প্রাথমিক স্কুল লাগোয়া ব্যস্ততম রাস্তায় আড়াই ফুটের পাঁচিল তুলে উপরে বড় আকারের কাচের টুকরো বসিয়ে দেওয়ায় পড়ুয়া ও অভিভাবকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। শিলিগুড়ি শহরের হিলকার্ট রোড লাগোয়া ঐতিহ্য মন্ডিত মিত্র সম্মিলনী ক্লাবের সামনে ঘটনাটি ঘটেছে। এলাকার বাসিন্দা ও নিত্যযাত্রীদের অনেকেরই অভিযোগ, বহুবার আপত্তি করা সত্ত্বেও ক্লাব কর্তৃপক্ষ ওই ‘বিপজ্জনক’ পাঁচিল তুলে দিয়েছেন। ফলে, একটু অসতর্ক হয়ে ছোট্ট পাঁচিলে হাত পড়লেই দুর্ঘটনা ঘটছে বলে অভিযোগ। ইতিমধ্যেই কয়েকজন পথচারীও জখম হয়েছেন বলে বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ। |
এই পাঁচিল নিয়েই শঙ্কা। বিশ্বরূপ বসাকের তোলা ছবি। |
যদিও ক্লাবের সভাপতি তথা দার্জিলিং জেলা কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি উদয় দুবের দাবি, “বেআইনি পার্কিং ও ক্লাব চত্বরে অসামাজিক কার্যকলাপ রোধে ওই পাঁচিল দেওয়া হয়েছে।” কিন্তু, আড়াই ফুট উঁচু পাঁচিলের উপরে বড় বড় কাঁচের টুকরো বসানো কতটা যুক্তিযুক্ত সেই প্রশ্নে উধয়বাবু কোনও সদুত্তর দিতে পারেননি। তাঁর মন্তব্য, “যাতে কারও কোনও বিপদ না ঘটে তা নিশ্চিত করতে যা করণীয় করব।”
ওই পাঁচিলের সামনেই নীলনলিনী প্রাথমিক স্কুল। কাছাকাছি রয়েছে একাধিক দোকান, হোটেলও। রাস্তাটি সঙ্কীর্ণ। স্কুল শুরু ও ছুটির সময়ে সেখানে ভিড় উপচে পড়ে। দিনের অধিকাংশ সময়েই রাস্তাটি জনাকীর্ণ থাকে। সে জন্য সেখানে রাস্তার ধার ঘেঁষে চলাচলের সময়ে একটু অসতর্ক হলেই কাঁচের উপরে পড়ে বিপত্তি ঘটতে পারে। উপরন্তু, বাসিন্দাদের আশঙ্কা, রাতে লোডশেডিংয়ের সময়ে ওই রাস্তায় কোনও বিপত্তি ঘটলে বড় মাপের রক্তারক্তি কাণ্ড ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। ওই প্রাথমিক স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা কল্পনা মণ্ডল বলেন, “যা হয়েছে তাতে প্রতি পদে বিপত্তি ঘটতে পারে। পড়ুয়া ও অভিভাবকদের অনেকেই রোজই আশঙ্কার কথা বলছেন। কী যে করব জানি না।”
পড়ুয়াদের সমস্যার কথা শুনেছেন শিলিগুড়ির প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান মুকুল কান্তি ঘোষও। তিনি বলেন, “এলাকার কাউন্সিলরের সঙ্গে কথা বলব। প্রাথমিক স্কুলের সামনে এমন বিপজ্জনক পাঁচিল থাকা উচিত নয়। সংসদের প্রতিনিধি দলও পাঠানো হবে।” পুরসভার মেয়র পারিষদ (শিক্ষা) রুমা নাথও বুঝতে পারছেন না কী ভাবে স্কুলের সামনে এমন একটি বিপজ্জনক পাঁচিল তৈরি হল? তিনি বলেন, “পুরসভার তরফে ব্যবস্থা হবে।”
ওই এলাকার কাউন্সিলর হলেন তৃণমূল কংগ্রেসের নান্টু পাল। নান্টুবাবু বলেন, “যা শুনেছি তা অত্যন্ত উদ্বেগের। আমি কাচ সরিয়ে দেওয়ার জন্য বলেছি। আশা করি, তাড়াতাড়ি তা হবে।” শিলিগুড়ির মেয়র গঙ্গোত্রী দত্ত জানিয়েছেন, তিনিও এলাকার কয়েকজনের থেকে অভিযোগ পেয়েছি। মেয়রের বক্তব্য, “স্কুলের পড়ুয়াদের চলাফেরা করা নিয়ে কোথাও যাতে নুন্যতম ঝুঁকি না থাকে, তার ব্যবস্থা করা হবে।” এলাকার বাসিন্দা ও অভিভাবকরা সকলে কিন্তু নেতা-কর্তাদের উদ্বেগে আশ্বস্ত হতে পারেননি। তাঁদের অনেকেই জানান, ওই ভাবে পাঁচিল দেওয়া হচ্ছে দেখেও কেন পুরসভা, কাউন্সিলর হাত গুটিয়ে বসে থাকলেন সেটা স্পষ্ট নয়। |