নিজস্ব সংবাদদাতা • জলপাইগুড়ি |
পুলিশের হাতে ধরা পড়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই আলাদা কামতাপুরের দাবি থেকে আপাতত সরে বিনা শর্তে রাজ্যের সঙ্গে আলোচনায় বসার আর্জি জানালেন কামতাপুর লিবারেশন অর্গানাইজেশন (কেএলও)-এর সহ সভাপতি টম অধিকারী ওফে জয়দেব রায়। সোমবার জলপাইগুড়ি আদালত চত্বরে সাংবাদিকদের এ কথা জানান ধৃত কেএলও জঙ্গি। তাঁর বক্তব্য, ‘‘আপাতত আমরা পৃথক কামতাপুরের দাবির বিষয়টি সরিয়ে রাখছি। আমাদের অনুরোধ রাজ্য আলোচনায় ডাকুক। আমাদের দায়িত্ব দিক। কোনও আগাম শর্ত ছাড়াই আমাদের শীর্ষ নেতৃত্ব সেখানে যোগ দেবেন।” তিনি বলেন, “দায়িত্ব দিলে আমরা সংগঠনের সভাপতি জীবন সিংহ তথা তমির দাসকেও ওই আলোচনায় হাজির করানোর ব্যবস্থা করে দিতে রাজি।” তবে রাজ্য পুলিশ-প্রশাসনের তরফে কেউই বিষয়টি নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি। উত্তরবঙ্গের এক পুলিশ কর্তা জানান, বিচারাধীন বন্দিরা কোনও প্রস্তাব দিতে চাইলে তা আদালতের মাধ্যমে দিতে হবে। |
এ দিন, ধৃত টম ও তাঁর সঙ্গী মঞ্চলাল সিংহ ওরফে নীলাম্বর রাজবংশী ওরফে ডাক্তার দু’জনকে হাজির করানো হলে জলপাইগুড়ি আদালতের মুখ্য বিচারবিভাগীয় বিচারক শান্তনু দত্ত তাঁদের ১৪ দিনের জন্য সিআইডি হেফাজতে রাখার আর্জি মঞ্জুর করেন। ধৃতদের দু’জনকেই জলপাইগুড়ির বজরাপাড়া বিস্ফোরণ মামলায় অন্যতম অভিযুক্ত হিসেবে হাজির করানো হয়। ওই মামলার তদন্ত করছে সিআইডি। গত শনিবার তুফানগঞ্জ থেকে ধৃত কেএলও লিঙ্কম্যান সঞ্জিত রায়কেও ১৪ দিনের জন্য সিআইডি হেফাজতে রাখার আর্জি মঞ্জুর করেছে আদালত।
এদিন বেলা ২টা নাগাদ সিআইডি টম অধিকারী ও নীলাম্বর রাজবংশীকে কড়া পাহারায় ছোট গাড়িতে নিয়ে জলপাইগুড়ি জেলা দায়রা আদালতে পৌঁছয়। বেলা দেড়টা থেকে কোর্ট হাজত চত্বর পুলিশ ঘিরে ফেলে। টমের দাবি, “আমরা রাজ্য সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসতে চেয়েছিলাম। ২০১১ সালের ২০ নভেম্বর বেলাকোবার কেবলপাড়ায় ওই দাবিতে সভাও করেছি। কোচবিহার জেলাশাসকের মাধ্যমে মুখ্যসচিব ও স্বরাষ্ট্রসচিবকে চিঠি পাঠানো হয়। কিন্তু রাজ্য সরকার আমাদের আবেদনে গুরুত্ব দেয়নি। তাই বাধ্য হয়ে ফের কেএলও ঘাঁটিতে চলে যাই।” তিনি জানান, জীবন সিংহ একটি প্রতিবেশী দেশে রয়েছেন। তাঁর সঙ্গে যোগাযোগের জন্য আমরা সহযোগিতা করব। আলোচনায় বসলে সমস্ত সমস্যা মিটে যাবে।”
এদিকে, টমের বান্ধবী মেনকা রায় আদালতে গিয়ে কয়েকজন আইনজীবীর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। মেনকা বলেন, “কোথা থেকে, কী ভাবে টমদের ধরা হয়েছে, সেই ব্যাপারে অনেক কিছুই স্পষ্ট নয়। আমরা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কমিশনে যাব।”
গ্রামের এক প্রাথমিক স্কুল শিক্ষক টমের মেজ ভাই শশাঙ্ক রায় তাঁর নিজের বাড়ির দাওয়ায় বসে বলেন, “আগে কেএলও যখন শুরু হয়, তখন পরিস্থিতি অন্যরকম ছিল। এখন উত্তরবঙ্গের জন্য মুখ্যমন্ত্রী আলাদা সচিবালয় করেছেন। রাজবংশী ভাষা অ্যাকাডেমি হয়েছে। পঞ্চানন বর্মা বিশ্ববিদ্যালয় হয়েছে। ভাই ইচ্ছে করলে ভাষা অ্যাকাডেমিতে যুক্ত হতে পারত। আলাদা রাজ্য বা দেশের দাবি আর আজ কেউ মানে না, তা তাদের বোঝা উচিত।” |