নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলে শিক্ষক নিয়োগের জন্য স্কুল সার্ভিস কমিশন বা এসএসসি-র সুপারিশ করার ব্যাপারে জট আপাতত কাটল। এসএসসি মারফত শিক্ষক নিয়োগের সুপারিশ করার উপরে যে-স্থগিতাদেশ ছিল, সোমবার কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি দেবাশিস করগুপ্ত তা শিথিল করে দিয়েছেন। তার ভিত্তিতে শিক্ষক নিয়োগের জন্য ফের সুপারিশ শুরু করতে পারবে কমিশন।
উচ্চ আদালত স্থগিতাদেশ শিথিল করায় কমিশন কিছুটা স্বস্তি পেল ঠিকই। কিন্তু কাঁটা রয়েই গেল। কারণ, কমিশনের সুপারিশ করতে পারলেও সেটা চূড়ান্ত নয়। শর্তাধীন। বিচারপতি জানান, কমিশনের সুপারিশ বা নিয়োগপত্রের উপরে লিখে দিতে হবে, মামলার চূড়ান্ত রায়ের উপরে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকের চাকরির স্থায়িত্ব নির্ভর করছে। চূড়ান্ত রায় কমিশনের বিরুদ্ধে গেলে নিয়োগ বাতিল হয়ে যাবে। সংশ্লিষ্ট শিক্ষক-শিক্ষিকাদের চাকরি খোয়াতে হবে। কমিশনের গত পরীক্ষার ভিত্তিতে ইতিমধ্যে যাঁরা স্কুলে যোগ দিয়েছেন, এই শর্ত প্রযোজ্য হবে তাঁদের উপরেও। ফের শুনানি হবে মাসখানেক বাদে।
বিচারপতি করগুপ্ত গত বছর একটি রায়ে জানান, এসএসসি-কে বিএড ডিগ্রিধারী এবং বিএড ডিগ্রিহীনদের জন্য দু’টি পৃথক তালিকা প্রকাশ করতে হবে। বিএড ডিগ্রিধারীদের নিয়োগ করার পরেই প্রশিক্ষণহীনদের নিয়োগপত্র দেওয়া যাবে। কিন্তু কমিশন একটিই (কম্পোজিট) তালিকা প্রকাশ করে। তাতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত, প্রশিক্ষণহীন, সংরক্ষিত শ্রেণি বা অসংরক্ষিত শ্রেণির প্রার্থীদের নাম আলাদা ভাবে উল্লেখ করা হয়নি। এই নিয়ে হাইকোর্টে মামলা হয়। সেই মামলার শুনানির পরে ১৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত স্থগিতাদেশ জারি করেছিলেন বিচারপতি।
১৪ তারিখে ফের শুনানি শুরু হলে অ্যাডভোকেট জেনারেল (এজি) বিমল চট্টোপাধ্যায় হাইকোর্টে একটি রিপোর্ট দিয়ে দেখান, আদালতের নির্দেশ মেনে বিএড ডিগ্রিধারীদের জন্য একটি এবং বিএড ডিগ্রিহীন প্রার্থীদের জন্য আলাদা তালিকা প্রকাশ করেছে এসএসসি। কিন্তু ওই মামলার আইনজীবী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের অভিযোগ, কমিশন প্রথমে একটি তালিকা প্রকাশ করেছিল। পরে আদালতকে বিভ্রান্ত করার জন্য তা বদলে দেয়। এ দিনের শুনানিতে তিনি দেখান, প্রথম তালিকায় সফল প্রার্থীদের নামের সঙ্গে তাঁদের শিক্ষাগত যোগ্যতার উল্লেখ ছিল না। পরের তালিকায় তা জুড়ে দেওয়া হয়। কমিশনের তরফে সহ-সচিব অমিতেশ বিশ্বাসও ল্যাপটপ নিয়ে এসে প্রমাণ করার চেষ্টা করেন, কোনও তথ্যই বদলানো হয়নি।
বিচারপতি জানান, তালিকায় কর্তৃপক্ষের সই ছিল না। কম্পোজিট তালিকায় প্রার্থীদের নামের সঙ্গে শিক্ষাগত যোগ্যতাও দেখানো হয়নি। লগ রিপোর্টের সব তথ্য দেখাতে পারেনি এসএসসি। তিন সপ্তাহের মধ্যে এসএসসি-কে হলফনামা দিয়ে এই সব তথ্য এবং লগ রিপোর্ট জমা দিতে হবে। আপাতত স্থগিতাদেশ আপাতত তুলে নেওয়া হল। চার সপ্তাহ পরে ফের শুনানি হবে।
কমিশনের চেয়ারম্যান সুবীরেশ ভট্টাচার্য এ দিন বলেন, “আপাতত স্থগিতাদেশ উঠে গিয়েছে। তৃতীয় কাউন্সেলিংয়ের পরে যে-সব সুপারিশ করা হয়েছিল, সেগুলি ছাড়ার পাশাপাশি এ বার আমরা চতুর্থ কাউন্সেলিংয়ের প্রস্তুতিও শুরু করব।”
অনেক প্রার্থীর অভিযোগ, চূড়ান্ত তালিকায় তাঁদের পিছনে থাকা প্রার্থীরা চাকরি পেয়ে গেলেও তাঁরা কাউন্সেলিংয়ে ডাক পর্যন্ত পাচ্ছেন না। এই অভিযোগে অনেকে কমিশনের সদর দফতরে অনশনে বসেছেন। নিয়োগ নিয়ে যে-সব অভিযোগ উঠছে, তার প্রতিবাদে মাধ্যমিক শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সংগঠনের এক দল প্রতিনিধিও এ দিন কমিশনের দফতরের সামনে বিক্ষোভ দেখান। |