উত্তর-পূর্বে তুরুপের তাস হিন্দুত্বই

২২ ফেব্রুয়ারি
বিজেপি ক্ষমতায় এলে উত্তর-পূর্বে ডি-ভোটার, ডিটেনশন ক্যাম্প বলে কিছু থাকবে না। থাকবে না অনুপ্রবেশের সমস্যা—এই প্রতিশ্রুতিতেই উত্তর-পূর্বের সীমান্ত এলাকায় নিজের ঘুঁটি সাজালেন নরেন্দ্রভাই মোদী। আজ শিলচরে ও আগরতলায় মোদীর বক্তব্যে বড় বেশি করে ফিরে এসেছে ‘হিন্দুত্ব’। মোদী ফিরে গিয়েছেন বিজেপি-র সেই পুরনো লাইনে।
স্মরণকালে শিলচর এত বড় জনসভা দেখেনি। নরেন্দ্র মোদীর ‘বরাক বিকাশ সমাবেশ’ আজ বরাক উপত্যকার আগের সব রাজনৈতিক সমাবেশের ভিড়ের রেকর্ড কার্যত ভেঙে দিয়েছে। প্রায় ২ লক্ষ মানুষের সভাস্থলে নির্ধারিত সময়ের প্রায় তিন ঘন্টা পরে পৌঁছন মোদী। তবু সভাস্থল ছেড়ে মানুষ নড়েনি।
‘ডি-ভোটার’, ‘ডিটেনশন ক্যাম্প’ শব্দের সঙ্গে অন্য রাজ্যের মানুষ পরিচিত নন। কিন্তু অসমের বাঙালিদের কাছে শব্দগুলি আতঙ্কের। পুলিশ কাউকে বাংলাদেশি বলে সন্দেহ করলে নির্বাচন কমিশন ভোটার তালিকায় তাঁর নামের পাশে ‘ডি’ লিখে দেয়। অর্থাৎ ‘ডাউটফুল’ বা সন্দেহজনক ভোটার। ‘ডি’ চিহ্নিত হওয়ার পর পুলিশ তাঁকে ধরে নিয়ে যায় ডিটেনশন ক্যাম্পে। ক্যাম্প মানে জেল-ই। বিচারে ভারতীয় প্রমাণ হলে তবেই মুক্তি। জামিন বলে কিছু নেই।
ফুলের মালায় মোদীকে অভ্যর্থনা। শনিবার আগরতলায়। ছবি: পিটিআই।
বিচার যত দিন চলবে, ভারতীয় হলেও তত দিন জেলেই থাকতে হবে। এমন ব্যবস্থায় বিস্মিত নরেন্দ্র মোদী। ভাষণের শুরুতেই উল্লেখ করেন অর্জুন নমঃশূদ্রের কথা। ডি-ভোটার হিসেবে চিহ্নিত হওয়ায় যিনি আত্মহত্যা করেছিলেন। মোদীর আহ্বান, “তাঁর বলিদান ভুলে যাবেন না। আমার উপর ভরসা রাখুন। অর্জুনের মতো আর কাউকে প্রাণ দিতে হবে না।”
তাঁর কথায়, “এখানে বাংলাদেশ থেকে দু’ধরনের মানুষ আসে। এক পক্ষ ভারতের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে। দ্বিতীয় পক্ষ আসেন সে দেশে নির্যাতন সহ্য করতে না-পেরে। যাঁরা নির্যাতিত, তাঁদের আশ্রয় দেওয়া ভারতের রীতি। বাংলাদেশ থেকে আসা কোনও হিন্দু অনুপ্রবেশকারী হতে পারে না। তাঁরা শরণার্থী।” তিনি তাঁদের ভারতীয় নাগরিকত্ব দেওয়ার প্রতিশ্রতি দেন। কী ভাবে তা সম্ভব হবে, তারও দিকনির্দেশ করেন মোদী। বলেন, “পাকিস্তানে নির্যাতিত হয়ে গুজরাত ও রাজস্থানে আসা হিন্দুদের নাগরিকত্ব দেওয়া হয়েছে। একই ভাবে নাগরিকত্ব পাবেন বাংলাদেশ থেকে অসমে আসা হিন্দুরা।” এর পরও আইনে বাধা থাকলে তিনি সংবিধান সংশোধনের পথে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। তাঁর কথায়, “শুধু বাংলাদেশ কেন, বিশ্বের যে কোনও জায়গায় হিন্দুরা নির্যাতনের শিকার হলে তাঁদের ভরসার জায়গা হবে হিন্দুস্তানই।”
আগরতলাতেও এই একই সুর ধরে রেখেছিলেন নরেন্দ্র মোদী। বামশাসিত ত্রিপুরায় বার বার তাঁর ভাষণে ফিরে এসেছে ‘হিন্দুস্থানের ভবিষ্যৎ সুরক্ষার’ কথা। তিনি বলেন, “ত্রিপুরার পাশেই রয়েছে প্রতিবেশী বাংলাদেশ। অনুপ্রবেশের সমস্যায় ত্রিপুরা ব্যতিব্যস্ত।” রসিকতা করে তিনি বলেন, “গুজরাতের পাশে রয়েছে পাকিস্তান। পাকিস্তানের কাছে আমাদের গুজরাতই কিন্তু ‘পরেসানি’-র কারণ।”
ত্রিপুরা সফরে আসার আগে মোদী ভাল হোমওয়ার্ক করে এসেছেন, তা স্পষ্ট তাঁর ত্রিপুরার রাজনৈতিক ইতিহাসের চর্চাতেই। ভারত বিভাজনের সময়ে পাকিস্তান যখন ত্রিপুরাকে ‘গ্রাস’ করতে উদ্যত সে সময়ে তৎকালীন মহারানি কাঞ্চনপ্রভা ছুটে গিয়েছিলেন সর্দার বল্লভভাই পটেলের কাছে। কার্যত পটেলের হস্তক্ষেপেই আজকের ত্রিপুরাকে ভারতের অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব হয়েছিল।
সে কথা উল্লেখ করে মোদী বলেন, ‘‘আমি গর্বিত, কারণ আমি সর্দারের সেই ভূমিতেই জন্মেছি।” দেশের জন্য ত্রিপুরার অবদানের প্রসঙ্গ টেনে আনেন মোদী। তিনি বলেন, ‘‘ত্রিপুরার মহারাজার মদতেই দেশ জগদীশ চন্দ্র বসুকে জগৎ বিখ্যাত বিজ্ঞানী হিসেবে পেয়েছে।” রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে ত্রিপুরার নাড়ির টানের কথা বলতে ভোলেননি মোদী। আর শেষে ত্রিপুরাবাসীর ভাবাবেগকে উস্কে দিতে বলেন, “শচীন দেব বর্মণ এবং আর ডি বর্মণ না থাকলে তো জীবনটাই ‘শুখা’ হয়ে যেত।” স্বাভাবিক ভাবেই হাততালির ঝড় ওঠে সভায়।
ত্রিপুরার আর্থিক ‘অনগ্রসরতার’ কথা উল্লেখ করে গুজরাতের ‘উন্নয়নের’ প্রসঙ্গ টেনে আনেন মোদী। আক্রমণ করেন দেশের একমাত্র বামশাসিত রাজ্যের শাসক দলকে। তাঁর অভিযোগ, “এখানে জীবন ধারণের জন্যও নওজওয়ানদের সিপিএমের গোলানি করতে হয়।” রাজ্যের প্রাকৃতিক সম্পদকে সঠিকভাবে কাজে না লাগানোর জন্য কাঠগড়ায় দাঁড় করান বাম সরকারকে। তাঁর বক্তব্য, “ফল-সব্জি উৎপাদন ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণের বহু সুযোগ এ রাজ্যে রয়েছে। তা দিয়েই রাজ্য সরকার বিশ্ববাজার দখল করতে পারত, অথচ করেনি।” তাঁর আশ্বাস, ক্ষমতায় এলে এই ব্যাপারে তিনি নিজে উদ্যোগী হবেন।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.