বাজেট অস্বচ্ছ, অমিতকে তোপ অসীমের
বাজেট নিয়ে বর্তমানকে আক্রমণ করলেন প্রাক্তন। বাম আমলের অর্থমন্ত্রী অসীম দাশগুপ্তের মতে, অস্বচ্ছ এবং বিভ্রান্তি-ভরা বাজেট পেশ করেছেন অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র।
প্রেসিডেন্সির অর্থনীতি বিভাগের দুই প্রাক্তনীর দ্বৈরথ অবশ্য নতুন নয়। নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ফি বছর বাজেট পেশের পরে সরকারের পেশ করা নানা হিসেবকে অস্ত্র করে অমিতবাবুকে আক্রমণ করেন অসীমবাবু। এ বারও তার ব্যতিক্রম হয়নি।
মঙ্গলবার আলিমুদ্দিনে সিপিএমের কার্যালয়ে বসে অমিতবাবুর বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তুলেছেন অসীমবাবু তার কেন্দ্রে রয়েছে রাজস্ব আদায় ও কর্মসংস্থান। রয়েছে ঋণ, জনস্বাস্থ্য নিয়ে প্রশ্ন এবং অস্বচ্ছতা, বিভ্রান্তি সৃষ্টি এবং তথ্য গোপন করার অভিযোগও।
সাংবাদিক বৈঠকে অসীম। —নিজস্ব চিত্র।
অসীমবাবুর বক্তব্য, বাজেটে প্রবেশ করকে রাজস্ব আদায়ের গুরুত্বপূর্ণ একটি উৎস হিসাবে দেখানো হয়েছে। কিন্তু হাইকোর্ট প্রবেশ করকে সংবিধান বর্হিভূত বলে রায় দিয়েছে। ডিভিশন বেঞ্চও এই রায়ের উপরে কোনও স্থগিতাদেশ দেয়নি। প্রবেশ করকে সংস্কার-বিরোধী বলেও আখ্যা দিয়েছেন অসীমবাবু। তাঁর বক্তব্য, প্রবেশ কর বসালে সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হন। কারণ, এতে জিনিসপত্রের দাম বাড়ে। বাড়ে সাধারণ ব্যবসায়ীদের হয়রানিও।
রাজস্ব আদায় প্রসঙ্গে অসীমবাবুর দাবি, বামফ্রন্ট সরকারের শেষ বছরে কর আদায় বৃদ্ধির হার ছিল ২৫ শতাংশ। অথচ, বর্তমান সরকার চলতি বছর কর আদায় বৃদ্ধি করেছে ২০ শতাংশ। আগামী বছর বৃদ্ধির হার ধরা হয়েছে ১৫ শতাংশ।
অমিতবাবু শিল্প ক্ষেত্রে বৃদ্ধির যে পরিসংখ্যান দিয়েছেন (৯.৫৮ শতাংশ), তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অসীমবাবু। তিনি বলেন, বামফ্রন্টের শেষ বছরে রাজ্যে ৩১২টি শিল্প সংস্থা বাস্তবে ১৫ হাজার ৫২ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে। তৃণমূল সরকার আসার প্রথম বছরে বাস্তবায়িত হয় ৩১২ কোটি টাকা বিনিয়োগে ১২টি শিল্প। আর্থিক সমীক্ষায় দেখানো হয়েছে, চলতি বছরে ১৫০টি শিল্পসংস্থা ১৭ হাজার ৭৩৫ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে। অসীমবাবুর দাবি, যে সংস্থা উৎপাদন শুরু করেনি, এই হিসাবে তাদেরও ধরা হয়েছে।
কর্মসংস্থান নিয়ে অর্থমন্ত্রীর দাবিকে স্ববিরোধী বলে মনে করছেন অসীমবাবু। তিনি বলেন, বাজেটে বলা হয়েছে, রাজ্যে ৪৩ হাজার শিক্ষক, ৪০ হাজার কনস্টেবল ইত্যাদি পদে কর্মী নিয়োগ করা হয়েছে। এত নিয়োগের পরও সরকারের বেতন বাবদ ব্যয় গত বছরের ৩২ হাজার ৭৭৩ কোটি টাকার থেকে কমে এ বছর ৩০ হাজার ২২২ কোটি টাকা হল কেন? অসীমবাবু বলেন, কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে বিস্তারিত জানার জন্য বাজেটে পরিসংখ্যান বই দেওয়ার রীতি রয়েছে। এ বার সরকার এই বইটি অবলুপ্ত করে দিয়েছে।
বাম আমলের ঋণ নিয়ে বাজেট বক্তৃতায় যে অভিযোগ অর্থমন্ত্রী করেছেন, তাকে উড়িয়ে অসীমবাবু বলেন, বামফ্রন্ট ক্ষমতা থেকে যাওয়ার সময় ঋণের বিচারে রাজ্যগুলির মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ ছিল ছ’নম্বরে। নতুন সরকার ১০ মাসের মধ্যেই ১৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে রাজ্যকে এক নম্বরে নিয়ে যায়।
জনস্বাস্থ্য নিয়েও রাজ্য সরকারের দাবিকে কার্যত উড়িয়ে দিয়েছেন অসীমবাবু। তিনি বলেন, বামফ্রন্টের শেষ বছরে এ রাজ্যে শিশুমৃত্যুর হার ছিল প্রতি হাজারে ৩১। বর্তমানে এই হার বেড়ে ৩২-এ এসে দাঁড়িয়েছে। একই ভাবে বামফ্রন্টের শেষ বছরে মৃত্যু হার ছিল প্রতি হাজারে ৬। বর্তমানে এই হার বেড়ে ৬.৩-এ দাঁড়িয়েছে বলে অসীমবাবুর দাবি। তাঁর প্রশ্ন, “জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থা আগের চেয়ে ভাল হলে মৃত্যুহার এবং শিশুমৃত্যুর হার বাড়ছে কেন?”
বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থা নিয়েও রাজ্য সরকারকে এক হাত নিয়েছেন অসীমবাবু। তিনি বলেন, “চার লক্ষ মানুষকে অর্থ সাহায্য দেওয়া হচ্ছে বলে বলা হচ্ছে। কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা ২০ লক্ষেরও বেশি।” তাঁর দাবি, করের টাকায় নয়, সংস্থার সম্পদ সঠিক ভাবে বিক্রি করেই সব ক্ষতিগ্রস্তকে সাহায্য দিতে হবে।
অসীমবাবু জানিয়েছেন, গত বছর বাজেটে কেন্দ্রীয় অর্থ সাহায্যের পরিমাণ যা দেখানো হয়েছিল (২১ হাজার ৫৯৪ কোটি) বাস্তবে তার চেয়ে অনেক কম (১৫ হাজার ৯৫৪ কোটি) পাওয়া গিয়েছে। ঠিক মতো কাজ শেষের সার্টিফিকেট দিতে না-পারা বা অন্য কোনও কারণে টাকা কম পাওয়া যেতে পারে। সেই কারণটি রাজ্যবাসীকে জানানো উচিত। তাঁর বক্তব্য, এর পরেও এ বারের বাজেটে কেন্দ্রীয় অনুদানের পরিমাণ বাড়িয়ে ৩০ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকা করা হয়েছে। কেন এই বৃদ্ধি করা হল, তারও কোনও ব্যাখ্যা দেননি অর্থমন্ত্রী।
এ দিন বিধানসভাতেও বাজেট নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়। কেন্দ্রীয় সরকার যে রাজ্যকে কোনও ভাবেই বঞ্চনা করছে না তা তথ্য-পরিসংখ্যান দিয়ে প্রমাণ করার চেষ্টা করেন কংগ্রেস বিধায়ক মানস ভুঁইয়া।
তাঁর বক্তব্য, বাজেটে গ্রামাঞ্চলে রাস্তা, বাড়ি বাড়ি আলো, পানীয় জল পৌঁছে দেওয়া হয়েছে বলে যে দাবি অর্থমন্ত্রী করেছেন, তার প্রতিটি ক্ষেত্রেই কেন্দ্রের টাকা রয়েছে। মানসবাবুর আরও অভিযোগ, চলতি বছরের বাজেটে বিভিন্ন দফতরের পরিকল্পনা খাতে যে টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল, সংশোধিত বাজেটে তার অনেক ক্ষেত্রেই বরাদ্দ কমিয়ে দেওয়া হয়েছে।
আরএসপি বিধায়ক সুভাষ নস্কর বলেন, বাজেটে ভুতুড়ে সাফল্যের কথা বলা হয়েছে। যেমন, ঝড়খালিতে ট্যুরিজম প্রকল্পের এগিয়ে চলেছে বলা হয়েছে। কিন্তু সেখানে এক ঝুড়িও মাটি পড়েনি।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.