ব্যয় ছেঁটে বিদ্যুৎ-মাসুল হ্রাসের ভাবনা মমতার
গৃহস্থের বোঝা কিছুটা লাঘব করতে বিদ্যুৎ-মাসুল কমানোর কথা ভাবছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। তবে রাজকোষ থেকে ভর্তুকি দিয়ে নয়, উৎপাদনের খরচ কমিয়েই মাসুল কমানোর পরিকল্পনা শুরু হয়েছে। সোমবার বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য ঘোষণা করেছেন, আগামী অর্থবর্ষে (২০১৪-১৫) বিদ্যুতের গড় মাসুল ইউনিটপিছু পাঁচ থেকে দশ পয়সা কমবে। সুবিধাটি শুধু বণ্টন এলাকার গ্রাহকেরাই পাবেন।
রাজ্যের শাসনক্ষমতায় এসেই মমতা জানিয়েছিলেন, বিদ্যুতের মাসুল বাড়ানো যাবে না। মুখ্যমন্ত্রীর সম্মতি না-পাওয়ায় পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন কোম্পানি গোড়ার দিকে মাসুল বাড়াতে পারেনি, যার জেরে সংস্থা প্রবল আর্থিক সঙ্কটেও পড়ে গিয়েছিল। পরে অবশ্য মাসুলবৃদ্ধির প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়া হয়। মুখ্যমন্ত্রী এ দিন বলেন, “কয়লা, ডিজেল, রেলের মাসুল-সহ সব জিনিসের দাম বাড়ছে। সেই সময়ে আমরা দাম কমাচ্ছি! এটাই মা-মাটি-মানুষের সরকার! এটা কি বড় কৃতিত্ব নয়!”
মমতার বক্তব্য: মাসুল হ্রাসের ব্যাপারে খুঁটিনাটি স্থির করবে সংশ্লিষ্ট নিয়ন্ত্রক কমিটি। তার আগে তিনি এ দিন শুধু মূল বিষয়টা জানিয়ে রাখলেন। যা শুনে বিদ্যুৎ-শিল্পমহলের একাংশ মনে করছে, লোকসভা নির্বাচনের আগে আমজনতার পকেট কিছুটা বাঁচিয়ে সরকার হয়তো সাধারণ মানুষের মন পেতে চাইছে। কিন্তু এতে যে সরকারি বিদ্যুৎ সংস্থাগুলিতে আর্থিক সঙ্কট দেখা দিতে পারে, সে আশঙ্কাও উড়িয়ে দিচ্ছে না সংশ্লিষ্ট মহলের একাংশ। প্রশাসনের খবর: বিদ্যুৎ মাসুল কমানোর বিষয়টি খতিয়ে দেখতে রাজ্য সরকার একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করেছে। কত পয়সা মাসুল কমানো যেতে পারে, সে সম্পর্কে এখনও চূড়ান্ত কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি।
রাজ্যপালের ভাষণের উপরে বিতর্কের শেষে এ দিন জবাবি বক্তৃতায় মুখ্যমন্ত্রী জানান, ২০১৩-১৪ অর্থবর্ষে বিদ্যুতের উৎপাদন ব্যয় কমিয়ে ও বিদ্যুৎ দফতরে ব্যয়সঙ্কোচ করে দেড় হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছে (বিদ্যুৎ-কর্তারা অবশ্য জানাচ্ছেন, ওই টাকা কার্যত সাশ্রয় হবে আগামী অর্থবর্ষে গিয়ে, অর্থাৎ ২০১৪-১৫য়)। বিদ্যুৎ দফতরকে অভিনন্দন জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য, “এই কাজের সুফল সাধারণ মানুষ পাবেন। শিল্পের জন্য যাঁরা বিদ্যুৎ সংযোগ চাইবেন এবং সাধারণ গ্রাহক এই দুইয়ের মধ্যে ভারসাম্য রেখে রাজ্য সরকার মানুষকে কিছু সুবিধা দেবে।” কেন এই পদক্ষেপ? ব্যাখ্যা দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “রাজ্যে এখন বিদ্যুৎ সঙ্কট নেই। আমরা বিদ্যুৎ ব্যাঙ্ক করে বাইরে বিদ্যুৎ দেওয়ার জায়গায় আছি। কেউ অন্তর্ঘাত করলে একটু লোডশেডিং হয়। কিন্তু সেটা সাময়িক ত্রুটি, সঙ্কট নয়।” একই সঙ্গে তাঁর ঘোষণা, “২০১৩-১৪ অর্থবর্ষে যা ছিল, ২০১৪-১৫ য় গড় বিদ্যুৎ-মাসুল তার চেয়ে কম হবে। ইউনিট প্রতি পাঁচ, সাত বা দশ পয়সা কমবে। একটা কমিটি আছে, তারাই বাকিটা বলবে।”
রাজ্য বিদ্যুৎ দফতরেরও দাবি: খরচ কমিয়ে ১৪০০-১৫০০ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে। কিন্তু খরচ কমবে কী ভাবে? কর্তাদের একাংশের ব্যাখ্যা, রাজ্যের বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলোয় দামি বিদেশি কয়লার ব্যবহারে রাশ টানার সিদ্ধান্ত এ ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা নিয়েছে। রাজ্য বিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগমের সিদ্ধান্ত, আগামী অর্থবর্ষে এক টন কয়লাও বিদেশ থেকে আমদানি করা হবে না। পরিবর্তে কোল ইন্ডিয়ার সস্তা কয়লা ব্যবহার হবে অনেক বেশি। কমানো হবে ডিজেলের খরচও।
আর এই পথে কয়েকশো কোটি টাকা বাঁচানো যাবে বলে রাজ্যের বিদ্যুৎ-কর্তাদের অনেকের দাবি। “পাশাপাশি ঠিক হয়েছে, জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোয় উৎপাদন বাড়ানো হবে। ফলে তাপবিদ্যুতে কয়লা কম লাগবে। এ ভাবেও খরচ নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে। আবার বাজার থেকে দীর্ঘ সময়ের জন্য দামি বিদ্যুৎ কেনা হবে না। যখন দরকার, ঠিক তখনই কেনা হবে” বলছেন এক বিদ্যুৎ-কর্তা।
বিদ্যুৎ দফতরের একাংশ কিন্তু এ হেন পন্থার সঙ্গে সহমত হতে পারছে না। এই মহলের মতে, যে পদ্ধতিতে মাসুল কমানোর কথা ভাবা হচ্ছে, তাতে আখেরে বিদ্যুৎ-শিল্পের ক্ষতিই হবে। বস্তুত মাসুল হ্রাসের নীতি নিয়ে চললে রাজ্যের বিদ্যুৎ পরিস্থিতি খারাপের দিকে যেতে পারে বলে এঁদের আশঙ্কা। এক কর্তার কথায়, “খরচ কমানোর উদ্যোগ ভাল। তাতে সরকারি বিদ্যুৎ সংস্থাগুলোর নগদ পুঁজির সংস্থান বাড়বে। কিন্তু মাসুল কমানোর সিদ্ধান্ত ঠিক নয়। কারণ, রাজ্যকে বিদ্যুৎ-পরিষেবা যারা দিয়ে থাকে, সেই বণ্টন সংস্থার আর্থিক অবস্থা এখন মোটেই ভাল নয়।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.