লোকসভা ভোটের প্রাক্কালে দার্জিলিং পাহাড়ে গিয়ে প্রকাশ্য সভা করে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূলের থেকে দূরে থাকার জন্য গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার প্রধানকে পরামর্শ দিলেন সিপিএমের প্রবীণ নেতা তথা প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য। সোমবার দার্জিলিঙের চকবাজারে সিপিএম প্রভাবিত চা বাগান মজদুর ইউনিয়নের সভায় যোগ দিতে গিয়ে ওই পরামর্শ দেন প্রাক্তন পুরমন্ত্রী। তাঁর কথায়, “সামনে লোকসভা ভোট। তার আগে তৃণমূল এখন মোর্চার সঙ্গে ফের সুসম্পর্ক গড়েছে। সে জন্য বিমল গুরুঙ্গকে সতর্ক থাকতে হবে।” পাহাড় ও সমতলের রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের অনেকেই মনে করছেন, লোকসভা ভোটের আগে মোর্চা ও তৃণমূলের মধ্যে দূরত্ব তৈরির লক্ষ্যে আসরে নেমেছেন সিপিএমের দার্জিলিং জেলা নেতৃত্ব। |
দার্জিলিঙে অশোক। —নিজস্ব চিত্র। |
অশোকবাবুর সন্দেহ, “আসন্ন লোকসভা ভোটের জন্যই মোর্চাকে ফের ব্যবহার করতে সক্রিয় হয়েছেন তৃণমূল নেতৃত্ব।” সে জন্য তাঁর দীর্ঘ বক্তৃতায় বারেবারেই বিমল গুরুঙ্গদের নানা ভাবে তৃণমূলের থেকে সতর্ক থাকার বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন প্রাক্তন পুরমন্ত্রী। এমনকী, পাহাড়ের নানা সম্প্রদায়ের জন্য পৃথক বোর্ড গড়ে বিভাজনের চেষ্টা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
প্রায় এক বছর বাদে দার্জিলিং পাহাড়ে কোনও প্রকাশ্য সভা করল সিপিএম প্রভাবিত কোনও সংগঠন। সেখানে যোগ দিয়ে প্রকাশ্যে বক্তৃতা করলেন প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোকবাবু, সিপিএমের প্রাক্তন রাজ্যসভার সাংসদ সমন পাঠক, দার্জিলিঙের জোনাল কমিটির সম্পাদক গৌতমরাজ রাই, গৌতম ঘোষ, ভরত পটেলের মতো চা শ্রমিক নেতারা। ওই সভা ঘিরে দলের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে উদ্দীপনা ছিল। সেখানে অশোকবাবু জানিয়ে দেন, তাঁরাও পাহাড়ে লোকসভায় প্রার্থী দেবেন। তবে প্রার্থী ঠিক করার আগে পাহাড়ের সামগ্রিক প্রেক্ষাপট নিয়েও আলোচনা করা হবে বলে তিনি জানান।
দুপুরের ওই জনসভার খবর পৌঁছেছে মোর্চা নেতাদের কাছেও। মোর্চার কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সভাপতি প্রদীপ প্রধান বলেন, “অশোকবাবু একজন প্রবীণ রাজনৈতিক নেতা। তাঁর বোঝা উচিত, জিটিএ ভাল ভাবে চালানোর জন্য রাজ্যের সঙ্গে সুসম্পর্ক থাকা দরকার। সেটা আমাদের পাহাড়ের উন্নয়নের স্বার্থে রাখতে হচ্ছে। তবে অশোকবাবু আমাদের যে সব পরামর্শ দিয়েছেন তা অবশ্যই আমরা মাথায় রাখব।”
তৃণমূলের দার্জিলিং পাহাড় শাখার আহ্বায়ক বিন্নি শর্মার অভিযোগ, অশোকবাবুরা ভোট বুঝলেও পাহাড়ের আবেগ বোঝার চেষ্টা কোনও দিন করেননি। তাঁর অভিযোগ, “আমাদের মুখ্যমন্ত্রী ক্ষমতাসীন হওয়ার পরে আড়াই বছরে ২৬ বার পাহাড় সফর করেছেন। পাহাড়ে শান্তি ফিরেছে। উন্নয়ন হচ্ছে। এখন লোকসভা ভোটের মুখে পাহাড়ে অশান্তির বীজ বুনতে কেউ যদি চেষ্টা করেন, তা হলে পাহাড়ের মানুষ কিন্তু তা মেনে নেবেন না।” |