ফিমার বোন ভেঙে গিয়েছে রোগীর। ধাতব পাত বসাতে হবে। শল্য চিকিত্সকের ভূমিকায় কিন্তু ধাতব পাত সরবরাহকারী সংস্থারই প্রতিনিধি!
ঘটনাস্থল কলকাতার বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। হাসপাতালের চিকিত্সকদেরই একাংশ এ ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। অভিযোগ জমা পড়েছে স্বাস্থ্য ভবনে। এমন নজির সামগ্রিক ভাবে চিকিত্সকদের পেশাকেই কলঙ্কিত করছে বলে চাকরিতে ইস্তফা দিয়েছেন হাসপাতালের এক প্রবীণ অর্থোপেডিক।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অবশ্য বিষয়টিকে তেমন গুরুত্ব দিচ্ছেন না। তাঁরা জানান, এ ব্যাপারে উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি হয়েছে। কিন্তু বিশেষ কিছু মেলেনি। তা হলে চিকিত্সকেরা এমন গুরুতর অভিযোগ তুললেন কী ভাবে? হাসপাতালের মেডিক্যাল ডিরেক্টর সৌরভ ঘোষ বলেন, “যাঁরা অভিযোগ করেছেন, তাঁরাই বলতে পারবেন।”
সরকারি হাসপাতালে চতুর্থ শ্রেণির কর্মী ইসিজি বা এক্স-রে করছেন, এমন নজির ভুরি-ভুরি। ওটি-তে পেসমেকার বা স্টেন্ট কোম্পানির লোকের অবাধ প্রবেশের অভিযোগও নতুন নয়। কিন্তু এই ঘটনা অন্য সমস্ত নজিরকেই ছাপিয়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ হাসপাতালের চিকিত্সকদের।
স্বাস্থ্য ভবনে জমা পড়া অভিযোগে জানানো হয়েছে, গত ৪ জানুয়ারি এক ব্যক্তির ফিমার বোনে স্টিলের পাত বসানোর কথা ছিল। চিকিত্সা পরিভাষায় ওই অস্ত্রোপচারের নাম ‘ইন্টারলকিং অব নেল অব ফিমার বোন’। অভিযোগ, ঘটনার দিন যে অর্থোপেডিক সার্জনের অস্ত্রোপচার করার কথা ছিল, তিনি ওটিতে ঢুকে দেখেন, সরঞ্জাম সরবরাহকারী সংস্থার এক কর্মী আগেই অস্ত্রোপচার শুরু করে দিয়েছেন। ওই চিকিত্সককে মোটেই আমল দেননি ওই প্রতিনিধি। এর পরে ওই চিকিত্সক বেরিয়ে যান এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
বিভিন্ন বিভাগের চিকিত্সকদের বড় অংশের অভিযোগ, হাসপাতালের ওষুধ সংস্থার প্রতিনিধিদের দাপট দিন-দিন বাড়ছে। রোগী দেখার সময়েও তাঁরা উপস্থিত থাকেন। অর্থোপেডিক বিভাগের ওটি-তেও সরঞ্জাম সরবরাহকারী সংস্থার প্রতিনিধিরা ঢুকে পড়েন নির্বিচারে। কিন্তু সংস্থার কর্মী অস্ত্রোপচার করবেন, এতটা তাঁরাও ভাবেননি। হাসপাতালের নার্সদের একাংশের অভিযোগ, অপারেশন থিয়েটারের ভিতরে বহিরাগতদের যথেচ্ছ আনাগোনায় তাঁদেরও কাজে অসুবিধা হয়। কর্তৃপক্ষকে একাধিক বার জানানো সত্ত্বেও ফল হয়নি।
হাসপাতালের মেডিক্যাল ডিরেক্টর অবশ্য দাবি করেছেন, যাতে হাসপাতালের ভিতরে কোনও অসাধু চক্র সক্রিয় হতে না পারে, সে ব্যাপারে তাঁরা সতর্ক রয়েছেন। |