নিজের প্রবল জেদ ধরে থাকলে তাঁর তো ‘চায়নাম্যান’ হওয়ার কথাই নয়!
খুব বেশি হলে কী হতে পারতেন কুলদীপ যাদব? দেশের আর পাঁচ জন তরুণ পেসারের সমগোত্রীয়। অনূর্ধ্ব উনিশ বিশ্বকাপে ভারতের হয়ে খেলতেও পারতেন, না-ও পারতেন। কিন্তু তাঁর নামের পাশে ‘বিরল প্রজাতি’ বিশেষণটা কোনও দিন বসত না।
শনিবারের সন্ধে। ভারত একটু আগে হেরে গিয়েছে ইংল্যান্ডের কাছে, হেরে গিয়েছে অনূর্ধ্ব উনিশ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে। কিন্তু সে সব নিয়ে আর আলোচনা কোথায়? দেশজ ক্রিকেটমহল বরং ব্যস্ত এক আশ্চর্য স্পিনারের সন্ধান পাওয়া নিয়ে, যিনি কি না ‘চায়নাম্যান।’ আজ পর্যন্ত যে প্রজাতির স্পিনার দেখেনি ভারতীয় ক্রিকেট। ভারত কেন, ক্রিকেটবিশ্বও বা আর ক’টা দেখেছে? ক্রিকেটমহলে ততক্ষণে বলাবলি শুরু, ভারত হেরেছে, কিন্তু ইংরেজরা কুলদীপকে হারাতে পারেননি। শনিবারও ঠিক তিনটে উইকেট নিয়ে তিনি চলে গিয়েছেন।
ক’জন জানেন, রাতারাতি নিজেকে ‘চায়নাম্যান’ বলে আবিষ্কার করে কোচিং ক্যাম্প থেকে সুযোগ পেলেই পালাতেন কুলদীপ? স্পিন বোলিং নিয়ে বিতৃষ্ণায়। |
কুলদীপ: বিরল ভারতীয় স্পিনার। |
ক’জন জানেন, কেরিয়ারের গোড়ার দিকে ওয়াসিম আক্রমকে বলতে গেলে পুজো করতেন ভারতীয় স্পিনের ‘নেক্সট বিগ থিং’? পরে আক্রমের জায়গায় তাঁর মগজে শেন ওয়ার্ন নামটা কোচ ঢুকিয়ে দেওয়ায় অসম্ভব রাগও করেছিলেন।
ক’জন জানেন, স্পিন বোলিংয়ে অনীহা দেখানোয় তাঁকে পত্রপাঠ ক্যাম্প ছেড়ে চলে যাওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন কোচ কপিল পাণ্ডে!
কানপুর থেকে ফোনে এ দিন সন্ধেয় যখন কথাগুলো বলছিলেন কুলদীপের কোচ, দেখা গেল ছাত্রের পুরনো ইতিহাস আজও তাঁর দিব্যি মনে আছে। অনূর্ধ্ব উনিশ বিশ্বকাপে ছাত্রের ধুন্ধুমার পারফরম্যান্স দেখার পর আনন্দবাজারকে কপিল বলছিলেন, “বারো বছর আগে আমার ক্যাম্পে প্রথম এসেছিল। প্রথমে পেস বোলিং করত কুলদীপ। ভাল সুইং ছিল হাতে। কিন্তু চেহারা দেখে মনে হয়েছিল, ও পেস বোলার হতে পারবে না। সপ্তাহখানেক পর ওকে বললাম, স্পিনটা চেষ্টা করো। প্রথমটাই পড়ল চায়নাম্যান ডেলিভারি!”
ছাত্রকে ‘চায়নাম্যান’ আবিষ্কার করে খুব স্বাভাবিক ভাবেই গুরু কপিলের নির্দেশ ছিল পেস আর নয়। স্পিনে মন দাও। যা শুনে নাকি বেশ বিরক্তিই দেখিয়েছিলেন খুদে কুলদীপ। একটা সময় কোচের সঙ্গে প্রায় ‘লুকোচুরি’-র সম্পর্ক ছিল। মানে, কোচের সামনে স্পিন বোলিং। আর কোচের চোখের আড়ালে হলেই ‘আক্রম’ হয়ে ওঠার চেষ্টা। “ওর মাথা থেকে পেসের ভূত তাড়াতে কম খাটতে হয়নি। মাঝে মাঝেই এসে বলত যে, স্যার আমি আবার পেসটা করি না? একটা সময় ওকে পরিষ্কার বলে দিয়েছিলাম যে, স্পিন বোলিং না করলে তোমাকে ক্যাম্প থেকে বার করে দেব।”
যার পর আর নাকি বেগড়বাঁই করেননি বর্তমানের ‘বিখ্যাত ছাত্র’। শেন ওয়ার্নের বোলিং ভিডিও চালিয়ে ক্লাস চলত, কুলদীপকে বোঝানো হত দ্যাখো, ওয়ার্ন লেগস্পিনটা ডান হাতে করছে। তুমি বিরল কারণ, বাঁ হাতে তুমি লেগস্পিনটা করতে পারো। যা কি না চায়নাম্যান ডেলিভারি। “এক সপ্তাহ লেগেছিল ওর স্পিনের খুঁটিনাটি শিখতে। ব্যস,” বলে দিলেন কপিল।
যার পর আর কেউ কোথাও আটকাতে পারেনি কুলদীপকে। সব পর্যায়েই মোটামুটি প্রতি বার চল্লিশ, পঞ্চাশ করে উইকেট। বুচিবাবুতে যা বিশ্বকাপেও তাই। অপেক্ষা শুধু এ বার নাইট জার্সিতে স্পিন-সম্মোহনের। |