ব্যবধান বাড়িয়েই চলেছে বিজেপি

২২ ফেব্রুয়ারি
শেষের মুহূর্ত যত এগিয়ে আসছে, ততই বাড়ছে ব্যবধান।
এক মাস আগে জনমত সমীক্ষায় ইউপিএ জোটের থেকে ১২৫ আসনে এগিয়ে ছিল এনডিএ। এ বারের সমীক্ষা বলছে, সেই ফারাক বেড়ে হয়ে যাবে ১৪৪! একা বিজেপি-রই ২১৭টি আসন পাওয়ার সম্ভাবনা। আর কংগ্রেস? তাদের আসন সংখ্যা আগেই একশোর নীচে নামার ইঙ্গিত মিলেছিল। এ বারের সমীক্ষা অনুযায়ী তা নেমে যেতে পারে ৭৩-এ, যা কংগ্রেসের ইতিহাসে সব থেকে খারাপ ফল। আবার উল্টো দিকে, বিজেপি এ বারে অটলবিহারী বাজপেয়ীর নেতৃত্বে জয়কেও টপকে যেতে পারে। সমীক্ষা থেকে স্পষ্ট, রাহুল গাঁধীকে প্রচারের মুখ করেও শাসক দলের সুবিধা হবে কিনা সন্দেহ। যত দিন যাচ্ছে, দু’দলের ব্যবধান বাড়ছে। এমনকী, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পছন্দের ক্ষেত্রেও সনিয়া-পুত্রকে অনেক পিছনে ফেলে দিয়েছেন নরেন্দ্রভাই দামোদরভাই মোদী।
জনমত সমীক্ষা যে সব সময়ে মেলে, তা নয়। তবে মানুষ কী ভাবছে, তার আঁচ পেতে এই সমীক্ষা অনেক ক্ষেত্রেই সাহায্য করে। এ বারেও এবিপি আনন্দ-এসি নিয়েলসেনের জনমত সমীক্ষা বলছে, এখনই লোকসভা ভোট হলে এনডিএ ২৩৬টি আসন পেতে পারে। জানুয়ারি মাসে এই একই সমীক্ষা বলেছিল, এনডিএ ২২৬টি আসন পেতে পারে। অর্থাৎ এক মাসে মোদী আরও দশটি বাড়তি আসন নিয়ে এসেছেন এনডিএ-র ঝুলিতে। উল্টো দিকে ইউপিএ-র আসন ১০১টি থেকে কমে দাঁড়াচ্ছে ৯২টিতে। টাইমস নাও-সি ভোটার অক্টোবরের পর ফেব্রুয়ারিতে ফের জনমত সমীক্ষা চালাল। তাতেও একই তথ্য ইউপিএ-র আসন কমছে, এগিয়ে চলেছে বিজেপি।
আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, আঞ্চলিক দলগুলি সকলে মিলে বিপুল আসন জিততে চলেছে। কংগ্রেস, বিজেপি ও বাম বাদ দিলে বাকি দলগুলি মিলে ১৮৬টি আসন পেতে পারে। ভোটের শতকরা হারের হিসেবেও এই দলগুলি একসঙ্গে মিলে ইউপিএ এবং এনডিএ-র থেকে বেশি ভোট পেতে পারে বলে জানাচ্ছে সমীক্ষা। এনডিএ-র ৩১% ও ইউপিএ-র ২৪% ভোট পাওয়ার সম্ভাবনা। সেখানে অন্য দলগুলির ঝোলায় যেতে পারে ৪০% ভোট।
এ দিনের সমীক্ষা দেখার পরে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের বক্তব্য, এর থেকে একাধিক বিষয় উঠে আসছে। যেমন, এই ফল যদি সত্যি হয়, তবে তা যতটা না বিজেপির অনুকূল হাওয়া, তার থেকে বেশি কংগ্রেস-বিরোধী ভোট। আরও স্পষ্ট করে বললে, মোদী জাদুর থেকে বেশি রয়েছে মনমোহন-সরকারের প্রতি বিরক্তি। কেন এমন ভাবছেন তাঁরা? সমীক্ষার ফল দেখিয়েই তাঁরা বলছেন, যদি সত্যিই বিজেপি-র জয়জয়কার হবে, তা হলে আঞ্চলিক দলগুলি এত আসন পায় না। যে রাজ্যে যে আঞ্চলিক দল এই মুহূর্তে শক্তিশালী, সেখানে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তারাই ফায়দা কুড়োবে বলে ইঙ্গিত সমীক্ষায়।
কেন এমন কংগ্রেস-বিরোধিতা? সারা দেশের ১২৯টি কেন্দ্রের যে ২৯ হাজার ২৫২ জনের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে এই সমীক্ষায়, তাঁদের বেশির ভাগই এর জন্য দৈনন্দিন জীবনের সমস্যা মূল্যবৃদ্ধিকে দায়ী করেছেন। তার পরে এসেছে দুর্নীতি এবং বেকারত্ব। মূল্যবৃদ্ধি ও দুর্নীতি রুখতে না-পারা তো বটেই, একই সঙ্গে আর্থিক সংস্কারের গতি বাড়িয়ে নতুন কর্মসংস্থান তৈরি করতেও ব্যর্থ হয়েছে মনমোহন-সরকার। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই দুইয়ের খেসারতই দিতে হচ্ছে ইউপিএ-কে। যার ফায়দা পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল কুড়োচ্ছে তো ওড়িশায় বিজু জনতা দল। আবার তামিলনাড়ুতে পাচ্ছেন জয়ললিতা। ফলে দেশের সব প্রান্তের সব আঞ্চলিক দলকে জুড়লে তা বড় চেহারা নিচ্ছে। তবে লোকসভা ভোটের শেষে নিজেদের মধ্যেকার বিরোধ মিটিয়ে তারা ক’জন একজোট হতে পারবে, তা বড় প্রশ্ন। এর জবাবের উপরেই দাঁড়িয়ে আছে তৃতীয় ফ্রন্ট গড়ার সম্ভাবনা। তবে শেষ পর্যন্ত বামেদের নিয়েই হোক, বা তৃণমূলকে সামনে রেখে, যদি এমন কোনও ফ্রন্ট গঠিত হয়, তা হলে তা ষোড়শ লোকসভায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে বলেই মনে করছেন অনেকে।
অন্য দিকে প্রশ্ন, বিজেপি ম্যাজিক সংখ্যা ২৭২-এর কত কাছে যেতে পারবে?
আজকের সমীক্ষার ফল তাদের অনেকটাই এগিয়ে দিয়েছে। ব্যবধান এখন মাত্র ৩৬ আসনের। বিজেপি নেতারা বলছেন, এই যদি ফল হয়, তা হলে ওই ব্যবধান মিটিয়ে ফেলতে কোনও সমস্যাই হবে না। কারণ, তখন অনেক ছোট দলই তাঁদের পাশে এসে দাঁড়াবে। ঠিক যেমনটা হয়েছিল ২০০৪ বা ২০০৯-এ ইউপিএ জেতার পরে।
বিজেপি-র কোথায় আসন বাড়ছে, সেই প্রশ্নের উত্তর লুকিয়ে রয়েছে উত্তরপ্রদেশে। এবিপি আনন্দ-এসি নিয়েলসেনের সমীক্ষা অনুযায়ী, বিজেপি সেখানে ৮০টির মধ্যে ৪০টি আসন পেতে পারে, যা আগের সমীক্ষার থেকে পাঁচ বেশি। কংগ্রেস তো বটেই, মায়াবতীরও আসন কমছে এর ধাক্কায়। মনে করা হচ্ছে, নিজের বিশ্বস্ত সেনাপতি অমিত শাহকে উত্তরপ্রদেশে বসিয়ে রাখাই ফল দেবে মোদীকে। এবং বিহার। সেখানে নীতীশ কুমার জোট ভেঙেছেন। এ বারে সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, সেখানে ৪০টির মধ্যে ২১টি আসন জিতে প্রাক্তন জোট সঙ্গীকে কোণঠাসা করে দেবে বিজেপি। একই ভাবে মধ্যপ্রদেশ, গুজরাত, রাজস্থান, ছত্তীসগঢ়, ঝাড়খণ্ডেও তারা বড় জয় পাবে বলে সমীক্ষায় ইঙ্গিত।
এর জন্য মোদীর ‘ভোট ফর ইন্ডিয়া’ প্রচারকেই দায়ী করছেন সকলে। বলা হচ্ছে, অটলবিহারী বাজপেয়ীর সময়ে যেমন ‘কার্পেট বম্বিং’ প্রচার চালিয়েছিল বিজেপি (যার অর্থ, একাধিক নেতা একাধিক জায়গায় একসঙ্গে প্রচার চালাবেন), এ বারে তা নয়। এই ভোট-প্রচারের একটাই কথা, মোদী। তিনি কখনও উত্তর-পূর্বের অরুণাচল প্রদেশে, তো কখনও কেরলে। একই ভাবে রাহুল গাঁধীর মুখ বিজ্ঞাপনে দেখিয়ে প্রচারে গিয়েছে কংগ্রেসও। কিন্তু এখনও এমন কোনও ইঙ্গিত নেই, যাতে বোঝা যাবে, মনমোহন সরকারের ব্যর্থতাকে ভুলে কংগ্রেস নতুন প্রজন্মকে সমর্থন জানাচ্ছে মানুষ।
সাত নম্বর রেসকোর্স রোডে কে এগিয়ে, তার হিসেব দেখলেই এটা স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সমীক্ষা বলছে, ৫৭ শতাংশ মানুষ ওই বাড়ির নতুন বাসিন্দা হিসেবে মোদীকেই দেখতে চাইছেন। তুলনায় মাত্র ১৭ শতাংশ চাইছেন রাহুলকে। এমনকী, যে সব রাজ্যে আঞ্চলিক দলের নেতানেত্রীদের রমরমা, সেখানেও অপেক্ষাকৃত কম হারে হলেও প্রধানমন্ত্রী পদে প্রথম পছন্দ মোদীই। বিজেপি নেতারা বলছেন, সংগঠনের শক্তি বাড়ছে। প্রচারের জোর বাড়ছে। তাতেই কংগ্রেসকে আরও পিছনে ফেলছেন তাঁরা। আর কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব এই সব সমীক্ষাকে গুরুত্ব দিতেই নারাজ। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম বলেন, “এই সব সমীক্ষা দেখে এনডিএ-জমানার ‘ভারত উদয়ের’ প্রচারের কথা মনে পড়ছে। তখনও সবাই বলেছিল, এনডিএ প্রচুর আসনে জিতবে। তা মেলেনি। আমরা পিছিয়ে থেকেই ভোটে যেতে চাই। তাতেই আমাদের লাভ।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.