আমতা থানার ওসিকে সরিয়ে ডোমজুড় থানার অধীন বাঁকড়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ করা হল। ঘটনাচক্রে, গত ৪ ফেব্রুয়ারি রাতে আমতা থানারই মুক্তিরচক গ্রামে একই পরিবারের দুই মহিলাকে গণধর্ষণের ঘটনা ঘটে। মূল অভিযুক্ত স্থানীয় তৃণমূল নেতা বরুণ মাকাল-সহ আট জন গ্রেফতার হয় ওসি পার্থ হালদারের নেতৃত্বে। দু’সপ্তাহের মধ্যে তাঁকে হঠাৎ ফাঁড়িতে বদলি করায় বিতর্ক দানা বেঁধেছে।
জেলা পুলিশ সূত্রের খবর, নির্বাচনী আচরণ বিধি মেনে একই মহকুমায় টানা তিন বছর কাজ করছেন এমন ওসিদেরই বদলি করা হয়েছে। পার্থবাবু ছাড়াও শ্যামপুর এবং জগৎবল্লভপুর থানার ওসিদেরও বদলির নোটিস ধরানো হয়। যাকে ‘রুটিন বদলি’ বলেই সংক্ষিপ্ত মন্তব্য করেছেন হাওড়ার অতিরিক্ত এসপি (গ্রামীণ) সুখেন্দু হীরা। তবে পার্থবাবু নিজে কোনও কথা বলতে চাননি।
গণধর্ষণ-কাণ্ডের পরে পরেই ওসিকে বদলি করে ফাঁড়িতে পাঠানোর ঘটনায় ক্ষুব্ধ বিরোধীরা। সিপিএমের হাওড়া জেলা সম্পাদক বিপ্লব মজুমদার বলেন, “দুই মহিলাকে গণধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্তদের দ্রুততার সঙ্গে গ্রেফতার করার পরে ওসিকে যে ভাবে থানা থেকে সরিয়ে ফাঁড়ির দায়িত্বে পাঠানো হল, তার নজির আমরা খুব একটা দেখিনি। মনে হচ্ছে এর পিছনে অভিসন্ধি আছে। তেমন কিছু ঘটে থাকলে অপরাধীরাই উৎসাহিত হবে।” ধর্ষণ কাণ্ডের তদন্তে ‘দৃঢ়তা’র পরিচয় দেওয়াতেই ওসিকে ফাঁড়িতে বদলি করা হল বলে অভিযোগ তুলেছেন জেলা কংগ্রেস সভাপতি কাজি আব্দুল রেজ্জাক এবং বিজেপির হাওড়া জেলা (গ্রামীণ)-এর সভাপতি গৌতম রায়।
জেলা (গ্রামীণ) তৃণমূল সভাপতি পুলক রায় অবশ্য বলেন, “প্রথম থেকেই বলছিলাম জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। পুলিশ তাই করেছে। এখন বিরোধীরা আর সমালোচনা না করতে পেরে সামান্য বিষয় নিয়ে তারা বাজার গরম করতে চাইছে। অফিসারদের বদলির বিষয়টি প্রশাসনের নিজের সিদ্ধান্ত। এতে আমাদের দলের কোনও হাত নেই।”
জেলা পুলিশের একটি সূত্রের মতে, ওসি পদের তুলনায় পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পদটি ধারে-ভারে কম। কিন্তু এমন ঘটনা বিরল, বলা চলে না। পার্থবাবুর ক্ষেত্রে জেলা পুলিশকর্তাদের একাংশের যুক্তি, হাওড়া সদর এলাকায় মাত্র চারটি থানা। পার্থবাবুকে পাঠানোর মতো ফাঁকা জায়গা এই মুহূর্তে পাওয়া যায়নি বলেই তাঁকে আপাতত ফাঁড়ির দায়িত্ব দেওয়া হল। তাঁর মতো এক জন দক্ষ অফিসারকে না হলে অন্য জেলায় পাঠাতে হত। পার্থবাবুর জায়গায় আনা হয়েছে সাঁকরাইলের মানিকপুর তদন্ত কেন্দ্রের ওসিকে। এই বদলির ফলে গণধর্ষণ-কাণ্ডের তদন্তে অসুবিধা হবে না বলেও জানান জেলা পুলিশের কর্তারা। তাঁদের দাবি, অপরাধের গুরুত্ব বুঝে রাজ্য পুলিশের কর্তারাই একজন ইন্সপেক্টর পদ মর্যাদার অফিসারকে তদন্তকারী অফিসার নিয়োগ করেছেন। |