ছাত্র ভর্তি নিয়ে বিশৃঙ্খলা সাধারণ ডিগ্রি কলেজে তো আছেই। তা থেকে মুক্ত নয় বিএড কলেজগুলিও। তাই কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় এ বার বিএডে ভর্তির নিয়ম বেঁধে দিতে চলেছে। লক্ষ্য মূলত পঠনপাঠনের মান উন্নয়ন। আর অনিয়ম রোধ। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএড বিভাগে ভর্তির নিয়ম একটা আছে। কিন্তু তাদের অধীন কলেজে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না-করেই ছাত্র ভর্তির ট্র্যাডিশন চলে আসছে!
গত বছর অনিয়মের অভিযোগে গরফার জগদীশচন্দ্র বসু বিএড কলেজে ছাত্র ভর্তি স্থগিত হয়ে গিয়েছিল। আবার রায়দিঘি বিএড কলেজে মেধা-তালিকা না-মেনে ভর্তি চালিয়ে যাওয়ার অভিযোগে মামলা হয়। সেই মামলা এখনও চলছে। মূলত এই ধরনের অনিয়ম-বিশৃঙ্খলা বন্ধ করতেই ছাত্র ভর্তির জন্য নির্দিষ্ট নিয়মবিধি তৈরি করতে চাইছে বিশ্ববিদ্যালয়। এর আরও একটা উদ্দেশ্য পঠনপাঠনের উন্নতি ঘটানো। বিএডে সেমেস্টার পদ্ধতি চালু হয়েছে আগেই। নির্দিষ্ট বিধি মেনে ভর্তি নিলে পঠনপাঠনের মান উন্নত হবে বলেই মনে করছে বিশ্ববিদ্যালয়।
মূলত ‘সেল্ফ ফিনান্সিং’ (নিজেদের টাকায় চলা) কলেজেই ছাত্র ভর্তিতে অনিয়মের অভিযোগ বেশি। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন ৩৭টি কলেজের ৮০ ভাগই সেল্ফ ফিনান্সিং। সরকারি, সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত কলেজগুলি নিয়ম মেনে মেধার ভিত্তিতে ছাত্র ভর্তি করলেও সেল্ফ ফিনান্সিং কলেজ তার ধার ধারে না। পরিকাঠামোর অভাবে ওই সব কলেজে পঠনপাঠনের মান খারাপ বলে অভিযোগ তো আছেই। সেই সঙ্গে মেধার ভিত্তিতে তালিকা তৈরি না-করে লক্ষ লক্ষ টাকার বিনিময়ে সেখানে ছাত্র ভর্তি করা হয় বলে বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রেরই খবর।
অনিয়মে রাশ টানতে কোন পদ্ধতিতে ছাত্র ভর্তি করতে হবে, সেই বিষয়ে খসড়া বিধি তৈরি করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা বিভাগের বোর্ড অব স্টাডিজ। আজ, সোমবার সিন্ডিকেট বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা। বিষয়টি নিয়ে আলোচনার জন্য ২৭ ফেব্রুয়ারি সব বিএড কলেজের অধ্যক্ষদের বৈঠকে ডেকেছেন উপাচার্য সুরঞ্জন দাস।
উপাচার্য বলেন, “সেল্ফ ফিনান্সিং কলেজগুলি সরকারের কাছ থেকে কোনও টাকা নেয় না। তাই তাদের উপরে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ন্ত্রণ নেই। তবে ছাত্র ভর্তির নির্দিষ্ট নিয়ম তৈরি হলে কলেজগুলি তা মানতে বাধ্য হবে।” তিনি জানান, সেল্ফ ফিনান্সিং কলেজগুলিতে ম্যানেজমেন্ট কোটায় ছাত্র ভর্তি হয়। নিয়ম চূড়ান্ত করার সময় সেটাও মাথায় রাখা হবে।
স্কুলে পড়ানোর জন্য প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক হওয়ায় বিএডে ভর্তির চাহিদা বেড়েছে। একই কারণে নিয়ম মেনে বিএডে ভর্তি আর পঠনপাঠনের গুরুত্ব বাড়ছে। ইচ্ছেমতো ভর্তি রুখতে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে গঠিত বর্মা কমিশন প্রবেশিকা পরীক্ষা নিয়ে বিএডে ছাত্র ভর্তির সুপারিশ করেছিল। নিয়ম রূপায়ণের ব্যাপারে ভাবনাচিন্তা চলছে বলে ন্যাশনাল কাউন্সিল ফর টিচার এডুকেশন (এনসিটিই) সূত্রের খবর। বিশ্ববিদ্যালয় অবশ্য এখনই প্রবেশিকা পরীক্ষার পথে হাঁটছে না।
এনসিটিই-র নিয়ম অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএডে ভর্তির জন্য স্নাতক বা স্নাতকোত্তরে ন্যূনতম ৫০ শতাংশ নম্বর পাওয়া বাধ্যতামূলক। এ ছাড়া মাধ্যমিক থেকে স্নাতকোত্তর পর্যন্ত বিভিন্ন পরীক্ষার জন্য নির্দিষ্ট গুরুত্ব ধার্য আছে। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, গত বছর পর্যন্ত বিএডে ভর্তির জন্য মাধ্যমিকে ০.১, উচ্চ মাধ্যমিকে ০.২, স্নাতকে (জেনারেল) ০.১, স্নাতকে (অনার্স) ০.৩, স্নাতকোত্তরে ০.৩৫% গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া এমফিল, পিএইচডি-র জন্যও পৃথক নম্বর আছে। এই নিয়ম সামনে রেখেই খসড়া নীতি তৈরি হয়েছে বলে বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর। |