পুরনো সারেঙ্গি নিয়ে মাঠের এক কোনে বসে রয়েছেন বছর আটান্নর প্রৌঢ়। পাশে ডাঁই করা পুরনো আসবাব, মুখোশ, মূর্তি। অনেকেই আসতে-যেতে হাতে নিয়ে নেড়েচেড়ে দেখছেন জিনিসগুলো। শখ মেটাতে কেউ বা পুরনো আসবাব কিনে বাড়ি ফিরছেন, কেউ বা দরদস্তুর করেই রণে ভঙ্গ দিচ্ছেন।
পানাগড়ের মাটি উৎসবে এ ধরণেরই অ্যান্টিক জিনিসপত্র নিয়ে এসেছেন দার্জিলিংয়ের নকশালবাড়ির ভবানী বিশ্বাস। ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প দফতরের সামনের মাঠে পসরা সাজিয়েছেন তিনি। ভবানীবাবু জানান, ৩০ বছর ধরে এই পেশাতেই আছেন। নকশালবাড়ি হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক পরিতোষ চাকলাদারের কাছে থেকে অ্যান্টিক সংগ্রহের এই নেশা পেয়ে বসে তাঁকে। এখন পুরনো বাড়ির নকশা করা জানালা-দরজা, কাঠের নানা মুখোশ থেকে আদিবাসী সারেঙ্গি সবই রয়েছে তাঁর সংগ্রহে। নিজেও বিভিন্ন ধরণের মডেল গড়েন, যেমন-আফ্রিকার মাশাই উপজাতির মডেল।
|
মুখোশের পসরা নিয়ে বসে ভবানীবাবু। —নিজস্ব চিত্র। |
ভবানীবাবুই জানান, জারুল, গামার, কদম, জাম, মন্দার, শিরিষ, কৃষ্ণচূড়া ইত্যাদির কাঠ দিয়েই সচরাচর জিনিস গড়েন তিনি। সম্প্রতি ১০ হাজার সারেঙ্গি দিয়ে কলকাতার বেহালার বড়িশা ক্লাবের মণ্ডপও বানিয়েছেন। ২০ বছরেরও বেশি পুরনো একটা সারেঙ্গি রয়েছে তাঁর কাছে। যার দাম ৩০ হাজারেরও বেশি। এছাড়াও কাঠ দিয়ে চাবির রিং, কানের দুলও তিনি তৈরী করে থাকেন। ভবানীবাবুর দাবি, তাঁর কাছে একটি শতাব্দী প্রাচীন মুখোশ রয়েছে যার দাম ৭০ হাজারেরও বেশি। তিনি বলেন, “যত পুরনো কাজ তত দাম।” মাটি উৎসবে অবশ্য এ জিনিস কেনার ক্রেতা এখনও পাননি তিনি। কিন্তু কোথা থেকে জোগাড় করেন এসব জিনিস? ভবানীবাবু জানান, বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে, বাড়ি বাড়ি ঘুরে ঘুরে এসব জোগাড় করেন।
আসানসোল থেকে মেলায় এসেছিলেন দেবেশ রায়। ভবানীবাবুর হাতে তৈরি সাবেক কারুকাজের ভারি কাঠের সোফা সেট কিনে নিয়ে গেলেন তিনি। বললেন, “একবার কোচবিহারে গিয়ে পরিচিত একজনের বাড়িতে এমন সংগ্রহ দেখেছিলাম। এ বার হাতের কাছে দেখে আর লোভ সামলাতে পারলাম না। শখের সঙ্গে তো আপোস হয় না।”
শনি-রবিবারের বৃষ্টিতে অনেক জিনিসই ভিজে গিয়েছে। অনেকেই দেখে আপশোষ করছেন, মূল্যবান সামগ্রীগুলি নষ্ট হয়ে না যায়। তবে ভবানীবাবু কিন্তু খুশি। তাঁর দাবি, “রোদ-জলে এসব সামগ্রী নষ্ট হয় না। আমার মুখের কথায় অনেকেই বিশ্বাস করেন না। এখানে হাতে হাতে তার প্রমাণ দিতে পারছি।” |