|
|
|
|
মমতাকে প্রধানমন্ত্রী চেয়েই প্রচারে অণ্ণা |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি
১৮ ফেব্রুয়ারি |
বৃত্ত সম্পূর্ণ।
এক দিন অণ্ণা হজারের সঙ্গে এক মঞ্চে পুরস্কার নেবেন না বলে একটি চ্যানেলের অনুষ্ঠান ছেড়ে বেরিয়ে এসেছিলেন তৎকালীন ইউপিএ শরিক নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বলেছিলেন, “অণ্ণা আর না।” মঙ্গলবার দিল্লিতে দলীয় দফতরের বাইরে তাঁরই পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করলেন তৃণমূল নেত্রী। আর অণ্ণা জানিয়ে দিলেন, প্রধানমন্ত্রী পদে মমতাকে নিজের প্রার্থী হিসেবে তুলে ধরে তিনি দেশ জুড়ে প্রচারে নামবেন। পাঁচ-ছ’টি বড় শহরে মমতার সঙ্গে যৌথ সভাও করবেন। অরবিন্দ কেজরীবালের রাজনৈতিক গুরু আজ বলেন, “দেশের প্রয়োজন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো নেত্রী। তিনি যদি কেন্দ্রে নেতৃত্ব দেন, তা হলে দেশের চেহারা বদলে যাবে।” আগামিকাল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে যৌথ সাংবাদিক বৈঠক করার কথা রয়েছে অণ্ণার।
প্রধানমন্ত্রী পদে মমতাই যে তাঁর পছন্দ এবং তিনি যে লোকসভা ভোটের আগে তৃণমূলের হয়ে প্রচারে নামবেন, সে কথা অণ্ণা জানিয়েছিলেন আগেই। মমতার সঙ্গে মুখোমুখি কথাও বলতে চেয়েছিলেন। সেই ডাকে সাড়া দিয়ে এ দিন সাউথ অ্যাভিনিউয়ের দলীয় দফতরে তাঁর সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক করেন তৃণমূল নেত্রী। বস্তুত, দিন কয়েক আগে দিল্লির তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল এসেছিলেন অণ্ণার কাছে। কিন্তু আজ অণ্ণাই নজিরবিহীন ভাবে নিজে গিয়েছেন তৃণমূলের দফতরে। ঘণ্টাখানেক থেকেছেন, বৈঠক করেছেন। পোস্ত-ভাত আর আলু ভান্ডা খেয়েছেন। বৈঠকের পরে গাঁধীবাদী অণ্ণার গলায় মমতা পরিয়ে দিয়েছেন খদ্দরের চাদর। |
|
প্রণতা। নয়াদিল্লিতে তৃণমূলের দফতরে এলেন অণ্ণা হজারে। মঙ্গলবার। ছবি: প্রেম সিংহ।
|
তৃণমূল সূত্রের মতে, অণ্ণার সঙ্গে বৈঠক করে আজ একযোগে তিনটি কাজ সারলেন মমতা। প্রথমত, লোকসভা ভোটের আগে জাতীয় রাজনীতিতে নতুন করে সলতে পাকানোর কাজ অনেকটা এগিয়ে রাখলেন। দ্বিতীয়ত, বাম দলগুলির তৃতীয় ফ্রন্টের সম্ভাবনাকে জোরালো চ্যালেঞ্জ ছুড়লেন। এবং তৃতীয়ত, দুর্নীতি-বিরোধী আন্দোলনের মুখ অণ্ণা হজারেকে তৃণমূলের তথা নিজের প্রস্তাবিত ফেডারেল ফ্রন্টের সঙ্গে জড়িয়ে নিলেন (কেউ কেউ যাকে বলছেন ‘হাইজ্যাক’)। এর ফলে কেজরীবালের সঙ্গে বিচ্ছেদের পরে অণ্ণা-শিবিরে যে শূন্যস্থান তৈরি হয়েছিল, কৌশলে তা-ও ভরাট করতে সচেষ্ট হলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী।
মমতাকে তাঁর কেন পছন্দ, দিন কয়েক আগেই তা বিশদে ব্যাখ্যা করেছিলেন অণ্ণা। বলেছিলেন মমতার সরল-অনাড়ম্বর জীবনযাত্রা, স্বচ্ছ, দুর্নীতিমুক্ত ভাবমূর্তির কথা। আজও বলেছেন, “মমতা এমনই এক নেত্রী যিনি সরকারি বাংলো নেন না, গাড়ি নেন না। মাইনে পর্যন্ত তোলেন না।” তৃণমূল নেতৃত্বও মনে করছেন, এ বার থেকে বিভিন্ন রাজ্যে প্রচারে গিয়ে অণ্ণার সঙ্গে মমতার জীবনদর্শন ও জীবনযাত্রার সাজুয্যের বিষয়টি তুলে ধরা যাবে। দেশজোড়া দুর্নীতি-বিরোধী (যা অনেকাংশে কংগ্রেস-বিরোধীও) হাওয়ায় তাতে বাড়তি সুবিধে পাবে দল। কারণ, মমতার রাজনীতির মূল কথা, আম আদমি অর্থাৎ সাধারণ মানুষের উন্নতি।
ঠিক এই আবেগে সওয়ার হয়েই অ-কংগ্রেসি, অ-বিজেপি বিকল্প হয়ে দিল্লির বিধানসভা নির্বাচনে উদয় হয়েছিল কেজরীবালের। মুখ্যমন্ত্রী পদে ইস্তফার পর লোকসভা ভোটে তিনি দেশ জুড়ে প্রার্থী দিচ্ছেন। আর মমতাও চাইছেন সারা দেশে দলকে ছড়িয়ে দিতে। সম্প্রতি কর্মী সম্মেলনে তিনি বলেছেন, “তৃণমূলকে জাতীয় দল হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে দিল্লিতে গিয়ে আমরা বাংলার অধিকার ছিনিয়ে আনব। এটাই আমার চ্যালেঞ্জ।” অসম, মণিপুর, ত্রিপুরা, অরুণাচল, হরিয়ানা-সহ দশটি রাজ্যকে ইতিমধ্যেই চিহ্নিত করা হয়েছে, যেখানে তৃণমূল প্রার্থীর জয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। ২৫ তারিখ মমতা ত্রিপুরা যাচ্ছেন, ২৬শে অসম। তার পর একে একে নানা রাজ্যে যাবেন। এমনকী দিল্লিতেও প্রার্থী দেওয়ার কথাও ভেবে দেখছেন তিনি। |
দেশের প্রয়োজন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো নেত্রী।
তিনি যদি কেন্দ্রে নেতৃত্ব দেন, তা হলে দেশের চেহারা বদলে যাবে।
অণ্ণা হজারে |
|
কারও কারও মতে, ভোটের আগে কেজরীবালকে নিয়েই কিছুটা মাথাব্যথা রয়ে যাচ্ছে তৃণমূল নেত্রীর। যেখানে প্রশ্ন একটাই আম আদমির যথাযোগ্য প্রতিনিধি কে?
দিল্লির কুর্সিতে বসে জল-বিদ্যুতের দাম নিয়ে দু-একটি জনমুখী সিদ্ধান্ত নিলেও যথেষ্ট বিতর্ক সঙ্গী করেই সরেছেন কেজরীবাল। মুখ্যমন্ত্রী হয়েও রাজপথে ধর্নায় বসেছেন। গত কাল আবার বলেছেন, তিনি পুঁজিবাদের পক্ষে। অনেকের মতে, দুর্নীতি-বিরোধী লড়াইয়ে আপের নীতি ঠিক কী, সেটাই স্পষ্ট হয়নি কখনও। দিল্লির রাজনীতির অলিন্দে ঘোরাফেরা করা দু-এক জন বলছেন, মমতা কিন্তু অণ্ণার সঙ্গে বৈঠকের আগে-পরে খুব ভেবেচিন্তে পদক্ষেপ করেছেন। অণ্ণার গ্রাম রালেগাঁও সিদ্ধিতে দূত করে পাঠিয়েছেন দুই সাংসদ মুকুল রায় ও কে ডি সিংহকে। অণ্ণাও আপ-কে বার্তা দিয়েছেন, শুধু তারাই সততা-স্বচ্ছতার দাবিদার নয়। তাই মমতার উদ্দেশে তিনি বলেন, “দেশের এমন নেতার প্রয়োজন ছিল। এত দিনে তা পাওয়া গেল।”
কাজেই স্বস্তি তৃণমূলে। তাদের হিসেবে, লোকসভা ভোটে একক ভাবে কংগ্রেস বা বিজেপি কেউই সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে না। সে ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা হবে আঞ্চলিক দলগুলির মধ্যে। ভোটের পরে নিজ নিজ সংখ্যা বিচার করে তারা একে অন্যের সঙ্গে জোট গড়তে এগোবে। আর এই লড়াইয়ের মধ্যে অণ্ণার সমর্থন মমতাকে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে বাড়তি সুবিধা দেবে বলে মনে করছেন দলীয় নেতৃত্ব।
আজ অণ্ণার সঙ্গে মূলত প্রচারের ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা নিয়েই আলোচনা হয় মমতার। পরে অণ্ণা জানান, মমতা তাঁর ১৭ দফা অর্থনৈতিক কর্মসূচি মেনে নিয়েছেন। তাঁর কথায়, “প্রত্যেকটি রাজ্য সরকারকে চিঠি দিয়েছিলাম, যেখানে ১৭টি জ্বলন্ত সমস্যার উল্লেখ ছিল। কোনও দল চায়নি এই অর্থনৈতিক ব্যবস্থা পাল্টাতে। একমাত্র মমতা জানিয়েছেন যে, ক্ষমতায় এলে ওই ১৭ দফা কর্মসূচি বাস্তবায়িত করবেন।” তাই অণ্ণার সাফ কথা পরিবর্তন আসবে মমতার নেতৃত্বেই। |
|
|
|
|
|