|
|
|
|
গুজরাত-মিথ চুরমারে নয়া অস্ত্রাগার রাহুলের
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি
২২ ফেব্রুয়ারি |
আদতে এ এক তথ্য ভাণ্ডার। কংগ্রেসের অস্ত্রাগারও বটে। দলের নেতা-মুখপাত্রদের উদ্দেশে রাহুল গাঁধীর নির্দেশ এখান থেকেই বেছে নিন উপযুক্ত অস্ত্র, নিক্ষেপ করুন নরেন্দ্র মোদীর দিকে। মোদী-মডেল নিয়ে বিজেপি ঢাক পেটালেই চটজলদি তথ্য দেখে পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ুন। চুরমার করুন মোদী-মিথ! সাংবাদিক বৈঠক থেকে সোশ্যাল মিডিয়া মোদী বিরোধিতায় সরব হোক কংগ্রেস।
তা বলে এত দেরিতে? লড়াইয়ে নামতে বড় বেশি দেরি হয়ে গেল না? নিন্দুকদের সেই সমালোচনায় কর্ণপাত না করে আপাতত এই তথ্য ভাণ্ডার নিয়েই গদগদ টিম রাহুল। কিন্তু কী সেই বস্তু? রাহুল শিবির জানাচ্ছে, লোকসভা ভোটের আগে একটি ওয়েবসাইট বানিয়েছে তারা, যাতে ঠাসা রয়েছে গুজরাত-তথ্য। রয়েছে বিজেপির ‘গুজরাত মডেলে’র সঙ্গে ইউপিএ-র ‘ভারত নির্মাণ’ মডেলের ফারাক, পরিসংখ্যান ইত্যাদি। প্রচারের ঢাকের পেছনে গুজরাত নিয়ে ‘প্রকৃত’ তথ্য, কর্মসংস্থান, শিক্ষা, স্বাস্থ্য-সহ মানব সম্পদ উন্নয়নের নানা নিরিখে অন্য রাজ্যের তুলনায় গুজরাত কতটা পিছিয়ে, তারও হিসেব রয়েছে। সূত্রের খবর, এতে তথ্য রাখার জন্য গত দু’মাস ধরে গুজরাতের মাঠে ময়দানে ঘুরছে কংগ্রেসের দু’টি দল। একটি শীলা দীক্ষিতের পুত্র সন্দীপ দীক্ষিতের গবেষণা দল। তারা মূলত, গুজরাত সরকারের দুর্নীতি, মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা, দাঙ্গার ফলশ্রুতি নিয়ে তথ্য সংগ্রহ করছে। দ্বিতীয় দলটি পাঠিয়েছেন প্রিয়ঙ্কা বঢরা স্বয়ং। তারা আবার স্থানীয় সব টিভি চ্যানেল ও সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে গুজরাত সরকারের নানা অনিয়ম-কেলেঙ্কারির ফুটেজ সংগ্রহ করছে। কংগ্রেস সূত্রে বলা হচ্ছে, টিভি চ্যানেলের বিতর্ক সভা থেকে ভোটের প্রচার সভায় কংগ্রেস নেতারা তো এ সব তথ্য ব্যবহার করবেনই, দু-তিন দিনের মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়াতেও এই সব তথ্য-পরিসংখ্যান ব্যাপক ভাবে প্রচার করবে কংগ্রেস।
এমন নয় যে, মোদীর বিরুদ্ধে কংগ্রেসের এই প্রচার নতুন। অতীতে এক বার রাজীব গাঁধী ফাউন্ডেশন গুজরাতকে দেশের অন্যতম অগ্রণী রাজ্যের মর্যাদা দিয়েছিল। তখন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ছিলেন বিবেক দেব রায়। এ নিয়ে কংগ্রেসের মধ্যেই সমালোচনার ঝড় উঠেছিল। পরে রাজীব গাঁধী ফাউন্ডেশনের বক্তব্যের বিরোধিতায় প্রচুর তথ্য প্রকাশ করেছিল কংগ্রেস। কিন্তু কংগ্রেসের একাধিক শীর্ষ নেতারই বক্তব্য সেই প্রচার সুসংহত ও ধারাবাহিক ভাবে হয়নি। বিপরীতে মোদী তাঁর নিজের বিপণনে এমন কৌশল নিয়েছেন যে কংগ্রেস পিছিয়ে গিয়েছে। নানা ক্ষেত্রে অনেক দিক থেকে পিছিয়ে থাকলেও গোরক্ষপুর থেকে গোবিন্দপুর, সর্বত্রই মানুষের ধারণা গুজরাত বুঝি স্বর্গরাজ্য। দেরিতে হলেও, লোকসভা ভোটের আগে সেই ধারণার মূলে কুঠারাঘাত করতে চাইছেন রাহুল। মোদীকে বিঁধতে পেশাদারিত্বের সঙ্গে প্রচার চাইছেন তিনি। যদিও রাহুলের এই তথ্য ভাণ্ডার থাকবে সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। কারণ, ওয়েবসাইটটির পাসওয়ার্ড দেওয়া হচ্ছে শুধু কংগ্রেসের বাছাই করা নেতা-মুখপাত্রদেরই।
রাহুলের ঘনিষ্ঠ সূত্রে বলা হচ্ছে, এই ওয়েবসাইটের গুরুত্ব দলে এখন যথেষ্ট। অতীতে দেখা গিয়েছে, কংগ্রেস নেতারা একই বিষয় নিয়ে আলাদা আলাদা সুরে কথা বলছেন। কিন্তু কোনও ঘটনা নিয়ে দলের অবস্থান এখন দ্রুত এই ওয়েবসাইটে তুলে ধরছে টিম রাহুল। যেমন দু’দিন আগে জয়ললিতা সরকার রাজীব গাঁধীর হত্যাকারীদের মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করার সঙ্গে সঙ্গেই দলীয় অবস্থান এই সাইটে জানানো হয়।
প্রশ্ন উঠেছে, লোকসভা ভোট যখন ঘাড়ের ওপরে এসে পড়েছে, তখন এমন অস্ত্রাগার কতটা কার্যকর হতে পারে? খোদ রাহুল গাঁধীর ফরমান যখন, তখন বিষয়টিকে গুরুত্ব না দিয়ে উপায় নেই। তা ছাড়া সামগ্রিক উদ্যোগের মধ্যে পেশাদার মিডিয়া ব্যবস্থাপনাও রয়েছে। কিন্তু ঘরোয়া আলোচনায় কংগ্রেসের অনেক নেতাই বলছেন, মোদী-বিরোধিতায় নামতে দেরি হয়ে গেল না কি? এমন নয় যে ‘মোদী মডেল’ সম্পর্কে মানুষের ধারণা এক দিনে তৈরি হয়েছে। ধারাবাহিক প্রচারের মাধ্যমে এই মিথ গড়েছেন মোদী। এত দেরিতে নেমে সেই মিথকে চুরমার করার আশা করাটা বাড়াবাড়িই। তা ছাড়া তথ্য পরিসংখ্যানের কচকচি নিয়ে মানুষের বিশেষ মাথাব্যথাও নেই। বরং রাহুল যদি সরাসরি মোদীর সমালোচনায় ময়দানে নামেন, তা হলে কিছুটা হলেও হাওয়া ঘুরতে পারে। গুজরাতে মোদীর খাস তালুকে গিয়ে এই কাজটিই করেছিলেন রাহুল গাঁধী। |
|
|
|
|
|