কাশ্মীর -হিমাচল -উত্তরাখণ্ডের বরফ ছুঁয়ে আসা কনকনে বাতাস পরিমণ্ডলে ঢোকা মাত্র শৈত্যপ্রবাহের মতো পরিস্থিতি তৈরি হল দক্ষিণবঙ্গে।
মঙ্গলবারই বীরভূমে শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয়েছে। আজ, বুধবার বীরভূম ছাড়াও নদিয়া, মুর্শিদাবাদ, বর্ধমানের শিল্পাঞ্চল, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া ও পশ্চিম মেদিনীপুরে শৈত্যপ্রবাহের সতর্কতা জারি করেছে আলিপুর হাওয়া অফিস। হিমেল উত্তুরে হাওয়ার প্রভাবে খাস কলকাতার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা এক ধাক্কায় চার ডিগ্রি কমে ১৭ থেকে ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে এসেছে এ দিন। পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোয় শৈত্যপ্রবাহ শুরু হলে মহানগর ১১ ডিগ্রিও ছুঁয়ে ফেলতে পারে বলে আবহবিদদের অনুমান।
ফেব্রুয়ারি মাসের তৃতীয় সপ্তাহে এমন শীতের কামড় ! পশ্চিমবঙ্গে শেষ কবে এ রকমটা ঘটেছে, তার হদিস পেতে আবহবিদেরা রেকর্ড ঘাঁটতে শুরু করেছেন। নথি কী বলে?
ফেব্রুয়ারির পারদ -পতনের তথ্য যাচাই করে আলিপুর জানাচ্ছে, ১৯৫০ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি মহানগরীর তাপমাত্রা নেমে গিয়েছিল ৭ .২ ডিগ্রিতে। সাম্প্রতিক কালের কলকাতা এমন বিরল ঘটনার সাক্ষী হয়েছে ২০০৮ -এর ৩ ফেব্রুয়ারি, যে দিন সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ .৮ ডিগ্রি ছুঁয়েছিল। ফেব্রুয়ারির কলকাতায় তাপমাত্রা আরও ক’বার অবশ্য ১৪ ডিগ্রির নীচে নেমেছে, তবে প্রতি বারই সময়টা ছিল মাসের প্রথমাধর্র্। ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয়ার্ধে মহানগরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৩ ডিগ্রির নীচে থাকার নজির তেমন নেই বলেই জানাচ্ছেন আবহবিদেরা।
এবং শীতের এ হেন চলন -বলন দেখে তাঁরা বাস্তবিকই বিস্মিত। তাঁদের মতে, এটা অস্বাভাবিক। বস্তুত আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনা চলছে বিশ্ব জুড়েই। ঝড় -বৃষ্টি -বন্যা তুষারপাতে ইউরোপ -আমেরিকার বহুলাংশে জনজীবন বিপর্যস্ত। এশিয়ায় ইরান -জাপানও বাদ যাচ্ছে না। পাশাপাশি অতলান্তিক -ভূমধ্যসাগরের উপরে বিপুল জলীয় বাষ্প সঞ্চারের জেরে পশ্চিমী ঝঞ্ঝার উৎপত্তি হচ্ছে নাগাড়ে। সেগুলো ইরান -আফগানিস্তান -পাকিস্তান হয়ে এসে পরের পর আছড়ে পড়ছে কাশ্মীরে। পরিণামে কাশ্মীর তো বটেই, লাগোয়া হিমাচলপ্রদেশ -উত্তরাখণ্ডে বৃষ্টি, তুষারপাত। |
পারদ নামা |
কোথায় |
কত |
|
রাঁচি |
৭.৩ (-৬) |
কোচবিহার |
৮.৪ (-৪) |
শ্রীনিকেতন |
৯.৩ (-৪) |
কৃষ্ণনগর |
১০ (-৪) |
বহরমপুর |
১০ .৪ (-৪) |
বাঁকুড়া |
১১ .৭ (-৪) |
মালদহ |
১২ .০ (-৪) |
দিঘা |
১২ .৫ (-৫) |
কলকাতা |
১৩ .০ (-৫) |
* মঙ্গলবারের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা, ডিগ্রি সেলসিয়াসে
বন্ধনীতে এ সময়ের স্বাভাবিকের চেয়ে কত ডিগ্রি কম |
|
বরফ -শীতল সেই বাতাসই ক্রমে নেমে এসে পূর্ব ভারতে কাঁপুনি ধরাল। যেখান যেখান দিয়ে তা বাংলায় পৌঁছেছে, পূর্ব মধ্যপ্রদেশ, ছত্তীসগঢ়, মধ্য ওড়িশা, বিহার ও ঝাড়খণ্ডের সে সব অঞ্চল ইতিমধ্যে শৈত্যপ্রবাহের কবলে। রাঁচির তাপমাত্রা এ দিন নেমে গিয়েছে ৭ .৩ ডিগ্রিতে। উত্তরবঙ্গের কোচবিহার ও দক্ষিণবঙ্গের শ্রীনিকেতনে নেমেছে ১০ ডিগ্রির নীচে। কৃষ্ণনগর -বহরমপুরে ১০ ডিগ্রিতে। বীরভূমের কিছু এলাকায় শৈত্যপ্রবাহ শুরুও হয়ে গিয়েছে। আলিপুরের পূর্বাভাস : সব মিলিয়ে রাজ্যের সাতটি জেলার বহু জায়গায় আজ সর্বনিম্ন তাপমাত্রা আরও নামবে। ফলে সেখানে শৈত্যপ্রবাহ বইবার সম্ভাবনা যথেষ্ট। প্রসঙ্গত, কোথাও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা সংশ্লিষ্ট সময়ের স্বাভাবিক তাপমাত্রার পাঁচ ডিগ্রি নেমে গেলে (১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কম হতে হবে ) বলা হয়, শৈত্যপ্রবাহ চলছে।
অর্থাৎ, শেষ মাঘে বিদায় নেওয়া শীত প্রথম ফাল্গুনে শুধু যে ফিরে এল তা -ই নয়, প্রত্যাবর্তন ঘটছে প্রবল পরাক্রমের সঙ্গে। কত দিন তার দাপট থাকবে?
আলিপুর হাওয়া অফিসের অধিকর্তা গোকুলচন্দ্র দেবনাথ এ দিন বলেন, “আপাতত আগামী দু’দিন এমন অবস্থা থাকবে। পরবর্তী পরিস্থিতি নির্ভর করছে বায়ুপ্রবাহের মতিগতির উপরে।” এ দিকে উপগ্রহ -চিত্রে দেখা যাচ্ছে, নতুন এক পশ্চিমী ঝঞ্ঝা আফগানিস্তান -পাকিস্তান হয়ে কাশ্মীরের দিকে আগুয়ান। তাই কাশ্মীরে ফের বৃষ্টি -বরফের পূর্বাভাস রয়েছে। ফলে উত্তর ভারতে আবার এক দফা বৃষ্টি ও কড়া ঠান্ডার সম্ভাবনা। এতে পূর্ব ভারতের আবহাওয়া স্থিতিশীল হওয়ার পথেও বাধা আসতে পারে বলে আবহবিদেরা মনে করছেন।
কবে ফের স্বাভাবিক ছন্দে আবর্তিত হবে ঋতুচক্র?
মৌসম ভবনের জবাব, অতলান্তিক মহাসাগরের উপরের বায়ুপ্রবাহ থিতু না হওয়া পর্যন্ত অস্বাভাবিকতা চলবে। ফাল্গুনে শীতে কাঁপবে কলকাতা, বরফে ঢাকবে দার্জিলিঙের পাহাড়। আবহবিদেরা বলেছেন, অতলান্তিকে সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা অতিরিক্ত হারে বাড়ায় সেখানকার বায়ুপ্রবাহ আমূল পাল্টে গিয়েছে। অতলান্তিকের দু’দিকে আমেরিকা ও ইউরোপের দুই বিপরীতধর্মী (আমেরিকায় শীতল, ইউরোপের আপাত উষ্ণ ) বাতাসের সেতুবন্ধনে সৃষ্টি হয়েছে নতুন বায়ুপ্রবাহ। তারই জেরে প্রাকৃতিক দুর্বিপাকে জেরবার হচ্ছে অতলান্তিকের দু’পাড়।
জলবায়ুর জটিলতা কবে কাটবে? পরিবেশ -বিজ্ঞানী ও আবহ -বিজ্ঞানীরা এখনও ধন্ধে। |