দীর্ঘ দিন পরে আবার দেখা হল পুরনো বন্ধুদের। লাল চায়ের পেয়ালা হাতে চর্চা হল বামপন্থার সঙ্কট এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে।
আলিমুদ্দিনে গিয়ে শনিবার সন্ধ্যায় প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য এবং বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসুর সঙ্গে কথা বলে এলেন পিডিএসের রাজ্য সভাপতি সৈফুদ্দিন চৌধুরী। বুদ্ধবাবুর সঙ্গে সৈফুদ্দিনের শেষ দেখা বছর পাঁচেক আগে আয়লার পরে মহাকরণে মুখ্যমন্ত্রীর ঘরে স্মারকলিপি দিতে গিয়ে। তার পর গত জানুয়ারিতেই সিটু নেতা মৃণাল দাসের মৃত্যুর খবর পেয়ে আলিমুদ্দিনে যান সিপিএমের এই প্রাক্তন সাংসদ। তবে এ বারে তাঁর আলিমুদ্দিনে পদার্পণের তাৎপর্য আলাদা। কারণ এ বার সাক্ষাতের লক্ষ্য ছিল, লোকসভা ভোটে বামফ্রন্টের সঙ্গে বন্ধুত্বের প্রস্তাব।
সিপিএম সূত্রের খবর, সরাসরি কোনও প্রতিশ্রুতি না দিলেও বুদ্ধবাবু ও বিমানবাবু সৈফুদ্দিনকে আশ্বস্ত করেছেন, তাঁদের প্রস্তাব নিয়ে তাঁরা দলে ও ফ্রন্টে আলোচনা করবেন। পিডিএসের তরফে প্রস্তাব ছিল, সারদা কাণ্ড-সহ বিভিন্ন প্রশ্নে এখন যেমন আন্দোলনের মঞ্চে তারা বামেদের সঙ্গে শরিক হয়েছে, লোকসভা ভোটে সেটাকেই প্রসারিত করা হোক নির্বাচনী সমঝোতায়। পিডিএসের কোনও প্রার্থীকে বামফ্রন্ট সমর্থন করুক। এমনকী, তেমন পরিস্থিতি হলে বামফ্রন্টের শরিক হতেও পিডিএসের আপত্তি নেই। বামফ্রন্ট ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর বলশেভিক পার্টি, ওয়ার্কার্স পার্টির মতো ছোট ছোট দল ফ্রন্টের শরিক হয়েছে। সেই তালিকায় পিডিএসের নাম সংযোজন হলে বিস্ময়ের কিছু নেই বলে বাম শিবিরের একাংশের অভিমত।
সৈফুদ্দিনের কথায়, “শুধু কিছু আসনের প্রশ্ন নয়। বামপন্থা একটা রাজনীতি এবং ঐতিহ্য। তার সঙ্কট দেখলে ভাল লাগে না। এখনকার পরিস্থিতিতে বাম, গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ শক্তিগুলির একজোট হয়ে কাজ করা প্রয়োজন। এই কথাই ওঁদের বলেছি।” আলিমুদ্দিন সূত্রের খবর, বেশ কিছু দিন পর প্রাক্তন সতীর্থ সৈফুদ্দিনকে মুখোমুখি পেয়ে খুশিই হয়েছেন বুদ্ধবাবু। তাঁর মত, শেষ পর্যন্ত বিশেষ সহযোগিতার ক্ষেত্র তৈরি না হলেও কোনও ভাবেই যেন সম্পর্কটা শত্রুতামূলক হয়ে না দাঁড়ায়।
পিডিএস নেতৃত্বের যুক্তি, সিঙ্গুর ও নন্দীগ্রামের আন্দোলন পর্বে তাঁরা তৃণমূল নেত্রীর সঙ্গে ছিলেন। সেই জোট এখন অতীত। তাঁরাই এখন তৃণমূলের ‘অন্যায়’ এবং ‘ভুল রাজনীতি’র বিরুদ্ধে বললে মানুষের কাছে সেই বক্তব্য বামেদের থেকে বেশি গ্রহণযোগ্য হবে। সেই যুক্তিতেই বাম এবং পিডিএস কাছাকাছি এলে ফায়দা হবে বামফ্রন্টেরই। তবে তাদের প্রস্তাবে বিমানবাবুরা শেষ পর্যন্ত অরাজি হলে নিজেরা কিছু আসনে প্রার্থী দিয়ে শক্তি যাচাই করার কথাও ভেবে রেখেছে পিডিএস।
সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্বের একাংশ সৈফুদ্দিনদের প্রতি এখনও যথেষ্ট ‘সহমর্মী’। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের কথায়, “পঞ্চায়েত বা পুরসভায় আসন সমঝোতা যত সহজে সম্ভব, লোকসভায় তা নয়। তবে বৃহত্তর বাম ঐক্যের স্বার্থে রাজনৈতিক সমঝোতা হতেই পারে।” |