আর্মান্দো কোলাসো সম্ভবত আজ রবিবার কোচিং জীবনের সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষার সামনে।
ইস্টবেঙ্গলে কোচিং শুরু করার পর প্রথমবার শিষ্যদের মুখোমুখি হতে হচ্ছে গোয়ান কোচকে। বলা যায়, অর্জুনদের মুখোমুখি হতে চলেছেন দ্রোণাচার্য। কারণ পাঁচ বারের আই লিগ জেতার পর ভারতীয় ফুটবলে যে ইউএসপি তৈরি হয়েছে আর্মান্দোর এবং সেটা যাঁদের সৌজন্যে সেই বেটো, ক্লিফোর্ড, দেবব্রত রায়রাই আজ তাঁর বিপক্ষ। এবং সেটা এমন সময়, যখন ম্যাচটা না জিততে পারলে লাল-হলুদকে আই লিগ জেতানোর স্বপ্ন শেষ হয়ে যেতে পারে।
সেটা মানছেন আর্মান্দো নিজেও। শনিবার সকালে অনুশীলনের পর চিডি-সুয়োকাদের কাছে আর্মান্দো তাই অনুরোধ জানান, “এটা শুধু আমার একার লড়াই নয়। লড়াইটা সবার। ডেম্পোকে হারাতে না পারলে আই লিগ থেকে ছিটকে যেতে হবে। তাই তোমাদের কাছে আমি ডেম্পো ম্যাচ থেকে তিন পয়েন্ট উপহার চাইছি।”
তেরো বছর ধরে যে ক্লাবের সুখ-দুঃখের সঙ্গী ছিলেন আর্মান্দো। যে ক্লাবকে তিনি নিজের ‘সন্তান’ বলেন। যে ক্লাবের হাত ধরেই পাঁচ বার আই লিগ জয়ী কোচের তকমা পেয়েছেন। পেয়েছেন দেশের অন্যতম সফল কোচের স্বীকৃতি। সেই ক্লাবের বিরুদ্ধে আজ জিততে মরিয়া লাল-হলুদের বর্তমান কোচ। গোয়া থেকে ফোনে বললেন, “ডেম্পোকে হারাতে না পারলে আই লিগ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বপ্ন কার্যত শেষ হয়ে যাবে। তাই আজ তিন পয়েন্ট চাই-ই চাই।” |
প্রাক্তন দুই ছাত্র বেটো-মিরান্ডাই এখন ইস্টবেঙ্গল কোচের কাঁটা। |
আর যাঁরা আর্মান্দোর কোচিংয়ে ডেম্পোতে খেলেছেন এবং এখনও খেলছেন সেই দেবব্রত রায়রা অবশ্য তাঁদের প্রাক্তন কোচকে সমীহ করলেও ফ্যাক্টর হবে বলে মনে করছেন না। দেবব্রত যেমন বললেন, “আর্মান্দো স্যার বড় মানের কোচ। আর আমাদের কয়েক জনকে উনি খুব ভাল করে জানেনও। কিন্তু আমাদের দলে এ বার অনেক নতুন ফুটবলার রয়েছে, যাঁদের উনি জানেন না। তবে এটুকু বলতে পারি ইস্টবেঙ্গলের সঙ্গে ম্যাচ কিন্তু খুব উপভোগ্য হবে।” দেবব্রতর কথাই যেন ভাঙা রেকর্ডের মতো ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বাজছিল বেটো, ক্লিফোর্ডদের মুখে মুখে। ফোনে বেটো বললেন, “এখন আমরা অন্য স্ট্র্যাটেজিতে খেলি। দলের সাত-আট জন ফুটবলার নতুন। স্বভাবতই আর্মান্দো আমাদের সব জানেন এটা ঠিক নয়।” ক্লিফোর্ড আবার বললেন, “উনি যেমন আমাদের চেনেন-জানেন, আমরাও তো ওঁকে চিনি। ওঁর খেলানোর পদ্ধতি জানি।”
ডেম্পোর জন্য এত দিন ইস্টবেঙ্গল বা অন্য টিমকে বধ করার স্ট্র্যাটেজি তৈরি করতে হত আর্মান্দোকে। কিন্তু তেরো বছর বাদে বেটো, ক্লিফোর্ড, দেবব্রতদের আটকাতেই একেবারে অন্য অঙ্ক কষতে হচ্ছে দেশের অন্যতম সফল কোচকে। ডেম্পোর বিরুদ্ধে স্ট্র্যাটেজি তৈরি করতে গিয়ে চিডিদের গোয়ান কোচ কি কিছুটা নস্ট্যালজিক হয়ে পড়ছেন? প্রশ্ন শুনে স্বভাব-বিরুদ্ধ ভাবে হেসে ওঠেন আর্মান্দো। বলেন, “আমি পেশাদার। ডেম্পো অবশ্যই আমার সন্তানতুল্য। কিন্তু আমি তাকে বড় করেছি নিজের হাতে। বিয়ে দিয়েছি। এখন আর আমার কোনও দায়িত্ব নেই। আমি এখন শুধুই ইস্টবেঙ্গল নিয়ে ভাবছি।” পাশাপাশি যোগ করলেন, “এই মুহূর্তে ডেম্পো ভাল খেলছে। ওদের চার বিদেশি ভাল ফর্মে রয়েছে। আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।”
ইস্টবেঙ্গলের সবচেয়ে বড় সমস্যা বেটোদের আটকানোর জন্য উগা ওপারার মতো বিদেশি ডিফেন্ডারের অনুপস্থিতি। টোলগে ওজবেদের আটকাতে তাই লাল-হলুদকে ভরসা করতেই হবে অর্ণব মণ্ডলদের ওপর। গোদের ওপর বিষফোঁড়া, চোটের জন্য জেমস মোগা সম্ভবত শুরু থেকে খেলতে পারবেন না। সে ক্ষেত্রে চিডির সঙ্গী হতে পারেন সুয়োকা। মোগা ফিট না থাকায় মাত্র দু’জন বিদেশি নিয়েই ডেম্পো বধের স্ট্র্যাটেজি তৈরি করতে হচ্ছে ইস্টবেঙ্গল কোচকে।
টোলগে এবং হারুন আমিরি ডেম্পোতে যোগ দেওয়ার পর অনেক বেশি সংঘবদ্ধ ফুটবল খেলছে আর্থার পাপাসের দল। চার বিদেশি এবং ক্লিফোর্ড-দেবব্রত-সঞ্জু প্রধানদের মতো অভিজ্ঞ ফুটবলারদের সঙ্গে লড়াকু মানসিকতার এক ঝাঁক জুনিয়রদের নিয়ে লড়তে নামবেন অস্ট্রেলীয় কোচ। ইস্টবেঙ্গল বধের স্বপ্ন দেখা পাপাস বলছিলেন, “ফেড কাপ থেকে আমার টিম ভাল খেলছে। সেই ধারাটাই ধরে রাখতে চাই। কাল তিন পয়েন্টই আমাদের লক্ষ্য থাকছে।”
কল্যাণীতে এসে চিডিদের ৩-১-এ হারিয়ে গিয়েছিলেন বেটোরা। তাই আজকের ম্যাচ লাল-হলুদের বদলার ম্যাচও। সঙ্গে থাকছে ডার্বির আগে ডেম্পোকে হারিয়ে নিজেদের আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর তাগিদও।
এখন দেখার, মেহতাব-চিডিরা লক্ষ্যে সফল হতে পারেন কি না! |
রবিবারে আই লিগই
উনাইটেড স্পোর্টস: লাজং এফ সি (কল্যাণী, ২-৩০)
ইস্টবেঙ্গল: ডেম্পো (মারগাও, ৬-০০)
বেঙ্গালুরু: মুম্বই এফ সি (বেঙ্গালুরু, ৪-০০) |