তমলুকে রবীনদের হেনস্থা, লক্ষ্মণে ঘায়েল সিপিএম
গোষ্ঠীদ্বন্দের জেরে নজিরবিহীন ঘটনা ঘটল সিপিএমে! দলের প্রাক্তন সাংসদ লক্ষ্মণ শেঠের বিরুদ্ধে দলীয় তদন্তের প্রতিবাদে তাঁর অনুগামীদের বিক্ষোভে নাকাল হতে হল সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর তিন সদস্যকে। হেনস্থার শিকার হলেন রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী চক্রধর মেইকাপ-সহ পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সিপিএমের একাধিক নেতা। সিপিএম সূত্রে বলা হচ্ছে, কংগ্রেস বা তৃণমূলে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের এমন চেহারা দেখা গেলেও তাঁদের দলে এ জিনিস বিরল! সেই কারণে বিড়ম্বনাও বেশি।
আলিমুদ্দিনের তদন্তকারী দলের সদস্যদের গাড়ি ঘিরে লক্ষ্মণ
শেঠের অনুগামীদের বিক্ষোভ। মঙ্গলবার। —নিজস্ব চিত্র।
দুর্নীতি, অস্বচ্ছতা এবং দল-বিরোধী কাজের অভিযোগে লক্ষ্মণবাবু ও তাঁর অনুগামী একাধিক নেতার বিরুদ্ধে সিপিএম রাজ্য নেতৃত্ব তদন্ত কমিটি গড়ার পরেই জলঘোলা হতে শুরু করেছে পূর্ব মেদিনীপুরে। ওই তদন্তের জন্য প্রায় কৈফিয়ত চেয়ে লক্ষ্মণবাবু চিঠি লিখেছেন সিপিএম রাজ্য সম্পাদক বিমান বসুকে! প্রায় কিছু শর্ত আরোপ করে জানিয়েছেন, এই পরিস্থিতিতে তাঁর পক্ষে আর দলে থাকা সম্ভব নয়। সেই চিঠি এবং এ দিন রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর তিন সদস্য রবীন দেব, মৃদুল দে ও নৃপেন চৌধুরীর নিগৃহীত হওয়ার ঘটনার পরে লক্ষ্মণবাবুর সঙ্গে সিপিএমের বিচ্ছেদ প্রায় অনিবার্য হয়ে উঠেছে বলেই দলীয় সূত্রের মত। তবে প্রশ্ন হল, সরাসরি তাঁকে বহিষ্কার করা হবে? নাকি প্রাথমিক ভাবে কিছু শাস্তিমূলক সিদ্ধান্ত নিয়ে তদন্ত কমিটির কাজ শেষ করে চূড়ান্ত পদক্ষেপ করা হবে? সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্ব কিছুটা সময় নিয়েই পা ফেলতে চাইছেন।
তদন্তের কাজের জন্য এ দিন তমলুকের নিমতৌড়িতে সিপিএমের পূর্ব মেদিনীপুর জেলা দফতরে বৈঠক করতে যাওয়ার পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি ছিল কমিটির দুই সদস্য নৃপেনবাবু ও মৃদুলবাবুর। সঙ্গে ছিলেন রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর তরফে ওই জেলার ভারপ্রাপ্ত নেতা রবীনবাবু। বিমানবাবুকে লেখা চিঠিতে তাঁর বিরুদ্ধেই ক্ষোভ জানিয়েছিলেন লক্ষ্মণবাবু। এ দিন সকাল থেকেই নিমতৌড়ির দফতরে লাগাতার বিক্ষোভ চালান হলদিয়ার সুতাহাটা, টাউনশিপ, মহিষাদল এলাকা থেকে আসা কর্মী-সমর্থকেরা। তাঁদের দাবি, লক্ষ্মণবাবুর বিরুদ্ধে তদন্ত বন্ধ করতে হবে, তাঁকে রাজ্য কমিটিতে পুনর্বহাল করতে হবে ও লোকসভা নির্বাচনে তমলুক কেন্দ্রে প্রার্থী করতে হবে! বিক্ষোভের মুখে পড়ে রবীনবাবুরা দফতরে ঢুকতেই পারেননি!
লক্ষ্মণবাবুকে ঘিরে জেলা সিপিএমের বিভাজনও এ দিনের বিক্ষোভে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। লক্ষ্মণ-ঘনিষ্ঠ নেতাদের কেউই বিক্ষোভকারীদের নিরস্ত করার চেষ্টা করেননি। প্রণব দাস, শক্তি বেরা, অমিয় সাহু এবং লক্ষ্মণ-জায়া তমালিকা পণ্ডা শেঠ চুপচাপই ছিলেন। পরে অবশ্য তমালিকাদেবী বলেন, “এই ধরনের বিক্ষোভে আমার সমর্থন নেই। যাঁরা এসেছেন, তাঁরা আমাদের না-জানিয়েই এসেছেন।”
বিকেলে বিক্ষোভ থিতিয়ে যাওয়ার পরে অবশ্য দফতরে গিয়ে বৈঠক করেন রবীনবাবু ও নৃপেনবাবু। তাতে যোগ দেননি তমালিকাদেবী ও প্রাক্তন বিধায়ক অমিয় সাহু।
প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ লক্ষ্মণ শেঠের বিরুদ্ধে দলীয় তদন্ত বন্ধের দাবিতে
মঙ্গলবার তমলুকে দলের জেলা কার্যালয়ে বিক্ষোভ দেখান লক্ষ্মণ -অনুগামীরা।
পরিস্থিতি সামলাতে নামাতে হয় কমব্যাট ফোর্স। —নিজস্ব চিত্র।
রবীনবাবুরা কলকাতায় ফেরার পরে এ দিন রাতে আলিমুদ্দিনে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীরা ঘরোয়া বৈঠকে বিষয়টি আলোচনা হয়েছে। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য-সহ দলের রাজ্য নেতৃত্বের বড় অংশই তমলুকের প্রাক্তন সাংসদের কড়া শাস্তির পক্ষে। তবে প্রথমেই নিজেরা পদক্ষেপ না-করে আলিমুদ্দিন চাইছে, জেলা নেতৃত্বের দিক থেকে প্রক্রিয়া শুরু করতে। লক্ষ্মণবাবু এখন আর সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য নন। জেলা নেতৃত্বের তরফে শাস্তির সুপারিশ এলে তাতে সিলমোহর দেওয়ার প্রক্রিয়াই মেনে চলতে চাইছে আলিমুদ্দিন। আর এক প্রাক্তন সাংসদ অনিল বসুর ক্ষেত্রেও যা হয়েছিল।
দলের উপরে চাপ বাড়ানোর কৌশল অব্যাহত রেখেছেন লক্ষ্মণবাবুও। অসুস্থতার কারণে তাঁর ঘনিষ্ঠ কানু সাহুকে অব্যাহতি দিয়ে পূর্ব মেদিনীপুরের ভারপ্রাপ্ত জেলা সম্পাদক করা হয়েছে প্রাক্তন সাংসদ প্রশান্ত প্রধানকে। কানুবাবু এখন আবার দলের রাজ্য সম্পাদককে চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন, তাঁর অব্যাহতি চাওয়ার আর্জি তিনি প্রত্যাহার করে নিচ্ছেন! স্বয়ং লক্ষ্মণবাবু অবশ্য এ দিনও ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিলেন। কলকাতার ফ্ল্যাট ও একাধিক মোবাইলে বারংবার যোগাযোগ করেও তাঁর সাড়া পাওয়া যায়নি।
লক্ষ্মণবাবুর বেসরকারি সংস্থার আর্থিক কাজকর্ম নিয়ে অভিযোগের ব্যাপারে এ দিন অবশ্য মন্তব্য করতে চাননি বিমানবাবু। প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মামলার কারণে পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় ঢোকার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা আছে লক্ষ্মণবাবুর। সেই কারণেই তিনি আর দলের হয়ে কাজ করতে চাইছেন না।
কিন্তু সিপিএমে কি এ ভাবে ইস্তফা-পত্র দিয়ে দল ছাড়া যায়? বিমানবাবু ইঙ্গিত দিয়েছেন, কেউ যদি দলের সদস্যপদ নবীকরণ করাতে না চান, বিশেষ পরিস্থিতিতে দল সেই আর্জি মেনে নিতে পারে। এখন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, লক্ষ্মণের আর্জি মঞ্জুর করে নিলে দলে নজির তৈরি হয়ে আরও জটিলতা বাড়তে পারে। তার চেয়ে বহিষ্কারই শ্রেয়। তবে সিদ্ধান্ত যা-ই হোক, তার প্রভাব যে লোকসভা ভোটে পড়বে, সে কথা মাথায় রাখতে হচ্ছে আলিমুদ্দিনকে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.