বোর্ড পরীক্ষার সময় মেলা, আপত্তি পঞ্চায়েত সমিতির
মাদ্রাসা পরীক্ষা চলছে। আগামী সোমবার থেকে শুরু হবে মাধ্যমিকও। তারপর রয়েছে উচ্চ মাধ্যমিক। পরীক্ষার এই মরসুমে রাজ্যের প্রতিটি ব্লকে ‘গ্রামীণ মেলা’ আয়োজনের নির্দেশ ঘিরে বিতর্ক শুরু হয়েছে।
আগামী ২২-২৮ ফেব্রুয়ারি মেলা আয়োজনের জন্য ইতিমধ্যে বিভিন্ন জেলায় নির্দেশ পাঠিয়েছে পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতর। পরীক্ষার মরসুমে মেলা আয়োজন করা নিয়ে সরব হয়েছে অনেকেই। তাঁদের বক্তব্য, পরীক্ষার সময় মেলা করা অনুচিত। মাইকের শব্দে পরীক্ষার্থীদের সমস্যা হবে। এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে উল্টো পথে হাঁটার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মুরারই ২ পঞ্চায়েত সমিতি। মাধ্যমিক ও মাদ্রাসা পরীক্ষা চলাকালীন পরীক্ষার্থীদের অসুবিধার কথা মাথায় রেখে জয়ী সব দলের সদস্যেরা একমত হয়ে কোনও মেলার আয়োজন করবেন না বলে ঠিক করেছেন। ওই সিদ্ধান্তের কথা সমিতি প্রশাসনকে জানিয়েও দিয়েছে। পশ্চিম মেদিনীপুরেও বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি ওই মেলার আয়োজন নিয়ে আপত্তি তুলেছেন।
প্রশাসন সূত্রের খবর, ব্লকে ব্লকে আয়োজিত এই মেলা থেকে গত আড়াই বছরে রাজ্য সরকারের সাফল্যের নানা দিক তুলে ধরা হবে। জানানো হবে, কোন দফতর কী কী কাজ করেছে, আগামী দিনে কী কাজ করবে। পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতর থেকে পাঠানো নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, কী ভাবে ‘গ্রামীণ মেলা’র আয়োজন করতে হবে। ওই নির্দেশ অনুযায়ী, মেলার জন্য জেলাস্তরে একটি কমিটি গঠন করতে হবে। কমিটির চেয়ারম্যান হবেন জেলা পরিষদের সভাধিপতি। এগজিকিউটিভ চেয়ারম্যান হবেন জেলাশাসক। সঙ্গে আরও কয়েক জন আধিকারিকও থাকবেন। অন্য দিকে, ব্লকস্তরেও একটি কমিটি গঠন করতে হবে। কমিটির চেয়ারম্যান হবেন পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি। কনভেনর হবেন বিডিও। মেলা চত্বরে একগুচ্ছ স্টল থাকবে। প্রতিটি দফতর স্টল দেবে। যেমন, কোনওটি একশো দিনের কাজের স্টল, কোনওটি গ্রামীণ সড়ক যোজনার, কোনওটি স্বসহায়ক দলের। শিক্ষা, স্বাস্থ্য দফতরের স্টলও থাকবে। প্রদর্শনী, কর্মশালার সঙ্গে মেলা উপলক্ষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও হবে। ফলে, মাইকের অত্যাচারের আশঙ্কা থাকছেই।
পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, সিপিএমের মহম্মদ আলি রেজা বলছেন, “টানা সাত দিন ধরে মেলা চলবে। মেলাকে ঘিরে এলাকা এক রকম উৎসবের চেহারা নেবে। কিন্তু ওই একই সময়ে মাধ্যমিক ও মাদ্রাসার মতো দু’টি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা রয়েছে। পরীক্ষার্থীদের অসুবিধা তৈরি করে কোনও উৎসবের আয়োজন ঠিক নয়। আমাদের পঞ্চায়েত সমিতির সেখানেই মূল আপত্তি।” মেলার ব্যয়ভার নিয়েও তাঁরা প্রশ্ন তুলেছেন। নির্দেশ অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েত সমিতির নিজস্ব তহবিল থেকে ওই মেলার আয়োজন করতে হবে। আলি রেজার ক্ষোভ, “অস্থায়ী কর্মীদের সাম্মানিক দিতেই পঞ্চায়েত সমিতির নিজস্ব আয়ের অনেকটাই বেরিয়ে যায়। ওই আয় বাড়ানোর বিকল্প কোনও রাস্তাও আমাদের পঞ্চায়েত সমিতির নেই। এমন একটি প্রয়োজনীয় টাকা গ্রামীণ মেলা আয়োজন করে ‘উড়িয়ে’ দেওয়ায় আমাদের ঘোরতর আপত্তি রয়েছে।” সহ-সভাপতি ফরওয়ার্ড ব্লক দলের সীতুনাথ মণ্ডলের প্রশ্ন, “ওই মেলার জন্য সব মিলিয়ে এক লক্ষেরও বেশি টাকা খরচ হয়ে যাবে। একেই আয় কম। তার উপরে এমন ব্যয়বহুল মেলার আয়োজন করি কোন যুক্তিতে?” এ ব্যাপারে বামেদের সঙ্গে একমত সমিতির বিরোধী দলগুলিও। বিরোধী দলনেতা, কংগ্রেসের আব্দুল ওয়াদুদ বলছেন, “মাধ্যমিক, মাদ্রাসা পরীক্ষা চলাকালীন এই সব জিনিস করা একদমই ঠিক হবে না। অভিভাবকদের একটা বড় অংশও মেলা দেখতে আসতে পারবেন না। এই সময় মেলা করে কী এমন উপকার হবে?’’ তাঁর যুক্তি, মেলা করলে পঞ্চায়েত সমিতির আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি হবে। তাই সঙ্গত কারণেই তাঁরাও মেলার বিরোধিতা করেছেন। দু’দলের সঙ্গে সহমত পঞ্চায়েত সমিতির তৃণমূল সদস্য মুরাদ আলিও। তিনি বলেন, “পরীক্ষা চলাকালীন মেলা না করাই ভাল।”
এক দিকে, সরকারি নির্দেশ কার্যকর করার চাপ। অন্য দিকে, পঞ্চায়েত সমিতির আপত্তি। দুইয়ের টানাপোড়নে বিড়ম্বনায় পড়েছেন সংশ্লিষ্ট বিডিও রাখী পাল। তিনি বলেন, “নির্দেশ অনুযায়ী পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতিই হচ্ছেন ওই গ্রামীণ মেলার চেয়ারম্যান। মেলা নিয়ে প্রথম বৈঠকেই তিনি তাঁর আপত্তির কথা জানিয়েছিলেন। সেই আপত্তির কথা লিখিত ভাবে জেলাশাসককে জানিয়েছি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ যা নির্দেশ দেবেন, সেই অনুযায়ী কাজ করা হবে।’’ যোগাযোগ করা হলে জেলাশাসক জগদীশপ্রসাদ মিনার প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া, “মেলার সঙ্গে পরীক্ষার কী সম্পর্ক!” পরে অবশ্য তিনি বলেন, “ওই মেলা নিয়ে রাজ্যের পঞ্চায়েত দফতরের স্পষ্ট নির্দেশ আছে। এ ব্যপারে যা জিজ্ঞাসা করার সেই দফতরকেই জিজ্ঞাসা করুন।” অন্য দিকে, অতিরিক্ত জেলাশাসক (জেলাপরিষদ) বিধান রায় বলেন, “ঊর্ধ্বতন দফতর থেকে পাঠানো নির্দেশ কার্যকর করতেই হবে।” মেলায় জেলা চেয়ারম্যান, জেলা পরিষদের সভাধিপতি তৃণমূলের বিকাশ রায়চৌধুরী অবশ্য এর মধ্যে রাজনীতিকেই দেখছেন। তাঁর দাবি, “ওই পঞ্চায়েত সমিতিতে বিরোধীরা ক্ষমতায়। তাই তাঁদের মেলায় আপত্তি।”
এ দিকে নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক ওই এলাকার বেশ কয়েকটি হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষকরা বিষয়টি নিয়ে বেশ চিন্তিত। তাঁরা বলছেন, “পরীক্ষার সময় মেলার আয়োজন না করলেই ভাল হত। কয়েক দিন অপেক্ষা করে পরীক্ষা পেরিয়ে মেলাটি করাই যেতে পারত।” নিখিল বঙ্গ শিক্ষক সমিতির জেলা সম্পাদক তথা রামপুরহাট হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক মহম্মদ নুরুজ্জামান আবার বলেন, “ওই গ্রামীণ মেলা পরীক্ষাকেন্দ্র থেকে দূরে করলেই ভাল। তবে সাধারণত পরীক্ষার সময় মাইক বাজানো নিয়ম বিরুদ্ধ। সে ক্ষেত্রে এই সময় মেলা না করাটাই ঠিক ছিল।” অন্য দিকে, পশ্চিমবঙ্গ শিক্ষক সমিতির জেলা সম্পাদক অধীর দাসের প্রতিক্রিয়া, “পরীক্ষা চলাকালীন সাধারণ মেলারই অনুমোদন মেলে না। সেখানে বোর্ড পরীক্ষা চলাকালীন সরকারই এমন মেলার আয়োজন করছে। এ বিষয়ে সরকারের পুনর্বিবেচনা করা উচিত।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.