কো-অর্ডিনেশন ভেঙে দেওয়ার হুমকি মমতার
কো-অর্ডিনেশন কমিটি ভেঙে দেওয়ার জন্য তৃণমূল অনুগামী সরকারি কর্মচারী সংগঠনের কাছে আর্জি জানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে শনিবার পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারি কর্মচারি ফেডারেশনের সভায় মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট বলেন, “কো-অর্ডিনেশন কমিটিকে ভেঙে দিন।’’ তাঁর অভিযোগ, কো-অর্ডিনেশন কমিটি সরকারকে কোনও সাহায্যই করে না। উল্টে সরকারের বিরুদ্ধে কুৎসা করে। মুখ্যমন্ত্রীর ভাষায়, “কো-অর্ডিনেশন কমিটি ভাঙবেন তো! ওরা খালি দুষ্টুমি করে। পিএনপিসি (পরনিন্দা-পরচর্চা) করে। ফাইল আটকে রাখে।”
অমিত মিত্রের সঙ্গে কথা শেষ। পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে মোবাইল ফিরিয়ে দিচ্ছেন
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শনিবার নেতাজি ইন্ডোরে একটি অনুষ্ঠানে। ছবি: দেবাশিস রায়।
লোকসভা ভোটের আগে সিপিএম প্রভাবিত কো-অর্ডিনেশন কমিটির বিরুদ্ধে মুখ্যমন্ত্রীর এই গোলাবর্ষণ তাৎপর্যপূর্ণ। আড়াই বছর আগে সরকারে এসে মুখ্যমন্ত্রী সমস্ত সরকারি কর্মচারী সংগঠনের নেতাদের নিয়ে বৈঠক করেছিলেন। সেই সময়ে তিনি সব সংগঠনের নেতাদের কাছে সরকারকে সহযোগিতার আবেদন জানিয়েছিলেন। কিন্তু আড়াই বছর বাদে মুখ্যমন্ত্রীই কো-অর্ডিনেশনের বিরুদ্ধে কার্যত খড়্গ-হস্ত হয়েছেন। কারণ, তাঁর অভিযোগ ‘গতিশীল ও উন্নয়নমুখী’ সরকারি কাজে কো-অর্ডিনেশনের সদস্যরা তাঁর সঙ্গে সহযোগিতা করছেন না। তৃণমূলের শীর্ষ নেতাদের কথায়, লোকসভা ভোটের আগে মমতা তৃণমূলকে জাতীয় স্তরে প্রাসঙ্গিক করে তুলতে যেমন চেষ্টা করছেন, তেমনই তাঁর সরকারে স্বচ্ছ ও গতিশীল ভাবমূর্তিও তুলে ধরতে চাইছেন। কেমন কর্মী তিনি চান, তা জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “অন্য রাজ্যের মানুষ যেন বলেন, সরকারি কর্মী যে সরকারের সম্পদ তা দেখতে হলে বাংলায় যান।”
অসহযোগিতার অভিযোগ মানতে নারাজ কো-অর্ডিনেশন কমিটির রাজ্য সম্পাদক মনোজ গুহ। তাঁর অভিযোগ, “ক্ষমতায় আসার পর থেকেই উনি আমাদের সংগঠন ভাঙার চেষ্টা করছেন। আমাদের নেতা-কর্মীদের প্রতিহিংসামূলক বদলি করছেন। জরিমানা করছেন। তবে অত সহজ হবে না।” তৃণমূলপন্থীদের সভাকে কটাক্ষ করে মনোজবাবু বলেন, “ওটা তো ওঁর (মুখ্যমন্ত্রী) অনুগামী সরকারি কর্মীদের সংগঠনগুলিকে জোড়া লাগানোর সভা ছিল। সেটা যেমন উনি পারবেন না, কো-অর্ডিনেশন ভাঙার স্বপ্নও তাঁর পূরণ হবে না।”
গত বছর ৯ মার্চ তৃণমূলপন্থী সরকারি কর্মীদের সমাবেশ হয়েছিল। তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়, দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় সে দিন পঞ্চায়েত ভোটের প্রশাসনিক কাজে সরকারি কর্মচারীদের সর্বতো সহায়তা পাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। এ দিনও সংগঠনের প্রবীণ নেতা মৃগেন মাইতি, শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, মঙ্গলময় ঘোষ, মনোজ চক্রবর্তীদের উপস্থিতিতে পার্থবাবু বলেন, “এখন একটাই সংগঠন।” তিনি এ দিন নতুন সংগঠন ‘পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারি কর্মচারি ফেডারেশন’-এর নাম আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘোষণা করেন।
সামনে ভোটের কথা মাথায় রেখেই মুখ্যমন্ত্রী এ দিন সরকারি কর্মচারীদের কল্যাণের জন্য তাঁদের আবাসন প্রকল্পের কথা ঘোষণা করেছেন। সভা থেকেই তিনি অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রের সঙ্গে ফোনে আলোচনা করে জানান, সস্তায় জমি আর সহজ কিস্তিতে ঋণের ব্যবস্থা করে তিনি সরকারি কর্মচারীদের আবাসনের ব্যবস্থা করেছেন। সেই সঙ্গে কর্মচারীদের স্বাস্থ্য প্রকল্পের সময়সীমা এবং এক লক্ষ টাকার স্বাস্থ্য বিমার কথাও মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেন। কর্মীদের বর্ধিত বেতন এবং বকেয়া মহার্ঘ ভাতাও (ডিএ) সরকার দেওয়ার চেষ্টা করছে জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আমাদের সরকার একটু স্বচ্ছল হলেই বকেয়া ডিএ দিয়ে দেব।’’
হাতের কাছে মুখ্যমন্ত্রীকে পেয়ে এ দিন রাজ্য সরকারের কয়েক জন অস্থায়ী ও চুক্তির ভিত্তিতে নিযুক্ত কর্মী তাঁদের স্থায়ীকরণের দাবি তোলেন। মুখ্যমন্ত্রী তাতে কিছুটা বিরক্তই হন। তিনি জানিয়ে দেন, সরকারি স্তরে, বিশেষ করে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা না করে এ বিষয়ে কিছু বলতে পারবেন। তবে অস্থায়ী কর্মীদের কর্মচ্যূতি হবে না বলে আশ্বাস দেন মমতা। পরে মুকুলবাবু জানান, অস্থায়ী ও চুক্তির ভিক্তিতে নিযুক্ত কর্মীদের সমস্যা দেখার জন্য শোভনদেববাবুকে শীর্ষে রেখে একটি কমিটি করা হবে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.