আরও বেশি মানুষের জন্য কাজের সুযোগ তৈরি করতে চায় পশ্চিমবঙ্গ সরকার। বস্তুত এ বারের রাজ্য বাজেটে সর্বাধিক গুরুত্ব পেয়েছে কর্মসংস্থানের প্রশ্নটিই।
গত বারের বাজেটে রাজ্যে নতুন কর্মসংস্থানের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১৩ লক্ষ ১৪ হাজার। লক্ষ্যমাত্রা ছাপিয়ে বাড়তি ৮ হাজারের জন্য কাজের ব্যবস্থা করা গিয়েছে বলে দাবি করেছেন অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র। সোমবার বিধানসভায় ২০১৪-১৫ অর্থবর্ষের বাজেট-বক্তৃতায় তিনি বলেন, “এ বারের বাজেটেও আমরা কর্মসংস্থানে বিশেষ জোর দিচ্ছি, এবং যুবক-যুবতীদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টিকেই সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছি। এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে আগামী অর্থবর্ষে ১৬ লক্ষেরও বেশি নতুন কর্মসংস্থানের পরিকল্পনা করেছি।”
১৬ লক্ষ মানুষকে কাজ দেওয়া যাবে কী ভাবে, বাজেট-বক্তৃতায় তার একটা দিশাও দেওয়ার চেষ্টা করেছেন অর্থমন্ত্রী। কী রকম?
রাজ্যে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সংখ্যা এখন ৬ লক্ষ ৮৮ হাজার। অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন, চলতি অর্থবর্ষে এ পর্যন্ত ১ লক্ষ ২ হাজার স্বনির্ভর গোষ্ঠী গঠিত হয়েছে। স্বামী বিবেকানন্দ স্বনির্ভর কর্মসংস্থান প্রকল্পে ২০১১-র মে থেকে ২০১৪-র জানুয়ারি ইস্তক মোট ৭৫ হাজার ৭৫ জনকে ভর্তুকি দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটির মাধ্যমে এ পর্যন্ত ২ লক্ষ ২৩ হাজার ৩৬৩টি কাজের সুযোগ সৃষ্টি করা গিয়েছে বলে অর্থমন্ত্রীর দাবি। উপরন্তু পুরুলিয়া জেলায় ‘মুক্তিধারা’ নামে একটি নতুন প্রকল্প হয়েছে, যা ভবিষ্যতে অন্যান্য জেলায় চালু করা হবে। সরকারের আশা, তাতেও বহু কর্মসংস্থান হবে।
পাশাপাশি স্বনির্ভর গোষ্ঠী, গ্রামীণ কারিগর ও ক্ষুদ্র-প্রান্তিক ব্যবসায়ীদের উৎপাদিত দ্রব্য বিক্রির জন্য ‘কর্মতীর্থ’ নামে মার্কেট কমপ্লেক্স তৈরির প্রস্তাব বাজেটে রেখেছেন অর্থমন্ত্রী। তাঁর প্রস্তাব, পাঁচশো কোটি টাকায় আপাতত পাঁচশোটি ‘কর্মতীর্থ’ গড়ে তার মারফত ১ লক্ষ পরিবারের কাজের সংস্থান হতে পারে। অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন, সরকার ২০১১-র মে থেকে ১ লক্ষ ৩২ হাজারটি নতুন পদ সৃষ্টি ও পূরণের অনুমোদন দিয়েছে। ৪৩ হাজার ৪৭২ জন প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষক, ৪০০ সাব-ইন্সপেক্টর, ৪০ হাজার কনস্টেবল এবং ১ লক্ষ ৩০ হাজার সিভিক পুলিশ ভলান্টিয়ার্স নিয়োগ করা হয়েছে বলেও অমিতবাবু দাবি করেছেন।
রাজ্যে ক্ষুদ্র ও অতিক্ষুদ্র শিল্প থেকেও কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হচ্ছে বলে সরকারের দাবি। অর্থমন্ত্রী তাঁর বাজেট-বক্তৃতায় জানিয়েছেন, মাঝারি ও ক্ষুদ্রশিল্পে ২০১৩-১৪ অর্থবর্ষের ডিসেম্বর পর্যন্ত ৪ হাজার ৭৯৪টি নতুন ইউনিট স্থাপিত হয়েছে, যাতে ৫০ হাজার ৩৭০ জনের কর্মসংস্থান সম্ভব হয়েছে। আগামী অর্থবর্ষে এ ক্ষেত্রে ১ লক্ষেরও বেশি ছেলেমেয়ের কাজের সুযোগ সৃষ্টি হবে বলে অমিতবাবুর দাবি। শিল্প দফতরের উদ্যোগে তৈরি নতুন দেড়শো ইউনিটে চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত ১ লক্ষ ২৯ হাজার ৩৬৪ জনের চাকরি হয়েছে বলে অর্থমন্ত্রী দাবি করেছেন।
এ ছাড়া অমিতবাবু মনে করছেন, রাজ্যের তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাগুলি যে ভাবে তাদের কাজের পরিধি বাড়াচ্ছে, তাতে আগামী অর্থবর্ষে অতিরিক্ত ১ লক্ষ কর্মসংস্থান হবে। একই সঙ্গে রাজ্যের পর্যটনশিল্পেও কাজের সুযোগ বাড়বে বলে তিনি আশাবাদী। অর্থমন্ত্রী বক্তৃতায় বলেছেন, প্রধান সড়কগুলির পাশে পর্যটকদের সুবিধার্থে নানা ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ৭০টি মোটেল নির্মাণ করা হচ্ছে। ঝড়খালি, গাজোলডোবা, ঝাড়গ্রাম-সহ নানা জায়গায় পর্যটন কেন্দ্র গড়ে উঠছে। একই সঙ্গে জোর দেওয়া হচ্ছে গ্রামীণ পর্যটন, চা পর্যটন, পরিবেশ পর্যটনে। অর্থমন্ত্রীর দাবি: পশ্চিমবঙ্গে পর্যটকের সংখ্যা ১৬% বেড়েছে। আগামী দিনে সংখ্যাটি বহুগুণ বাড়বে, এবং তার ফলে অনেক কাজের সুযোগ তৈরি হবে বলে অথর্মন্ত্রীর দাবি। মাদার ডেয়ারির ব্যবসা ঘুরে দাঁড়িয়েছে এই দাবি করে অর্থমন্ত্রীর বক্তব্য, ওই সংস্থাটিতেও আগামী দিনে বহু বেকার যুবক-যুবতী কাজ পাবেন।
পরিবহণের ক্ষেত্রে গতিধারা নামে এক নতুন প্রকল্প চালুর প্রস্তাবও বাজেটে রেখেছেন অর্থমন্ত্রী। জানিয়েছেন, প্রকল্পটিতে বেকারদের গাড়ি কেনার জন্য ১ লক্ষ টাকা অনুদান দেবে সরকার। এ বাবদ বাজেটে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দও করেছেন তিনি। তাঁর হিসেবে, আগামী বছরে প্রকল্পটিতে ৫০ হাজার কর্মসংস্থান হবে। তাঁর দাবি, ইতিমধ্যে কলকাতায় আট হাজার ‘নো-রিফিউজাল’ ট্যাক্সি চালু হওয়ায় আট হাজার কর্মসংস্থান হয়েছে। সরকারি বাসে চালক-কন্ডাক্টর ও মেকানিকের পদেও ৩ হাজার ৭১৭টি চাকরির সুযোগ হয়েছে।
কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য মাইনরিটি ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড ফিনান্স কর্পোরেশনের উপরেও ভরসা রেখেছেন অর্থমন্ত্রী। তিনি জানান, নিগমটির সঙ্গে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ প্রচেষ্টায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ৬১ হাজার ৯১৮ জনের পেশাগত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা হয়েছে। ওঁদের অনেকে চাকরি পেয়েছেন বলে তাঁর দাবি। তিনি জানান, কর্পোরেশনের বিভিন্ন ঋণ-প্রকল্পের মাধ্যমেও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের দু’লক্ষাধিক যুবক-যুবতী স্বনির্ভর হতে পেরেছেন। বাজেট-বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রীর আরও দাবি, বেকারদের কর্মসংস্থানের সুযোগ দিতে রাজ্য সরকার ব্যয়বৃদ্ধির হার যথেষ্ট বাড়িয়েছে। এবং আগামী অর্থবর্ষে রাজ্য পরিকল্পনা খাতে ব্যয়বৃদ্ধির হার আরও বাড়বে।
এতে কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়বে বলেই অমিতবাবু মনে করছেন। |