তুষারপাতের পর এ বার শিলাবৃষ্টি উপভোগ করলেন পর্যটকেরা। সোমবার সকাল থেকে দার্জিলিঙে আকাশ মেঘমুক্ত থাকলেও, দুপুরে হঠাৎই কালো মেঘে আকাশ ঢাকে। ঝড়ের সঙ্গে শুরু হয় শিলাবৃষ্টি। দার্জিলিং শহরে তুষারপাতের ঘণ্টা খানেক পরে টাইগার হিলেও খানিক ক্ষণ ধরে ঝড়-শিলাবৃষ্টি চলেছে।
দার্জিলিং শহর থেকে মাত্র ১২ কিলোমিটার দূরে টাইগার হিল তুষারের পুরু আস্তরণে ঢাকা পড়েছিল রবিবার দুপুরে। ঘণ্টা দুয়েক ধরে তুষারপাত চলে। সোমবার সকাল থেকে তুষার পাতের আশায় দার্জিলিঙে ভিড় শুরু হয় পর্যটকের। শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়ি -সহ উত্তরবঙ্গের বাসিন্দারাই মূলত দার্জিলিঙে ভিড় করেন। |
টাইগার হিলে শিলাবৃষ্টি। সোমবার রবিন রাইয়ের তোলা ছবি। |
এ দিন সকাল থেকে টাইগার হিলেও পর্যটকদের ভিড় ছিল। রবিবারের মতো না হলেও এ দিন দার্জিলিঙের তাপমাত্রা ছিল স্বাভাবিকের থেকে অনেকটাই কম। এ দিন দার্জিলিঙের তাপমাত্রা দিনের বেশিক্ষণ সময়েই ১ থেকে ৩ ডিগ্রির মধ্যে ওঠানামা করেছে। যদিও, সোমবার সকালটা বেশ ঝকঝকে ভাবেই শুরু হয়েছিল দার্জিলিঙে। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গেই আকাশ মেঘলা হতে শুরু করে। কালো মেঘে আকাশ ঢেকে যাওয়ায় দুপুর দুটো নাগাদ যেন সন্ধে নেমে আসে শৈল শহরে। শুরু হয় ঝড় এবং শিলাবৃষ্টি। মিনিট দশেক ঝড় চলার পরে ফের আকাশ পরিষ্কার হয়ে যায়। তবে শিলাবৃষ্টির পরে তাপমাত্রা আরও খানিকটা কমে যায়। এ দিন সন্ধ্যায় টাইগার হিলের তাপ মাত্রা প্রায় হিমাঙ্কের কাছাকাছি নেমে আসে বলে জানা গিয়েছে। ঝড়ের পরে শিলাবৃষ্টি নিয়ে পর্যটকদের মেতে উঠতে দেখা যায়। রাস্তায় গড়িয়ে যাওয়া শিল তুলে নিজেদের মধ্যে ছোড়াছিুড়ি করতেও দেখা যায় বেশ কয়েকটি পর্যটকদের দলকে। টাইগার হিলে থাকা পর্যটকদেরও শিলাবৃষ্টির পরে শিল পড়ে থাকা পাকদন্ডি রাস্তার ছবি ক্যামেরাবন্দি করতে হুড়োহুড়ি দেখা গিয়েছে। স্থানীয় হোটেল ব্যবসায়ী প্রদীপ লামা এ দিন বলেন, “প্রতি দিন গড়পড়তা সাত-আটটি পর্যটকদের দল টাইগার হিলে আসে। সোমবার টাইগার হিলে পর্যটকের গাড়ি সংখ্যা ছিল অন্য দিনের তুলনায় অন্তত তিন গুণ।”
মুম্বই থেকে দার্জিলিঙে এসেছেন ছ’জনের একটি দল। দলের সদস্য আনসি দুলানি বলেন, “টাইগার হিলে বরফ পড়ার কথা রবিবার বিকেলে জানতে পারি। সে কারণেই সোমবার সকালে টাইগার হিলে চলে যাই। বরফ না পেলেও ঠান্ডা উপভোগ করেছি।” পর্যটন ব্যবসায়ী সম্রাট সান্যাল বলেন, “বরফ পড়ার খবর ছড়িয়ে পড়তেই ফোন আসতে শুরু করে। ভিন রাজ্যের পর্যটকরাও বরফ পড়েই চলছে কিনা খোঁজ নেন। বছরে এ সময়টা সাধারণত টাইগার হিলে তুষারপাত হয়।”
রবিবার রাত থেকে বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টিপাতের পরে সোমবার সমতলের আকাশও ছিল আংশিক মেঘমুক্ত। রবিবার রাত এগারোটার পর থেকে বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টি শুরু হয় শিলিগুড়ি জলপাইগুড়িতে। গভীর রাত পর্যন্ত বৃষ্টি চলে। এ দিন অবশ্য রাত পর্যন্ত বৃষ্টি না হলেও দুপুরের পর থেকে ফের মেঘ জমতে শুরু করে উত্তরের আকাশে। এ দিন উত্তরবঙ্গের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের থেকে অনেকটাই কম ছিল। কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় জলপাইগুড়িতে ৩৫ এবং কোচবিহারে ১৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। বৃষ্টি হয় সিকিমেও। গ্যাংটক এবং তাদঙের তাপমাত্রা ছিল চার ডিগ্রির কাছাকাছি। কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতরের সিকিমের আধিকারিক গোপীনাথ রাহা বলেন, “সমতলে বৃষ্টি এনে তাপমাত্রা কমিয়ে দেওয়া পশ্চিমী ঝঞ্ঝাটি উত্তরবঙ্গের আকাশ থেকে সরতে শুরু করেছে। সে কারণে এ দিন সর্বত্র তেমন বৃষ্টিপাত হয়নি। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আবহাওয়া পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়ে যাবে।” |