গ্রামীণ সড়ক যোগাযোগের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় প্রকল্পের প্রতিটি পাইপয়সা ব্যবহার করতে চায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। রাজ্য বাজেটে এই ইঙ্গিতই দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র। একই দিনে সংসদে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পালনিয়াপ্পন চিদম্বরমের পেশ করা ভোট অন অ্যাকাউন্টেও জোর দেওয়া হয়েছে নতুন গ্রামীণ ও জাতীয় সড়ক নির্মাণের উপর।
সোমবার বিধানসভায় রাজ্য বাজেট পেশ করে অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র জানান, ২০১৩-২০১৪ অর্থবর্ষে প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনা প্রকল্পে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকায় সাড়ে তিন হাজার কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণের কাজ শেষ হবে। এর পাশাপাশি আরও ১৬ হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ মোট ৩৩৪৯টি গ্রামীণ রাস্তা তৈরির সূচনা হয়েছে গত মাসের ৭ তারিখ। কেন্দ্রীয় প্রকল্প মহাত্মা গাঁধী জাতীয় গ্রামীণ কর্মসংস্থান (চলতি কথায় ‘রেগা’) প্রকল্পে ১০০ দিনের কাজের মাধ্যমে এই বিশাল সড়ক পরিকাঠামো তৈরির কাজ করা হচ্ছে।
লোকসভা ভোটের আগে সড়ক যোগাযোগ ও তার পরিকাঠামো শাসক দলকে যে রাজনৈতিক সুবিধা দেবে, সে কথা গোপন করেননি পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। তিনি স্পষ্টই বলেন, “প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনা বা মহাত্মা গাঁধী জাতীয় গ্রামীণ কর্মসংস্থান (চলতি কথায় ‘রেগা’) প্রকল্পের টাকায় গ্রামীণ সড়কের কাজ করার সময় পঞ্চায়েত স্তর থেকে যাতে বিরোধিতা না-আসে, তার জন্যই আমরা রাজ্যের প্রতিটি পঞ্চায়েতকে নিয়ে বৈঠক করেছি। এর রাজনৈতিক সুবিধা তো তুলবই। কাজ দেখিয়েই তুলব। ভাঁওতা দিয়ে নয়।”
পঞ্চায়েতমন্ত্রী আরও বলেন, “আগের বাম সরকার রীতিমতো চিঠি দিয়ে কেন্দ্রকে জানিয়ে দিয়েছিল যে নতুন রাস্তা তৈরির দরকার নেই। ফলে আমরা ক্ষমতায় এসে ফ্যাসাদে পড়েছিলাম। অনেক চেষ্টা করে প্রায় ১২ হাজার কিলোমিটার রাস্তা তৈরির কাজ মঞ্জুর করিয়ে আনি প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনা প্রকল্পের অধীনে। সেই কাজ শেষ হতে চলেছে।” প্রাক্তন পঞ্চায়েত মন্ত্রী ও বিধানসভায় বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র কার্যত স্বীকার করেছেন যে তাঁরা নতুন রাস্তা তৈরির উপর জোর দেননি। তিনি এ দিন বলেন, “তার চেয়ে পুরনো রাস্তা চওড়া করা মেরামত করানোর কাজে আমরা জোর দিতে চেয়েছিলাম। কারণ, আর কতশত রাস্তা হবে?” কিন্তু নতুন রাস্তা তৈরি হলেও তার স্থায়িত্বের মেয়াদ নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন সূর্যবাবু।
আগের বাম সরকারের পরিকল্পনায় আর একটি ত্রুটি উল্লেখ করে সুব্রতবাবু বলেন, “বিশেষ অনগ্রসর এলাকা মঞ্জুরি তহবিলের (এসবিআরজিএফ) টাকা বামেরা নিতে চায়নি। আমরা সেই সুবিধে নিয়ে পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়া ও পুরুলিয়ার প্রতি ইঞ্চি রাস্তা পিচ ঢালাই করাচ্ছি।”
জঙ্গলমহল বলে পরিচিত তিন জেলায় বিভিন্ন কারণে থমকে যাওয়া সড়ক নির্মাণের কাজ ফের চালু করাতে দুটি কেন্দ্রীয় নির্মাণ সংস্থাকে দায়িত্ব দিতে রাজি হয়েছে রাজ্য। ন্যাশনাল প্রজেক্টস কনস্ট্রাকশন কর্পোরেশন (এনপিসি) এবং ন্যাশনাল বিল্ডিং কনস্ট্রাকশন কর্পোরেশনের (এনবিবিসি) হাতে এই অঞ্চলের রাস্তা তৈরির কাজ দেওয়া হয়েছে এ রাজ্যে সড়ক তৈরিতে বাম আমলের চেয়ে ‘এখন অনেক ভাল ও দ্রুতগতিতে কাজ হচ্ছে,’ এই দাবি করে বর্তমান সরকার হিসেব দিয়ে বলছে, ২০০১ সাল থেকে বাম আমলের ১২ বছরে গড়ে ৩২৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ৯৮৭ কিলোমিটার করে মোট ১৭৩টি রাস্তা তৈরি হয়েছিল। বর্তমান আমলে প্রকৃত কাজ শুরু হয় ২০১২-২০১৩ সালে। সেই বছর মোট ৪১৩ কোটি টাকায় ১২৮১ কিলোমিটার দীর্ঘ মোট ২৭৩টি রাস্তা তৈরি করা গিয়েছে।
অপরদিকে এ দিন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন, ৩৯ হাজার ১৪৪ কিলোমিটার গ্রামীণ রাস্তা এবং ৩৯২৮ কিলোমিটার জাতীয় সড়ক তৈরি করা হয়েছে। এই হিসেব ২০১২-’১৩ থেকে বর্তমান অর্থবছরের ন’মাস পর্যন্ত। |