অবাধ দেহব্যবসা, পুলিশকে দুষছেন বাসিন্দারা
‘রিভার ভিউ’ হোটেল সিল করে দেওয়া হয়েছিল রবিবারই। তারপর পুলিশ বন্ধ করে দিয়েছে আরও ১০টি রিসর্ট। উত্তর ২৪ পরগনার দত্তপুকুরের এক নিখোঁজ কিশোরীর সন্ধান করতে গিয়ে হাওড়ার পর্যটন কেন্দ্র গাদিয়াড়ায় অবাধ দেহ ব্যবসা সামনে চলে এসেছে। পুলিশসূত্রে খবর, রিভার ভিউ হোটেলেই ওই কিশোরীকে পরপর তিন দিন গণধর্ষণ করে নানা ‘খদ্দের’। কিশোরীর থেকে পাওয়া সূত্র ধরে আরও ছয় মহিলাকে উদ্ধার করা হয় ওই হোটেল থেকে। হোটেল মালিক-সহ পাঁচ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
মঙ্গলবার সকালে দেখা যায়, বাইরে থেকে তালা ঝুলছে অনেক হোটেলে। কোনওটায় আবার ভিতর থেকে কেউ খবরের কাগজ দেখিয়ে বলেন, “জানেন না কী হয়েছে? অন্য দিন আসবেন।” কলকাতা থেকে ১০০ কিলোমিটার দূরে গাদিয়াড়ায় রূপনারায়ণের পাড় ধরে রয়েছে গোটা পঁচিশ হোটেল। এখন টিমটিম করে চলছে তার তিন-চারটি।
কিন্তু কত দিন টিকবে পুলিশের এই তৎপরতা, মঙ্গলবার প্রশ্ন তুলেছেন গাদিয়াড়ার মানুষ। স্থানীয় বাসিন্দা দীপঙ্কর পাত্র বলেন, “এ সব অভিজ্ঞতা আমাদের নতুন নয়। একটি ঘটনার পরে কিছু দিন হোটেলগুলি বন্ধ থাকে। ফের খুলে যায়।” তাঁর অভিযোগ, জেল থেকে বেরিয়ে সংযত হওয়ার পরিবর্তে আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন হোটেল মালিকরা। পুলিশই বরং হোটেল মালিকের হয়ে ধমকে দিয়ে যায় বাসিন্দাদের, অভিযোগ করেন এলাকার মহিলারা। রিভার ভিউ রির্সটের পাশেই থাকেন বীণাপাণি দেবী। তিনি বলেন, ‘‘হোটেলে যা চলত, মেয়ে-বউমা, নাতনিদের নিয়ে ঘর থেকে বের হতে পারতাম না। মারপিট, কান্নাকাটি লেগেই ছিল।” ক’দিন আগে রাত ১১টা নাগাদ তারস্বরে মাইক বাজানোর প্রতিবাদ করেন ওই বৃদ্ধা। পরের দিন নাতির পরীক্ষা, তাই আওয়াজ কমাতে বলেন তিনি। তাঁর অভিযোগ, গালাগাল করে ধাক্কা দিয়ে তাঁকে বার করে দেওয়া হয় হোটেল থেকে। বৃদ্ধা বলেন, ‘‘ওই হোটেল মালিক আমার হাতে চড়ও খেয়েছে। আবার পুলিশ নিয়ে শাসিয়েছে। ওদের অনেক টাকা।”
এলাকার মহিলারা রিসর্টগুলিতে বারকয়েক ভাঙচুরও করেছেন। কিন্তু অবস্থা বদলায়নি। তাঁদের অভিযোগ “বিকেল হলেই মোটরবাইক, গাড়ি নিয়ে মদ্যপদের দাপট বাড়ে। প্রকাশ্যে গালিগালাজ চলে।” স্থানীয় বাসিন্দা দীপক মেটিয়া বলেন, “ভয়ে বাড়ির মেয়েদের বিকেলের পরে নদীর ধারে আসতে দিই না। পর্যটকরা শরীর-মন ভাল করতে গাদিয়াড়া আসত। এখন আর কোনও ভদ্রলোক আসেন না।”
একেবারেই নদীপাড়েই বিশাল জায়গা নিয়ে রয়েছে রাজ্য পর্যটন দফতরের ট্যুরিস্ট লজ ‘রূপনারায়ণ।’ মঙ্গলবার সেখানে ৩৩টি ঘরের মধ্যে ফাঁকা ছিল ২৯টিই। এ দিন সকালেই রাজারহাটের নিউ টাউন থেকে সস্ত্রীক এসেছেন অবসরপ্রাপ্ত অফিসার আশিস মণ্ডল। সাম্প্রতিক ঘটনা শুনে এ দিন রূপনারায়ণের কর্মীদের ডেকে তিনি জিজ্ঞাসা করেন, “বিকেলে স্ত্রীকে নিয়ে বেরোতে পারব তো? এ সব জানলে আসতাম না।”
স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধানের দাবি, এ সব ঘটনার কথা তিনি কিছুই জানেন না তিনি। বাণেশ্বরপুর-১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধান সোমা কপাট বলেন, “গত দু’দিনের ঘটনা কিছুই জানি না। খোঁজ নিয়ে দেখছি।’’ পুলিশের দাবি, এর আগে দেহব্যবসা চালানোর অভিযোগে এক বছরে তিন বার তল্লাশি চালিয়ে চারটি হোটেল সিল করে দেওয়া হয়েছিল। হাওড়ার জেলা (গ্রামীণ) পুলিশের অতিরিক্ত সুপার সুখেন্দু হীরা বলেন, “হোটেল মালিকদের সঙ্গে পুলিশের অসাধু যোগাযোগ রয়েছে বলে কেউ কখনও অভিযোগ করেনি। কোনও ঘটনা ঘটলে আমরা সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিই।” নজরদারি আরও বাড়ানো হবে, আশ্বাস দেন সুখেন্দুবাবু।
অথচ এলাকায় খুব পরিচিত এক ব্যক্তিই যে হোটেলগুলিতে মেয়েদের দেহব্যবসার ব্যবস্থা করে দেয়, সে ইঙ্গিত মিলেছে। দত্তপুকুরের কিশোরী ছাড়া আরও যে ছ’টি মেয়েকে উদ্ধার করা হয়, হাওড়া পুলিশকে তারা জানিয়েছে যে, একজন ব্যক্তির ‘ফাঁদে’ পড়েই দেহব্যবসার কাজে নামতে বাধ্য হয়েছে তারাও। এই ব্যক্তির চেহারার বিবরণ এবং ওই মহিলাদের থেকে পাওয়া তথ্য হাওড়া জেলা পুলিশ এ দিন ফ্যাক্স করে দিয়েছে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পুলিশকে। কালো, মোটা, সাড়ে পাঁচ ফুট উচ্চতার ওই লোকটি দত্তপুকুরের কিশোরীকেও পাচার করে থাকতে পারে, মনে করছে উত্তর ২৪ পরগনার পুলিশ। পুলিশের ধারণা, দত্তপুকুরের ওই নাবালিকাকে তার জামাইবাবু এক বন্ধুর কাছে বিক্রি করে দেওয়ার পর, সে কিশোরীকে বিক্রি করে কলকাতার সোনাগাছিতে। সেখান থেকে হাওড়ার গাদিয়াড়ায় তাকে আনে ওই ব্যক্তিই।
মঙ্গলবার উত্তর ২৪ পরগনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় বলেন, “দত্তপুকুরের কিশোরীর কাছ থেকে জানা গিয়েছে, নানা টোপ দিয়ে মেয়েদের ধরে এনে রিসর্টে সরবরাহ করত এক ব্যক্তি। ধৃতদের জেরা করে সেই সূত্র ধরেই ওই ব্যক্তির খোঁজ চলছে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.