রাজ্যের জন্য ঋণ মকুবে সম্মতি না পেয়ে ইউপিএ-২ সরকারের বিরুদ্ধে লাগাতার আক্রমণে যাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিগত বামফ্রন্ট সরকারকে বিপুল ঋণের অনুমতি দেওয়ায় কংগ্রেস এবং সিপিএমকে এক বন্ধনীতেও ফেলছেন। সেই ধারা অব্যাহত রেখেই সোমবার বিধানসভায় আরও এক ধাপ এগোলেন মুখ্যমন্ত্রী। ইঙ্গিত দিলেন, কয়েক মাস পরেই কেন্দ্রে নতুন সরকার এলে রাজ্যের ঋণ পুনর্গঠন করা হতে পারে। সেই মর্মে তাঁরা আলোচনা চালাবেন। ঋণের উপরে সুদ মকুবের ব্যবস্থা হলে তখন বাংলায় সব কিছুই সোনা হয়ে যাবে বলেও মন্তব্য করেছেন মমতা!
সদ্য ব্রিগেডে এসে তৃণমূল নেত্রীর ঋণের উপরে সুদ মকুবের (মোরাটোরিয়াম) দাবিকে সমর্থন জানিয়ে যান বিজেপি-র সর্বভারতীয় নেতৃত্ব। দলের সভাপতি রাজনাথ সিংহ বলেছিলেন, মমতা যে দাবি করছেন, কেন্দ্রের ইউপিএ সরকারের তাতে সম্মত হওয়া উচিত ছিল। তার পরে এ দিন মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্যকে বিজেপি নেতৃত্বের ব্রিগেড-বার্তার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ বলে মত বিরোধীদের।
রাজ্যপালের বক্তৃতার উপরে বিতর্কের শেষে তাঁর জবাবি বক্তৃতায় মুখ্যমন্ত্রী এ দিন বারবারই বোঝাতে চেয়েছেন, কেন্দ্র ঋণের সুদ হিসাবে বিপুল টাকা কেটে নিয়ে চলে যাচ্ছে। তবু রাজ্যে উন্নয়নের কাজে কোনও ঘাটতি রাখছে না রাজ্য। ঋণের উপরে ওই পরিমাণ সুদ দিতে না-হলে রাজ্যের জন্য তাঁর সরকার আরও কাজ করতে পারত। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “নতুন সরকার আসুক। ঋণের পুনর্গঠন হোক। আমরা কথা বলব। যদি আর টাকা না কাটে, সব সোনা হয়ে যাবে! স্বর্ণযুগের সূচনা হবে আবার বাংলায়!” মোট ৮০ মিনিটের বক্তৃতায় এই মন্তব্যের আগেই মুখ্যমন্ত্রীর কটাক্ষ ছিল, “কংগ্রেস এখন কমরেড হয়ে গিয়েছে! আমাদের টাকা কাটছে। ধার নেওয়ার সম্মতি বন্ধ। কিন্তু সিপিএমকে ধার নিতে দিয়েছে। যার জন্য আমরা ভুগছি! সিপিএমের ধার আমরা কেন শোধ করব?”
মুখ্যমন্ত্রীর বক্তৃতা বয়কট করায় তাঁর ওই কথার সময়ে সভায় ছিলেন না বাম ও কংগ্রেস বিধায়করা। পরে বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র দাবি করেন, মুখ্যমন্ত্রীর বক্তৃতার অসংশোধিত প্রতিলিপি সংগ্রহ করে তাঁর বক্তব্যের অসারতা দেখিয়ে দেবেন। তাঁর কথায়, “উনি বলেছেন, একটাও অসত্য হলে ছেড়ে চলে যাবেন। আমরা চাই না, উনি ছেড়ে চলে যান! কিন্তু বক্তৃতার প্রতিলিপি পেলে অন্তত এক ডজন অসত্য দেখিয়ে দিতে পারব।” কেন্দ্রের প্রতি বঞ্চনার অভিযোগ উড়িয়ে কংগ্রেস বিধায়ক মানস ভুঁইয়া দাবি করেছেন, একাধিক ক্ষেত্রে দিল্লির মঞ্জুর করা টাকা কাজে লাগানোর শংসাপত্র জমা দিতে পারেনি রাজ্য। মানসবাবুর কটাক্ষ, “মুখ্যমন্ত্রী মোদীর ডাকে সাড়া দিতে তৈরি হচ্ছেন! তাই কংগ্রেসকে বেশি গালমন্দ করতে হচ্ছে!” বিজেপি বাবরি মসজিদ ভেঙে সাম্প্রদায়িকতার রাজনীতি করেছে বলেও এ দিন উল্লেখ করেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু কংগ্রেস এবং সিপিএম নেতৃত্বের পাল্টা প্রশ্ন, “তার পরেও তো উনি এনডিএ সরকারে যোগ দিয়েছিলেন!”
সিবিআই-প্রশ্নেও এ দিন কংগ্রেস-সিপিএমকে বিঁধেছেন মুখ্যমন্ত্রী। নন্দীগ্রামে গুলি চালানোর নির্দেশ যারা দিয়েছিল, তাদের ছেড়ে যারা আদেশ পালন করেছিল, তাদের কেন সিবিআই চার্জশিটে রাখা হয়েছে, সেই প্রশ্ন তুলে তাঁর মন্তব্য, “কংগ্রেস-সিপিএম ভাই ভাই, সিবিআই ছাড়া গতি নাই!” |