|
|
|
|
রাজীবের তিন খুনির ফাঁসি মকুব করল সুপ্রিম কোর্ট |
সংবাদ সংস্থা • নয়াদিল্লি
১৮ ফেব্রুয়ারি |
ক্ষমাভিক্ষার আর্জি নিয়ে সিদ্ধান্তে ১১ বছর দেরি হওয়ায় রাজীব গাঁধীর তিন হত্যাকারীর মৃত্যুদণ্ড খারিজ করল সুপ্রিম কোর্ট। তাদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়েছে। রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমাভিক্ষার আর্জি নিয়ে কেন্দ্রের আরও দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছে প্রধান বিচারপতি পি সদাশিবমের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ।
ওই তিন আসামির পরিবারের পাশাপাশি তাদের মৃত্যুদণ্ড খারিজ নিয়ে উদ্যোগী হয়েছিলেন করুণানিধি, জয়ললিতা, ভাইকোর মতো তামিল রাজনীতিকরা। লোকসভা ভোটের আগে শীর্ষ আদালতের এই সিদ্ধান্তে খুশি তাঁরাও।
ক্ষমাভিক্ষার আর্জি নিয়ে সিদ্ধান্তে অহেতুক বেশি দেরি হলে মৃত্যুদণ্ড খারিজ হতে পারে বলে সম্প্রতি একটি রায়ে জানিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। কোনও আসামি মানসিক ভারসাম্য হারালে বা তার মানসিক রোগ হলে মৃত্যুদণ্ড খারিজের সম্ভাবনা দেখা দেয়। ওই রায়েই ১৫ জন আসামির মৃত্যুদণ্ড খারিজ করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দেয় বেঞ্চ। ফলে, বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ মামলার আসামিদের মৃত্যুদণ্ড খারিজ হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়। |
|
মুরুগান (বাঁ দিকে), সান্থন (মাঝখানে), পেরারিভালান (ডান দিকে)। |
১৯৯৩ সালে দিল্লিতে বিস্ফোরণ কাণ্ডে মৃত্যুদণ্ড হয়েছে খলিস্তানি জঙ্গি দেবেন্দ্রপাল সিংহ ভুল্লারের। তার মানসিক রোগ হয়েছে বলে ইতিমধ্যেই সুপ্রিম কোর্টে আর্জি পেশ হয়েছে। পাশাপাশি দেরির কারণে ফাঁসি মকুবের আর্জি জানিয়েছিল রাজীব হত্যা মামলার তিন আসামি সান্থন, পেরারিভালান ও মুরুগানও।
আজ তাদের ফাঁসি মকুব করে বেঞ্চ বলেছে, “ক্ষমাভিক্ষার আর্জি নিয়ে আরও দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় বলে আমরা মনে করি। কেন্দ্রের উচিত এই বিষয়ে রাষ্ট্রপতিকে উপযুক্ত পরামর্শ দেওয়া। নির্দিষ্ট পদ্ধতি মেনে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।”
সান্থন, পেরারিভালান ও মুরুগানের ফাঁসি মকুবের আর্জির বিরোধিতা করেছিল কেন্দ্র। কেন্দ্রের আইনজীবী জানান, ফাঁসির আসামি হিসেবে দীর্ঘদিন জেলে থাকায় তারা মানসিক ভাবে মোটেই বিপর্যস্ত নন। ওই আসামিদের আর্জি থেকেই জানা যাচ্ছে, তারা জেলের মধ্যে নানা সৃজনশীল কাজকর্মে যুক্ত রয়েছে। কিন্তু এই যুক্তি মানতে রাজি হয়নি বেঞ্চ। বিচারপতিরা জানান, আসামিদের আর্জি পড়ে তাঁরা অন্য চিত্র পেয়েছেন।
কোর্টের নির্দেশের কথা শুনে উল্লসিত তিন আসামি ও তাদের পরিবার। এখন তামিলনাড়ুর ভেলোর জেলে রয়েছে সান্থন, পেরারিভালান ও মুরুগান। জেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, ভোর থেকে প্রচণ্ড উৎকণ্ঠায় ছিল ওই তিন জন। কোর্টের নির্দেশের কথা শোনার পরে হাঁফ ছাড়ে তারা।
১৯৯১ সালে ছেলেকে পাঠিয়েছিলেন রাজীব-হত্যার তদন্তকারী বিশেষ দলের কাছে। তার পর ভেলোর জেলের বিশেষ সেলে কিছু মুহূর্ত ছাড়া আর তার দেখা পাননি পেরারিভালানের মা আরপুথাম্মাল। কিন্তু তাতে হতাশ হননি ৬৭ বছরের ওই মহিলা। নানা মঞ্চে কেবল পেরারিভালান নয়, সব ফাঁসির আসামির সাজা মকুবের আন্দোলন চালিয়ে গিয়েছেন তিনি। চেন্নাই বই মেলাতেও স্টল নিয়ে মৃত্যুদণ্ড মকুবের পক্ষে বই, ডিভিডি বিলি করেছেন। আজ পেরারিভালানের ফাঁসি মকুবের কথা শুনে প্রথমে কথা বলার ক্ষমতাই হারিয়ে ফেলেছিলেন তিনি। পরে বলেন, “এই মানবিক রায়ের জন্য প্রধান বিচারপতিকে ধন্যবাদ।” তাঁর লড়াই অবশ্য শেষ হয়নি। এ বার ছেলের মুক্তির জন্য লড়বেন। হাত জোড় করে প্রধান বিচারপতিকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন মুরুগানের শাশুড়ি পদ্মাবতীও। মুরুগানের স্ত্রী নলিনীও এ মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত।
তবে কেবল আসামিদের পরিবার নয়, লোকসভা ভোটের আগে এই সিদ্ধান্ত তামিল রাজনীতিতে প্রভাব ফেলবে বলে মনে করা হচ্ছে। ওই তিন জনের মুক্তির দাবিতে প্রস্তাব পাশ করেছিল তামিলনাড়ু বিধানসভা। এ নিয়ে উদ্যোগী হয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতাও। আজ সুপ্রিম কোর্টের রায়কে স্বাগত জানিয়েছেন ডিএমকে প্রধান করুণানিধি, এমডিএমকে নেতা ভাইকো-সহ তামিল রাজনীতিকরা। একটু ভিন্ন সুরে তামিলনাড়ু প্রদেশ কংগ্রেস জানিয়েছে, রাজীব-হত্যার দায় থেকে কিন্তু মুক্তি পায়নি ওই আসামিরা। ১৯৯১ সালের সেই দিন নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের কথাও মনে রাখা প্রয়োজন।
তবে দলীয় সূত্রে খবর, মুখে যা-ই বলুন, এই রায়ে আসলে খুশি কংগ্রেস। কারণ, নলিনীর সঙ্গে জেলে দেখা করেছিলেন প্রিয়ঙ্কা বঢরা। ব্যক্তিগত ভাবে রাজীবের খুনিদের তাঁরা ক্ষমার চোখে দেখছেন বলে বার্তা দিয়েছেন সনিয়াও। তামিল দলগুলির ক্ষমার রাজনীতিতে কংগ্রেসের কিছু হারানোর নেই। বরং ভোটের আগে এই তিন আসামি বা ভুল্লারের ফাঁসি হলে পঞ্জাব বা দক্ষিণ ভারতে অস্বস্তিতে পড়তে পারত তারা। |
|
|
|
|
|