে। ওই খাবারের মধ্যে রয়েছে একটি বেবি ফুডের পাউচ, একটি বিস্কুটের প্যাকেট, একটি কেক, একটি আপেল। তমলুক ব্লকের শিশু বিকাশ প্রকল্প আধিকারিক পরিমল দাস বলেন, “অনেক সময়ই খুব কম বয়সে মা হওয়ার কারণে অনেকে শিশু পরিচর্যার বিষয়টি ভালভাবে জানেন না। তাছাড়া অর্থনৈতিক অস্বচ্ছলতা তো রয়েছেই।” পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক শৈবাল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েতের সদর উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রে শিবির করে পুষ্টিকর খাবার দেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। অন্য শারীরিক সমস্যা থাকলে তাঁর চিকিৎসার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.