বহিরাগতদের রুখতে কোথাও তৈরি করা হয়েছে বাঁশের ব্যারিকেড। কোথাও আবার পেরেক ঠুকে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে স্কুলের জানালা। জানালা গলে যাতে না আসতে পারে উড়ন্ত কাগজ। নজর রাখবে ভিডিও ক্যামেরাও। রাত পোহালেই মাধ্যমিক। তাই এমন নানা ব্যবস্থা নিচ্ছেন শিক্ষা দফতর ও জেলা প্রশাসনের কর্তারা।
মাধ্যমিক পরীক্ষায় টোকাটুকি নিয়ে অভিযোগ ওঠে প্রতি বছর। টোকাটুকি রুখতে গিয়ে উত্তর দিনাজপুরের ইসলামপুরের লোধনে দু’বছর আগে ঢিলের আঘাতে জখম হয়েছিলেন এসডিপিও। গত বছর ঠিকরিবাড়ি এলাকায় জখম হন মহকুমা শাসক এবং দুই পুলিশ কর্মী। এ বারে তাই নিরাপত্তায় কোনও ফাঁক রাখতে চাইছে না জেলা প্রশাসন। মহকুমার ৪০টি পরীক্ষা কেন্দ্রের মধ্যে ১৯টি পরীক্ষা কেন্দ্রকে স্পর্শকাতর হিসেবে চিহ্নিত করে সেখানে ভিডিও ক্যামেরার ব্যবস্থা করেছে জেলা প্রশাসন।
বহিরাগতরা যাতে ঢুকতে না পারে সে জন্য গোয়ালপোখরের লোধন স্কুলের মাঠ ঘিরে তৈরি হয়েছে বাঁশের ব্যারিকেড। মনিভিটা স্কুলে রাস্তা লাগোয়া শ্রেণিকক্ষে পরীক্ষার আসনই ফেলা হয়নি। ঠিকরিবাড়ি স্কুলে পরীক্ষার সময় সব জানালা পেরেক ঠুকে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। উত্তর দিনাজপুরের জেলাশাসক স্মিতা পাণ্ডে বলেন, “স্কুলগুলিতে ভ্রাম্যমাণ ভিডিও ক্যামেরার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।” পরীক্ষা চলাকালীন স্কুল চত্বরের ২০০ মিটারের মধ্যে ১৪৪ ধারা জারি থাকছে।
কোচবিহারের ২৩টি পরীক্ষা কেন্দ্রকে স্পর্শকাতর চিহ্নিত করা হয়েছে। বিগত বছরগুলিতে ওঠা টোকাটুকির অভিযোগের নিরিখে জেলার ৮টি পরীক্ষা কেন্দ্রকে ‘অতি স্পর্শকাতর’ ঘোষণা করা হয়েছে। জেলাশাসক মোহন গাঁধী বলেন, “পর্ষদের নির্দেশ মেনে সংশ্লিষ্ট পরীক্ষা গ্রহণ কেন্দ্রে ভিডিও রেকর্ডিঙের ব্যবস্থা থাকছে।”
রাজ্য মধ্যশিক্ষা বোর্ডের উত্তরবঙ্গের আঞ্চলিক অধিকর্তা প্রদীপ বিশ্বাস বলেন, “উত্তরবঙ্গের ছয় জেলার সব পরীক্ষা কেন্দ্রেই নিরাপত্তার যথাযথ ব্যবস্থা করা হয়েছে। ভিডিও ছবি তোলার ব্যবস্থা করা হয়েছে। যে শিক্ষক-শিক্ষিকারা পরীক্ষা কেন্দ্রে নজরদারি করবেন তাঁরাও পরীক্ষা চলার সময়ে মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে পারবেন না।” বর্ধমানের কাটোয়া মহকুমার পরীক্ষাকেন্দ্রগুলিতে নজরদারিতে থাকছে ছ’টি ভ্রাম্যমাণ ভিডিও ক্যামেরা।
মুর্শিদাবাদ জেলা মাধ্যমিক পরীক্ষা পযর্বেক্ষন কমিটির আহ্বায়ক শেখ ফুরকান বলেন, “টোকাটুকি ও গণ্ডগোলের সম্ভাবনার দিক থেকে জেলার ৪২টি স্কুলকে উত্তেজনাপ্রবণ পরীক্ষা কেন্দ্র হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। সেই সব স্কুলে পরীক্ষা চলাকালীন ভিডিওগ্রাফি করা হবে।”
নদিয়াতেও টোকাটুকি রুখতে রাখা হচ্ছে ভিডিও ক্যামেরা। জেলার মাধ্যমিক স্কুল পরিদর্শক কৌশিক রায় বলেন, “কোনও নির্দিষ্ট স্কুলে ক্যামেরা বসবে না, যেখানে প্রয়োজন ভিডিও তোলা হবে।” প্রতিটি মহকুমায় চার থেকে পাঁচটি ভিডিও ক্যামেরার ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে।
মধ্য শিক্ষা পর্ষদের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার মনিটরিং কমিটির কনভেনর নির্মলেন্দু দে বলেন, “মাধ্যমিক পরীক্ষা চলাকালীন নজরদারির জন্য একটি দল গঠন করা হয়েছে। কোথাও কোনও অনভিপ্রেত ঘটনার অভিযোগ পেলে ভিডিও ক্যামেরা নিয়ে ওই দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে যাবে।”
উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় ৪৮টি স্কুলে সিসিটিভি বসানোর প্রস্তাব এসেছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনায় জেলা স্কুল পরিদর্শক দেবজ্যোতি বড়াল বলেন, “১৭৩টি স্কুলে সিট পড়ছে। ভিডিও ক্যামেরা বসানোর এখনও কোনও প্রস্তাব আসেনি। তেরোটি স্কুল চিহ্নিত করেছি। কয়েকটি স্কুলের ব্যাপারে স্থানীয় থানার সঙ্গে কথা হয়েছে। তারাই ভিডিও রেকর্ডিং করবে।” হুগলির জেলাশাসক মনমিত নন্দা বলেন, “প্রশাসনের তরফে প্রতিটি ব্লকে ভিডিওগ্রাফারের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তাঁরা স্কুলে স্কুলে ঘুরে রেকর্ডিং করবেন।” |