চলতি অর্থবর্ষের চতুর্থ ত্রৈমাসিকেই ইউনাইটেড ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া (ইউবিআই) ফের নিট মুনাফায় ফিরে আসতে চায়। কী ভাবে তা করা সম্ভব, সে ব্যাপারে আলোচনার জন্য শনিবার পরিচালন পর্ষদ বৈঠকে বসে। ওই বৈঠকেই এ ব্যাপারে কর্মসূচি ঠিক করা হয়েছে।
ইউবিআই-এর এগজিকিউটিভ ডিরেক্টর সঞ্জয় আর্য বলেন, “আমাদের ব্যাঙ্ক মুনাফায় রয়েছে। কিন্তু অনুৎপাদক সম্পদের জন্য আর্থিক সংস্থান করতে গিয়েই লোকসানে চলে গিয়েছি। এখন একমাত্র লক্ষ্য, কী করে অনুৎপাদক সম্পদ কমানো যায়। পাশাপাশি, চলতি অর্থবর্ষে যাতে নতুন করে কোনও অনুৎপাদক সম্পদের সৃষ্টি না-হয়, তা নিশ্চিত করাই প্রথম কাজ।”
নিট মুনাফায় ফেরার লক্ষ্যেই পরিচালন পর্ষদ আপাতত নতুন শাখা খোলার কর্মসূচি স্থগিত রাখার সিদ্ধান্তও নিয়েছে। এর আগে চলতি ২০১৩-’১৪ অর্থবর্ষে ২ হাজারটি শাখা খোলার কর্মসূচি হাতে নিয়েছিল ব্যাঙ্ক। তার মধ্যে প্রায় ১৮০০টি ইতিমধ্যেই খোলা হয়েছে। তবে এই অর্থবর্ষের বাদবাকি সময়ে আর কোনও শাখা খোলা হবে না। |
কলকাতায় ব্যাঙ্কের সদর দফতর।—নিজস্ব চিত্র। |
মুনাফায় ফিরতে খণের ক্ষেত্রে নেওয়া হবে দ্বিমুখী ব্যবস্থা। এক দিকে ইতিমধ্যেই যে-সব অনাদায়ী ঋণ অনুৎপাদক সম্পদে পরিণত হয়েছে, সেগুলিকে কী করে উৎপাদক সম্পদে পরিণত করা যায়, সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নেবেন ইউবিআইয়ের বর্তমান কর্তৃপক্ষ। অন্য দিকে প্রতিটি ঋণ মঞ্জুরের ক্ষেত্রে বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করা হবে।
ব্যাঙ্কের পরিচালন ব্যবস্থাও ঢেলে সাজার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পর্ষদ। পুরো পরিচালন ব্যবস্থাটিকে দু’ভাগে ভাগ করা হয়েছে। ব্যাঙ্কের দুই এগজিকিউটিভ ডিরেক্টর সঞ্জয় আর্য ও দীপক নারাঙ্গ এক একটির দায়িত্বে থাকবেন।
এ ছাড়া ব্যাঙ্কের পরিষেবার পরিকাঠামোকে বেশ কয়েকটি অঞ্চলে ভাগ করা হয়েছে। এক এক জন জেনারেল ম্যানেজারের অধীনে তিনটি করে অঞ্চল থাকবে। আর্য বলেন, “ঘুরে দাঁড়াতে ব্যাঙ্কের পিওন থেকে এগজিকিউটিভ ডিরেক্টর পর্যন্ত সমস্ত শ্রেণির কর্মীর সহযোগিতা চেয়েছি। এতে কোনও সন্দেহ নেই, আমাদের মৌলিক আর্থিক কাঠামো মজবুত। অনুৎপাদক ঋণ খাতে আর্থিক সংস্থান কমাতে পারলেই ইউবিআই ফের মুনাফার মুখ দেখবে।”
উল্লেখ্য, অনুৎপাদক সস্পদ বৃদ্ধি ও বিপুল নিট লোকসানকে কেন্দ্র করে দেশ জোড়া বিতর্কের মুখে মাত্র ৩ দিন আগে গত বৃহস্পতিবারই ব্যাঙ্কের সিএমডি অর্চনা ভার্গব পদ ছেড়েছেন। স্বাস্থ্যের কারণ দেখিয়ে তিনি স্বেচ্ছাবসরের জন্য অর্থ মন্ত্রকে আবেদন করেন। চটজলদি সেই আবেদন গ্রহণও করে নেয় মন্ত্রক।
ইউবিআই সূত্রের খবর, ব্যালান্স শিটে অনুৎপাদক সম্পদ ঘোষণা করার ব্যাপারে ব্যাঙ্কের উচ্চপদস্থ কর্তাদের সঙ্গে বিরোধ বাধে প্রাক্তন সিএমডির। ভার্গব এমন সব ঋণকে অনুৎপাদক সম্পদ হিসাবে দেখান, যেগুলি চলতি অর্থবর্ষেই আদায় হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু ব্যাঙ্কের অন্য কর্তারা সে ব্যাপারে একমত ছিলেন না। তাঁদের আপত্তি উপেক্ষা করেই ভার্গব সিদ্ধান্তে অটল থাকেন বলে ইউবিআই সূত্রের অভিযোগ। ফলে ওই সব অনুৎপাদক সম্পদ খাতে আর্থিক সংস্থান করতে গিয়েই চলতি অর্থবর্ষের দ্বিতীয় ও তৃতীয় ত্রৈমাসিকে ব্যাঙ্কের নিট লোকসান হয় ১৭২৭.৫৫ কোটি টাকা। অথচ ওই দুই ত্রৈমাসিকে ব্যাঙ্কের মোট মুনাফা হয়েছিল ৯১৮.৪৮ কোটি। আর্য বলেন, “গত দুই ত্রৈমাসিকে ব্যাঙ্কিং লেনদেন বাবদ মুনাফা হয়েছে। লোকসানের একমাত্র কারণ অনুৎপাদক সম্পদ খাতে ওই অর্থ সংস্থান। চতুর্থ ত্রৈমাসিকে যাতে এই খাতে কোনও সংস্থান করতে না-হয়, তার জন্য নতুন করে অনুৎপাদক সম্পদ সৃষ্টি রোখাই এই মুহূর্তে সবথেকে বড় চ্যালেঞ্জ।” |